Debdip Dutta বাহ! খুব ভালো। খুব ভালো লাগলো সেবা করার কথাটা শুনে।
তা কীভাবে সেবা করছিস? যেভাবেই করিস বাবা, মানুষের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার আর জাতি ও ধর্মীয় বিদ্বেষ যেন না ছড়ায়, সেটা লক্ষ্য রাখিস। কারণ, দেশ সেবা মানে মানুষের সেবা। মানুষকে বাদ দিয়ে দেশ হয় না, তাই দেশসেবাও হয় না। দেশ সেবা মানে মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে বিষিয়ে দেওয়া নয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করা এবং মানুষের পাশে থেকে মানুষের উপকার করার চেষ্টাটাই (আজকের সময়ে) সবচেয়ে বড় দেশ সেবা।
তাই মানুষে মানুষে বিদ্বেষ ছড়ায় এমন কোনো কাজ বা কথা যেন ভুলেও করিস না বা বলিস না। তাহলে ওটা আর দেশ সেবা থাকবে না। মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে আর যাই হোক, দেশ সেবা হয় না। কারণ, মানুষকে নিয়েই দেশ। মানুষ না থাকলে দেশ বলেও আর কিছু থাকে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের সব চেয়ে বড় পরিচয়, তার ধর্ম নয়, তার মনুষত্ব। কারণ, ধর্ম নিয়ে মানুষ জন্মায় না, যা নিয়ে জন্মায় সেটা মনুষত্ব। ওটা না থাকলে, বনের পশুর সঙ্গে মানুষের আর কোন পার্থক্য থাকে না। আর মানুষ না থাকলে, দেশ কথাটাও অলীক বস্তুতে পরিণত হয়। সেজন্যই বন্য প্রাণীদের কাছে দেশ বা দেশপ্রেম বলে কিছু নেই।
একটু খেয়াল করে দেখ, তোকে বলে দেওয়ার আগে কি তুই জানতিস যে তুই হিন্দু? না, জানতিস না। আমিও জানতাম না আমি মুসলিম। কিন্তু জানতাম, কষ্ট লাঘব করার জন্য মায়ের কোলের মধ্য নিরাপদ জায়গা আছে। মাকেও কোনো ধর্মগ্রন্থ পড়ে জানতে হয় নি যে, সন্তানকে নিরাপদে রাখা তার দায়িত্ব। সে নিজেই এই তাগিদ উপলব্দি করে। এই উপলব্ধির একমাত্র কারিগর তার মনুষত্ব, যা সে জন্মসূত্রে (বংশগতভাবে বলছি না) পায়। এবং পৃথিবীর সব মানুষ এই বিষয়টি জন্মসূত্রে একই ভাবে পেয়ে থাকে। ধর্মভেদে এর বিভিন্নতা নেই।
ধর্ম কিন্তু এ ধরণের কোনো সহজাত গুণ বা বিষয় নয়। এটা মানুষের সৃষ্টি। মানুষই একে ব্যবহার করে নিজের মত করে। কখনও মানুষের হিতার্থে, কখনও কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাদের হীন-স্বার্থসিদ্ধির জন্য। ধর্ম যদি সহজাত হত, তবে পৃথিবীতে এত ধর্মীয় মতবাদের জন্ম হত না। যা কিছু মানুষের সৃষ্টি তাতেই রয়েছে অজস্র ভিন্নতা, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। আর যা কিছু সহজাত, তা নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক বিধিবিধানের দ্বারা আবদ্ধ। ভিন্নতা প্রায় নেই বললেই চলে। যতটুকু ভিন্নতা আছে, মজার কথা, এই ভিন্নতাও নির্দিষ্ট নিয়মের আগলে আবদ্ধ। ব্যতিক্রমও সেখানে একটি নিয়ম।
সুতরাং ধর্মীয় ভেদাভেদ মনুষ্যসৃষ্ট একটি ব্যাধি বা ধান্দাবাজ মানুষের স্বার্থসিদ্ধির অস্ত্রমাত্র। এছাড়া অন্য কিছু নয়।
তাই এই ভেদাভেদের ভাবনা ভুল। এই ব্যাধির দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষের ইতিহাসে আমাদের আর ঠাঁই হবে না। ঠাঁই হবে হিটলারের মত অমানুষদের ইতিহাসে। এটা মনে রাখতে হবে।
শেষে একটা কথা বলি, তোর পোস্টগুলো দেখলে আমার ভয় হয়, মনে হয় তুই ভুল পথে চলছিস। বড় হয়েছিস, একটু ভাবিস কথাগুলো।
ভালো থাকিস, সুস্থ থাকিস, সাবধানে থাকিস।
প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন