সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মানুষের প্রতিভা ও মূল্যবোধের সম্পর্ক : কিছু কথা

প্রতিভা। বিশেষ্য পদ। পদটি (শব্দটি) স্বভাবজাত ও অসামান্য বুদ্ধি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন কবিপ্রতিভা, বৈজ্ঞানিক প্রতিভা ইত্যাদি। এছাড়া  প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, উদ্ভাবনী বুদ্ধি, সৃজনশীল প্রজ্ঞা, প্রভা বা দীপ্তি অর্থেও এর ব্যবহার রয়েছে। আসলে সকল সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসই প্রতিভা বলে চিহ্নিত হয়।

অন্যদিকে মূল্যবোধ শব্দের মধ্যে দুটো কথা আছে। মূল্য আর বোধ। কিসের মূল্য? মানুষের অর্থাৎ জীবনের মূল্য। এখানে উল্লেখ্য, জীবন বা মানুষ খুব মূল্যবান সম্পদ। শুধু মূল্যবান নয়, সব সম্পদের সেরা সম্পদ  হল মানব সম্পদ। কারণ, মনুষ্য সম্পদ ছাড়া অন্য কোনো সম্পদই আসলে সম্পদে পরিণত হতে পারে না। তাই মানুষ তথা  মানুষের জীবন খুবই মূল্যবান সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয় অর্থনীতিতে।

বোধ মানে কী? চেতনা। তাহলে দাঁড়াচ্ছে মানুষের মূল্য সম্পর্কে সম্যক চেতনা থাকাই হল মূল্যবোধ।

মানুষের প্রতিভা ও মূল্যবোধ অধিকাংশ সময়ই সমানুপাতিক বা সমান্তরাল হয় না। উল্টে ব্যস্তানুপাতিক বা অসমান্তরাল হতে দেখা যায় আকছারই। কারণ, এই দুটির মধ্যে অনেক সময়ই সহবস্থানিক সম্পর্ক থাকলেও উভয়ের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। প্রতিভা মূলত জন্মগত (সচেতন ভাবেই বংশগত বলছি না)। সেটা নিয়েই (কম কিমবা বেশি) সে জন্মায়। অনুশীলনের কল্যাণে এবং পৃষ্ঠপোষকতার সহযোগে তা কখনও কখনও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।

অন্যদিকে, মূল্যবোধ প্রায় সম্পূর্ণ ভাবেই অর্জিত অর্জন। একমাত্র জগৎ ও জীবন নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়নের মধ্য দিয়েই তা আয়ত্ব করা সম্ভব। আসলে তা অর্জন করতে হয়। নিয়ে জন্মানো যায় না।

অনেক সময় আমরা মূল্যবোধকে জন্মগত বা বংশগত বলে ভুল করে থাকি। কারণ, উচ্চ মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের ঘরে মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রায়শই দেখে অভ্যস্ত আমরা। আসলে, এখানে একটা ভ্রম কাজ করে আমাদের চিন্তায়। পিতামাতার থেকে যে মূল্যবোধের পাঠ সন্তান পায়, তাও যে আসলে তার অর্জিত অর্জনই। একথা আমাদের অনেকক্ষেত্রেই চেতনার অগোচরে থেকে যায়। বাইরের পরিবেশের মত পারিবারিক পরিবেশও মানুষের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। তাই পারিবারিক পরিবেশে এক সঙ্গে থাকতে থাকতে অনেককিছুই সে অর্জন করে পিতা মাতা বা পরিবারের অন্যকোন সদস্যের কাছ থেকে। আমরা প্রচুর উদাহরণ পাই যেখানে এর উল্টো ঘটনাও ঘটে। সুতরাং মূল্যবোধ তা পারিবারিক সূত্রে পেলেও তা আসলে অর্জিত অর্জনই।

তাই একজন শিল্পী তাঁর শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য পেলেও মূল্যবোধের মাপকাঠিতে অনেক সময়ই ডাহা ফেল করে যান। কারণ, তা তিনি তার প্রতিভার মত জন্মসূত্রেও পাননি, পারিবারিক সূত্রে অর্জন করেন নি, আবার জগৎ ও জীবন সম্পর্কে গভীর অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ মারফৎ অর্জনও করেন নি। আজকের শিল্পকলাসহ সুকুমারবৃত্তির অঙ্গনে যাঁরা বিচরণ করছেন, তাঁদের অনেকের ই দিকে তাকালে একথা জলের মত পরিষ্কার হয়ে যায়।

মানুষের মৃত্যু, অপরিসীম দারিদ্র, মানুষের সঙ্গে মানুষের জাতিগত, বর্ণগত ও লিংগগত বৈষম্য যখন একজন মানুষকে যন্ত্রনা দেয়, তার কারণ খোঁজা ও উপশমের উপায় বের করার জন্য তাঁর চেতনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়, তখনই তার মধ্যে মূল্যবোধের উপস্থিতির লক্ষণ ফুটে ওঠে।

যদি এই চাঞ্চল্য কেউ অনুভব না করেন, অসহায় মানুষের জীবন-যন্ত্রনা তাদেরকে যন্ত্রণা না দেয়, তখন বুঝতে হবে, প্রতিভার ভারে (শঙ্কর প্রজাতির উচ্চফলনশীল উদ্ভিদের  মত) তিনি নুয়ে পড়েছেন ঠিক, যা তাঁর জন্মগত (কিন্তু সে খাদ্যগুণ বা ভেষজ-গুনে বড়োই দুর্বল হয়ে পড়েছে) কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ যা কেবলমাত্র মানুষের মধ্যেই একমাত্র জন্মানো সম্ভব, তা তাঁর মধ্যে হয় নেই, না হয় খুবই দুর্বল।

এই দুর্বল মূল্যবোধ নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে যাঁরা যায় বা চায়, তারা আসলে মুখোশ পরা ভন্ড জীব।অথবা এক শ্রেণির যৎসামান্য ও দুর্বল চেতনার মানুষ ছাড়া কিছু নয়।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন