ধর্মনিরপেক্ষতা কেন এবং কতটা জরুরী
ভারতের মতো বহুজাতিক রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার অপরিহার্য দর্শন হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা আধুনিক রাষ্ট্র দর্শনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। এটাকে বাদ দিলে আপনাকে প্রাচীন যুগে সরে যেতে হবে। যেখানে রাজনীতিকে কন্ট্রোল করার বিষয়ে দুটো পরস্পর বিরোধী শক্তির মধ্যে সীমাহীন সংঘাতের জন্ম দিয়েছিল। গৃহযুদ্ধ যেখানে রাজনীতির অপরিহার্য অঙ্গ ছিল। রাষ্ট্রনেতা আর ধর্ম নেতার মধ্যে এই দ্বন্দ্ব জীবন এবং সম্পদের অবলীলায় ধ্বংস ডেকে এনেছে। মানব সভ্যতা লক্ষ্য লক্ষ্য বছর ধরে স্থবির হয়ে পড়েছিল। উন্নয়ন ছিল অধরা। সাধারণ মানুষের জীবন ছিল দাস ব্যবস্থার মোড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা। আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কি সেখানে ফিরে যেতে চাই। না উন্নত থেকে উন্নততর কোন রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় বেঁচে থাকতে চাই। গড়ে তুলতে চাই একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র ব্যবস্থা যেখানে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে কিন্তু প্রতি হিংসা নয়। যেখানে মানুষ থাকবেন, কিন্তু জাতি হিংসা নয়।
পৃথিবীর উন্নত ও শক্তিশালী বহুজাতিক দেশগুলো এভাবেই শক্তিশালী হয়েছে। যারা একথা ভুলে যাচ্ছেন, তারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বলে দাবি করতে পারেন না। কারণ, আধুনিক শিক্ষার মূল ভিত্তি হল ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ এবং বিজ্ঞানমনস্কতা। এগুলোর একটাকেও যদি আপনি বাদ দেন, তাহলে আপনার শিক্ষাদর্শন আধুনিক বলে দাবি করতে পারবেন না।
এই আধুনিক দর্শনই মানুষকে মানবিক অধিকার দান করেছে। পৃথিবীর বড় একটি অংশ যুদ্ধবিগ্রহ ভুলে গণতান্ত্রিক পথে দেশ পরিচালনা করতে শিখেছে। যারা এটা শিখেছে, তারাই আজ পৃথিবীতে এখন পরিচালকের ভূমিকা রয়েছে। যদি এই শিক্ষা ভুলে যান, অথবা ভুলে যেতে চান, দেশ এগোবে না, শক্তিশালীও হবে না।
একটা দেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে সেদেশের প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ও সেই প্রশাসনের প্রতি জনগণের মধ্যে আস্থার পরিবেশ। তাদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধানের উপযোগী একটি শাসনতন্ত্র গড়ে তোলা।
এখন কোন বহুজাতিক রাষ্ট্রে যদি একটি জাতি অন্য জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে অথবা অন্যের উপর তা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে জাতীয়তাবাদ এর নাম করে তবে তা উগ্রতার জন্ম দেয়। এই উগ্রতা স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে। অন্য জাতির মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয়। এই অনাস্থা পারস্পরিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়।
আমাদের ভাবতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে যে, সংঘাত উন্নয়নের পরিপন্থী। একতাই বল।
যারা বলছেন, এক হো তো সেফ হো, অথবা বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে। তারা ঠিক বলছেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই ন্যারেটিভ তৈরি করছেন, সেটা ভুল। এই কথাটার মধ্যে বহু জাতির একীকরণের বার্তা নেই। আছে একটি জাতিসত্তার আধিপত্যবাদের স্লোগান। তাই এটা একটি বিকৃত স্লোগান। বিকৃত স্লোগান ঐক্য নয়, অনৈক্যের পথ প্রস্তুত করছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন