ধর্ম সম্পর্কে আলী হোসেনের মন্তব্য
ধর্মের ভিত্তি হল বিশ্বাস। তাই যে যেভাবে বিশ্বাস করে, ধর্ম তার কাছে সেভাবেই আত্মপ্রকাশ করে। আর সেটাই হায়ে ওঠে তার ধর্ম।
মূলত এ কারণেই বিশ্বজুড়ে নানান ধর্মমতের উদ্ভব হয়েছে। ধর্ম যদি কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠত, তবে বিশ্বজুড়ে একটি ধর্মই বিকাশ লাভ করত। এবং তা হত মানব ধর্ম।
প্রকৃতি জগতে আমরা যা কিছু ঘটতে দেখি তা ঘটে নির্দিষ্ট নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ থেকে। এই নিয়ম আসলে কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া লক্ষ লক্ষ প্রাকৃতিক নিয়ম। যে ঘটনা যে নিয়মের শৃঙ্খলে বাঁধা আছে তার উপস্থিতিই সেই ঘটনাকে সম্ভব করে তোলে। তার কোন ব্যত্যয় ঘটতে দেখি না।
আমরা কখনও কখনও কিছু বিষয়কে ব্যতিক্রম হিসাবে চিহ্নিত করে থাকি। কারণ, প্রচলিত নিয়মের বন্ধনে বেঁধে তাকে ব্যাখ্যা করা যায় না। আসলে, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এই ব্যতিক্রমটিও আসলে একধরণের নিয়মের আগলে বাঁধা আছে। অর্থাৎ ব্যতিক্রমটাও একটি অপ্রচলিত নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
সুতরাং নিয়মের বাইরে গিয়ে জগতে কিছু ঘটে না। আর লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যা নিয়মের বা কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় তা ব্যক্তি নিরপেক্ষ। কোন ব্যক্তি মানুষের ভাবনা বা বিশ্বাস দ্বারা তা নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হয় না।
উদাহরণ হিসাবে যদি দেখি, জলকে আমরা যে নামেই ডাকি না কেন, বা তার সম্পর্কে আমার যে বিশ্বাসই থাক না কেন, তার ধর্মের কোন পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ আমি যতই বিশ্বাস করি না কেন যে আগুনে জল দিলে তার জ্বলে ওঠার ক্ষমতা বেড়ে যাবে, আদতে তা কখনই হবে না। উল্টে সে নিভে যাবে। কারণ, জলের সঙ্গে আগুনের যে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার ধর্ম, তা কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। এবং এই সম্পর্কের বাঁধনে তারা উভয়েই বাঁধা আছে। তাই তার কোন ব্যতিক্রম হবে না।
ধর্মের সংগে মানুষের যে সম্পর্ক তা এমন কোন নির্দিষ্ট নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ নেই। বিশ্বাসই তার একমাত্র ভিত্তি। এবং বিশ্বাসটা অনেকটাই জলের আকারের মত। জল যেমন যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার নেয়, বিশ্বাসটাও অনেকটা তেমনই। যার মনের আকার যেমন হয় তার বিশ্বাসটাও তেমন আকার নেয়। তাই সে যেমন ভাবে বিশ্বাস করে তার কাছে ধর্ম তেমন আকার নেয়।
অর্থাৎ একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় :
ধর্মের ভিত্তি হল বিশ্বাস। তাই যে যেভাবে বিশ্বাস করে, ধর্ম তার কাছে সেভাবেই আত্মপ্রকাশ করে। আর সেটাই হায়ে ওঠে তার ধর্ম।
আর এ কারণেই পৃথিবীর কোন ধর্মই এক চেহারায় নেই। প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন চেহারায়, বলা ভালো, ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন