সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভুতের মুখে রাম নাম

প্রশাসনিক সুবিধা ও উন্নয়নের লক্ষমাত্রা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে জেলা ভেঙে নতুন জেলা তৈরি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেই লক্ষ্যেই পাঞ্জাবে ২৩ তম জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে মালেরকোটলা। জেলাটি মুসলিম প্রধান হওয়ায়, মুখমন্ত্রী অমরিন্দর সিং টুইট করে জানায়, এটা ইদের উপহার।

এতেই যোগী সাহেবের (উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী) ভারতের সংবিধানের ওপর তার 'অগাধ বিশ্বাস' ও  'ধর্মনিরপেক্ষ' আবেগ প্রচন্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনি পাল্টা টুইট করে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন। লিখেছেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কোনো ধরণের বিভাজন ভারতীয় সংবিধানের মতাদর্শের বিরোধী। এটা কংগ্রেসের বিভেদপন্থী নীতির প্রতিফলন।

এখন প্রশ্ন হলো :
১) বাবরি মসজিদ ভাঙা এবং সেখানে মন্দির করা ভারতীয় সংবিধানের কোন ধারা মতে বৈধ ছিল? সেটা কি বিভেদপন্থী নয়? সেটা কি বিশেষ কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে হয় নি?

২) না কি সংখ্যাগুরুর ধর্মবিশ্বাসকে ভিত্তি করলে তাকে বিভাজন বলে না। শুধুমাত্র সংখ্যালঘুদের ধর্মবিশ্বাসকে ভিত্তি করাকেই কেবল বিভাজন বলা হয়? সংবিধানের কোন ধারা ও উপধারা মতে এই ভাবনা বৈধতা পায়, যোগিজি?

৩) এই সৌধটি ভাঙার ফলে কি ভারতীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে থেকে দারিদ্র ও অশিক্ষার অন্ধকার কিংবা আর্থিক অবস্থার কোনো হেরফের হয়েছে? হয় নি তো। তারা যে তিমিরে ছিল, সেখানেই আছে। অপরদিকে সংখ্যালঘু সমাজও এতে কোনো বৈষয়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে কি? তাও তো পড়েনি। উল্টে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার ফলে কিছু অসহায় নিরপরাধ ও দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অথবা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধর্মভেদে ফলাফল সম্পূর্ণ নেগেটিভ বা সম্পূর্ণ পজেটিভ হয় নি। কমবেশি হয়েছে মাত্র।
তাহলে কোন সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা থেকে এই সিদ্ধান্ত করা হয়েছিল? এটা কি বিভাজনের রাজনীতির উদাহরণ নয়?

৪) ইদের উপহার বললে তা কিভাবে বিভাজন হয়? এই উপহারের সুফল কি শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ভোগ করবে?
এই উপহার আসলে সম্প্রীতির উদাহরণ। ইদের মত উৎসবকে সামনে রেখে সার্বজনীন উপহার, যা সবার জন্য খুশি (সুবিধা) বয়ে আনবে।

৫) না কি 'ইদ' শব্দতেই যোগিজির এলার্জি আছে? যদি থাকে, তবে তা ভারতীয় সংবিধানের কোন ধারা মতে বৈধ?

৬) যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয়, যে এটা মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতি ও অগ্রগতির কথা মাথায় রেখেই নতুন জেলা করা হয়েছে, তাতে দেশের কি কোন ক্ষতি হবে? হবে না। কারণ, সেই উন্নয়নটাও তো দেশেরই উন্নয়ন। মুসলমানরা তো দেশের বাইরের কেউ নয়।

৭) এদেশের মুসলিম সমাজের বড় অংশই পিছিয়ে পড়া। কারণ, তাদের অধিকাংশই এদেশের নিম্নবর্ণের ও বর্গের মানুষ। সামাজিক ন্যায় বিচার পাওয়ার বাসনায় ধর্মীয় পরিচয় পাল্টেছেন মাত্র। সুতরাং তারা জন্মসূত্রে এদেশের ভূমিপুত্র। এরা যদি পিছিয়ে থাকে, অশিক্ষার অন্ধকারে থাকে, তা কি দেশের জন্য অমর্যাদাকর নয়? পৃথিবীর মানুষের কাছে যদি এই বার্তা যায় যে, ভারত এমন একটি দেশ যেখানে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠিত, একশ শতাংশ মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত, তা কি আমাদের জন্য গর্বের নয়? ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে আমরা যদি তাদের উন্নয়নে উদ্যোগ না নেই তবে আমার স্বপ্নের ভারত কি কখনও গড়ে ওঠা সম্ভব?

৮) তাহলে কোন যুক্তিতে একটা অঞ্চলের উন্নয়নের চেষ্টায় গঠন করা জেলার বিভাজন প্রক্রিয়াকে ধর্মীয় বিভাজনের রঙ লাগিয়ে তাকে বিভেদপন্থী বলছি?

আসলে, যোগিজির জানা নেই যে, ইদ একটি উৎসব। এটা নামাজ বা রোজার মত কোন অবশ্য পালনীয় ধর্মীয় আচার নয়। আর এই উৎসব সবার জন্য। তাই এই দিনের উপহার (সামর্থ থাকলে) প্রতিবেশী অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতেও পৌঁছায় সমান মর্যাদায়। এটাই রীতি। এটাই ইদ উৎসবের রীতি। আমরা যুক্তিবাদী, সচেতন ও সুশিক্ষিত ভারতবাসীমাত্রই তা বুঝি। আমাদের দুর্ভাগ্য আপনি তা বোঝেন না।

আমরা কিন্তু বুঝি, এই বিভাজনের অভিযোগ তুলে আসলে আপনিই কৌশলে বিভাজনের রাজনীতি করছেন। ধর্মপ্রাণ (ধর্মব্যবসায়ী নয়) ভারতবাসী সেটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন। অপরাধ নেবেন না, আপনার মুখে ভারতীয় সংবিধানের মর্যাদার কথা বলাটা খানিকটা 'ভুতের মুখে রাম নাম' নেওয়ার মত শোনাচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে