ধর্ম কী
What is religion?
মানুষের ধর্ম হলো মানুষের ভালো করা। ভালোর জন্য কাজ করা। মানুষের জন্য এর বাইরে কোন ধর্ম নেই।আমরা সাধারণ মানুষ যাকে ধর্ম বলি তা কি সত্যিই ধর্ম?এর সোজাসুজি উত্তর, না। হিন্দু, ইসলাম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন .... এগুলো তাহলে কী?
এগুলো আসলে এক একটা প্রতিষ্ঠান মাত্র। এদের কাজ মানুষের প্রকৃত ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা। কেন মানুষ এই ধর্ম পালন করবে, না করলে কীভাবে তা মানুষের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে ইত্যাদির ব্যাখ্যা করা। অর্থাৎ মানুষের ভালোর জন্য কাজ করে যাবার কথা প্রচার করাই এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ। এর বাইরে কিছুই নয়।
আপনি যদি মানুষের ভালোর জন্য কাজ করে যান, আপনার দ্বারা যদি কোন মানুষের অকল্যাণ সংঘটিত না হয় তাহলে আপনি একজন প্রকৃত ধার্মিক। আর এটা করতে পারলে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা আপনার জন্য আবশ্যিক নয়।
আসলে যুগ যুগ ধরে ধর্ম সম্পর্কে আমাদের কিছু অযৌক্তিক এবং মনগড়া বিধে-বিধান তৈরি করে দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে সেই বিধানগুলো মেনে চলাই হচ্ছে ধর্ম। এই বিধি বিধান গুলো মেনে চললেই আপনার ধর্ম পালন করা হবে এবং ধর্ম পালন হলে পরম করুণাময় ঈশ্বর আপনার হাজারো অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। কারণ তিনি দয়ালু।
ঠিক এই জায়গাটাই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সীমাবদ্ধতা। প্রকৃত ধর্মের ধারণার মধ্যে ক্ষমার কোনো অপশন নেই। যেমন কাজ করা হবে, ফলাফল সেই অনুযায়ী হবে। তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী ফলাফলে পার্থক্য থাকলেও প্রকৃত ফলাফল চিরন্তন। আপনি আগুনে হাত দেবেন কিন্তু আঙ্গুল পুড়বেনা - এটা হবে না। কারণ আগুনের ধর্ম পোড়ানো। প্রতিরোধে ব্যবস্থা না থাকলে সে তার কাজ করবেই। প্রকৃত ধর্ম তাই কোন ক্ষমার অপশন রাখে না। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম মানুষকে বারবার ক্ষমার কথা বলে মানুষকে অন্যায় করার প্রবণতাকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করে। তাই এটা কখনো ধর্ম হতে পারে না।
মানুষের ধর্ম মানুষের ভালো করা। অর্থাৎ ভালোর জন্য কাজ করা। করলে সুফল মিলবে। না করলে কুফল ভুগতে হবে। প্রশ্ন হতে পারে প্রকৃত ধর্মের সঙ্গে ক্ষমা চাওয়ার বা পাওয়ার কি কোন সম্পর্ক নেই? নিশ্চয়ই আছে। এই ক্ষমা চাওয়ার অর্থ হচ্ছে একটা প্রতিজ্ঞা করা। এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করা যে, আমি আর কখনোই মানুষের অকল্যাণ করব না। আপনি যদি কোন ঐশ্বরিক শক্তিতে বিশ্বাস করেন এবং ভাবেন যে তার কাছেই একমাত্র ক্ষমা চাওয়া যায় বা ক্ষমা চাওয়া উচিত তাহলেও এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা। কারণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যদি কেউ সৃষ্টিকর্তা থাকেন তবে তিনি কখনোই চাইবেন না তার এক সৃষ্টি আরেক সৃষ্টির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। আপনি যদি প্রতিজ্ঞা করেন যে আর কখনো আপনার দ্বারা কোন মানুষের অনিষ্ট হবে না তাহলে আপনি সেই ঐশ্বরিক শক্তির কাছেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন যে আপনি ক্ষমাপ্রার্থী। এর জন্য কোন বিশেষ কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই। কারণ অর্থ ব্যয় করে কোন আনুষ্ঠানিকতা দেখানোর মধ্য দিয়ে যে ক্ষমা আসে বলে আমরা বিশ্বাস করি তা আসলে অর্থহীন। অর্থ দিয়ে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া গেলে অর্থবানরা কখনোই কোন অন্যায় কাজ থেকে বিরত হবে না। আমরা প্রতিনিয়ত তার প্রমাণ পাই। অর্থবানরা অর্থ দিয়ে উপাসনালয় বানিয়ে নিজেকে পাপ মুক্ত করার চেষ্টা করে। সেখানে অর্থ দান করে নিজের অপকর্মের
অজ্ঞান মানুষের কাছে এটাও এক ধরনের শাস্তি। এই শাস্তি ইতিবাচক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন