ধর্মচর্চার লক্ষ্য কী?
What is the goal of religion?
ধর্মচর্চার মূল লক্ষ্য হল আত্মশুদ্ধি। এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে পারলৌকক জীবনের শাস্তি এড়ানো ও সুখি জীবন প্রাপ্তি। যে জীবনের কাছে লৌকিক জীবন অতি তুচ্ছ। লৌকিক জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য একজন ধার্মিকের কাছে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা ও তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
এই জীবন কার?
তা একজন ব্যাক্তির একান্তই নিজস্ব।
এর জন্য কী করণীয়?
আধ্যাত্মবাদী দর্শন অনুসারে তা হল, একান্তে, নিভৃত-নির্জনে আধ্যাত্ম সাধনা বা ঈশ্বর সাধনা করা। এই ধরণের সাধনাই ধর্ম সাধনা। এই ধরনের সাধনা ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্তরে সীমাবদ্ধ থাকে। কোন ব্যক্তি যে ধর্মে বিশ্বাসী হন, সেই ধর্মের মূল গ্রন্থেই আছে তার জীবন-বিধান। সেই বিধি বিধান মেনে জীবন যাপন করাই হল একজন ধার্মিকের একমাত্র কাজ।
আধুনিক যুগে এই সাধনার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। এর জন্য কোন ধর্মগুরুর স্মরণ নেওয়া বা তার অনুসারী হওয়ারও কোন প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রনেতার পৃষ্ঠপোষকতারও তার প্রয়োজন পড়ে না। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠলেই ধর্ম দর্শনকে বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। ধর্মগ্রন্থ পড়া ছাড়াও আধুনিক শিক্ষার উপর তাই গুরুত্ব দেওয়া জরুরী।
আরও পড়ুন : ধর্ম বুঝতে আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজন কেন?
যদি এই ধারণার বাইরে গিয়ে আপনি ধর্মচর্চা করেন, তবে তা আর ধর্মচর্চা থাকে না, তা হয় রাজনীতিচর্চা। আর ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি যুক্ত হলে, রাজনীতি ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হারিয়ে ফেলে। ফলে রাজনীতির ক্ষেত্র শৃঙ্খলা হারায়। জন্ম দেয় সাম্প্রদায়িকতার, যা এই বিশৃঙ্খলার প্রধান কারিগর। মনে রাখা ভালো, এই সাম্প্রদায়িকতা মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রুদের অন্যতম। কারণ, এই সাম্প্রদায়িক মানসিকতাই উসকে দেয় এক জাতির শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা। আর তা থেকেই জন্ম নেয় সাম্রাজ্যবাদ। ঊনবিংশ শতাব্দী জুড়ে ইউরোপীয়দের মধ্যে গড়ে ওঠা এই জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাই তাদের সাম্রাজ্যবাদে উৎসাহিত করেছিল। তারই সূত্র ধরে সারা পৃথিবীতে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ মাথা তুলেছিল। ফলে ইউরোপের বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী নিদারুণ শোষণ ও অত্যাচারের শিকার হয়েছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এক সময় অহংকার করে বলতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্যাস্ত যায় না।
মজার বিষয় হল, এই সবকিছুর মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করা উচ্চাভিলাষ।
তাই আপনি যদি সত্যিকারের ধার্মিক হতে চান, তবে ধর্মীয় সাধনাকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই হবে। কারণ ধর্মের নামে জাতিবিদ্বেষ কখনোই ধর্ম হতে পারে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন