সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চোখ কান মন দেখে তিনজন

চোখ কান মন দেখে তিনজন - আলী হোসেন

এই বিষয়ে লেখকের একটি জনপ্রিয় ছড়া পড়ুন এখানে

সাধারণ ভাবে আমরা যা দেখি তা সবসময় ঠিক হয়না। যেমন ধরুন, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে - সাদা চোখে এটাই আমরা দেখি। অথচ আসল সত্য ঠিক এর উল্টো।

তেমনি আমাদের চোখ কয়টা - এ প্রশ্ন করলে সবাই সবিস্ময়ে উত্তর দেবে, কেন, দুটো! কিন্তু আসলে কি তাই? সাধারণ ভাবে দেখলে এটাই সত্যি বলে মনে হয়।

আসলে আমাদের চোখ হলো তিনটি। কিভাবে? আচ্ছা, আপনি শিবের ত্রিনয়নের কথা শুনেছেন? শিবের কপালের দিকে তাকালে দেখবেন, তার কপালের ঠিক মাঝখানে একটি চোখ আঁকা আছে। ওটাই তার তৃতীয় নয়ন।

কেউ কেউ হয়তো ভাবতে বসেছেন, এবার আমি হিন্দু ধর্মের কীর্তন করতে বসেছি। যারা আমাকে নিয়মিত পড়েন, তারা জানেন কোনো ধর্মের কীর্তন করা আমার কাজ না। ওসব করার জন্য পৃথিবীতে মানুষের অভাব নেই। এখন তো এদের বাড়বাড়ন্ত-এর সময় চলছে।  আমি বাড়বাড়ন্ত-এর দলে নই, বাড়ন্তের দলে।

ভনিতা থাক। আসুন আসল কথায় আসি। আসলে আমাদের চোখ দুটোই। কিন্তু এই দুটো চোখ দিয়ে আমরা সব কিছু দেখতে পাই না। বিষয়টি আমি দুভাগে ভাগ করে বলতে চাই।

এক।

ধরুন, আপনি ক্লাসে আছেন। শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। কিছু বোঝাচ্ছেন। আপনি চোখদুটো শিক্ষকের দিকে বা বোর্ডের দিকে রেখেছেন। চোখ ঘোরাচ্ছেন না। কিন্তু পরে শিক্ষক যখন প্রশ্ন করছেন বা কোন বোর্ডওয়ার্ক করতে বলছেন, তখন দেখলেন আপনি অনেক কিছুই বলতে পারলেন না। কিন্তু কেন এমন হল?

আসলে এখানে চোখের সাথে সাথে কান ও মনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। চোখকে আপনি ঠিক জায়গায় রেখেছেন। কিন্তু কান আর মনের অংশগ্রহণ এখানে একশ শতাংশ ছিলোনা। কারণ,
চোখ-কান-মন দেখে তিনজন - এই অলঙ্ঘনীয় শর্ত আপনি মানেননি। চোখ যা সংগ্রহ করে তার সাথে কানের সংগৃহীত তথ্যের সমন্বয় ঘটায় মন। এই সমন্বয়ের মাধ্যমে মন বিষয়টি বোঝার কাজ সম্পূর্ণ করে।

তাই, এই তিনটি অঙ্গের যেকোন একটির সামান্যতম অনুপস্থিতি আপনার দেখা, শোনা কিম্বা বোঝার কাজকে অসম্পূর্ণ করে দেবে। এক্ষেত্রে চোখের সাথে অন্য ইন্দ্রিয়গুলির ( কান ও মনের) সংযোগ ঘটেনি। তাই দেখার কাজটাও ঠিকঠাক হয়নি।

এবার ধরুন, আপনি কান আর মন একশ শতাংশ রেখেছেন বিষয়ের ওপর। কিন্তু তাহলেও হবে না। তার কারণ কী?

এক্ষেত্রে খেয়াল করলে ধরা পড়বে আপনার চোখ একশ শতাংশ ওই বিষয়ের প্রতি নিবিষ্ট ছিল না। আপনি ভেবেছেন শিক্ষকের কথাগুলো কান ও মন দিয়ে শুনলেই হবে। কারণ তিনি এখন বোর্ড ওয়ার্ক করছেন না, যা না দেখলেই নয়। তাই কোনো না কোনও সময় আপনি জানলার বাইরে তাকিয়ে ছিলেন অথবা সহপাঠীদের দিকে তাকিয়েছেন মাঝে মাঝেই। আর এখানেই হয়েছে ভুলটা।

প্রথমত: আপনি যখনই চোখকে বিষয়ের থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন অন্য কোন বিষয়ের দিকে, তখনই আপনার কান আর মনও তার সাথে সাথে সরে যাচ্ছে অন্য বিষয়ের ওপর। শিক্ষকের পড়ানোর বিষয় থেকে এভাবে চোখের সাথে সাথে মনটাও আংশিক অন্য বিষয়ে চলে যাওয়ায় চোখ, কান ও মনের সমন্বয়ের কাজ ঠিকঠাক করতে পারেনি। ফলে, শোনা ও বোঝার কাজটি আংশিকভাবে শেষ হয়েছে। ফলে আপনার শুধু দেখা নয়, শোনা ও বোঝার বিষয়টিরও বারোটা বেজে গেলো। 


নিট ফল হল 'চোখ-কান-মন দেখে তিনজন' এই শর্ত আপনি মানলেন নি।


দ্বিতীয়ত: শিক্ষক যখন বলেন, খেয়াল করে দেখবেন তিনি স্ট্যাচুর মত বা রোবটের মত স্থির হয়ে মুখ নাড়ান না। বক্তব্য প্রকাশের জন্য তিনি তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকেও ব্যবহার করেন। কারণ, সব কিছু ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাই মানুষ বডি ল্যাংগুয়েজ বা শরীরী ভাষা ব্যবহার করেন। আপনি যখন জানালার ফাঁক গলে বাইরের কোন কিছুর আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন তখন এই বডি ল্যাংগুয়েজ আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে। আর এই ভাষা কান পড়তে পারেনা। পারে একমাত্র চোখ। সুতরাং যা হওয়ার তাই হয়েছে। শোনার কাজটা ঠিকঠাক হয়নি। কারণ, কানের সাথে চোখের সংগৃহীত তথ্যের সমন্বয় ঘটতে পারেনি। ফলে মনও তার কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেনি। ফলে বোঝার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।

 তাই মনে রাখতে হবে --
'চোখ-কান-মন বোঝে তিনজন'।


আরার দেখবেন আপনার চোখ ও কান আপনি ঠিকঠাক দিয়েছেন বিষয়ের দিকে। তবুও আপনার বিষয় উপলব্ধিতে ঘাটতি থেকে গেছে। এক্ষেত্রে যে মনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আর আমরা এবিষয়ে সকলে কমবেশি ওয়াকিবহাল। সে কারণেই আমরা সামেশাই ব্যবহার করি 'মন দিয়ে দেখা' 'মন দিয়ে শোনা' ইত্যাদি শব্দবন্ধ।

খেয়াল করলে দেখবেন শুধুমাত্র মনদিয়ে কোনকিছু বোঝা সম্ভব নয়। কারণ, মন বস্তু বা বিষয় নির্ভর একটি মানসিক প্রক্রিয়া। চোখ ও কান এই বিষয়ের সঙ্গে মনের সংযোগ ঘটাতে সাহায্য করে। তাই এই দুই অঙ্গের সাহায্য ছাড়া কোন কিছু বোঝা 'সোনার পাথর বাটি'র মত অবাস্তব।
তাই এভাবে ভাবনাকে এগোনো যায় বলে আমার উপলব্ধি :

চোখ-কান-মন দেখে তিনজন
চোখ-কান-মন শোনে তিনজন।
চোখ-কান-মন বোঝে তিনজন।

এই তিনটির সহযোগে আমাদের তৃতীয় নয়ন তৈরি হয়। আর সেটারই অবস্থান শিবের কপালের যেখানও চোখ আঁকা থাকে আমি বলি সেখানেই। কেন তা জানতে চোখ রাখতে হবে আমার আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে।

দুই :
আসুন এবার সেটাই শুরু করি।

লেখা চলছে _ _ _ _✍️✍️


লেখাটি ছড়ার আকারে দেখুন এখানে ক্লিক করে 

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন