অসুন্দর কী?
অসুন্দর সম্পর্কে আলী হোসেনের বক্তব্য
পৃথিবীর সব কিছুই সুন্দর। যা কিছু অসুন্দর, তা লোভী মানুষদের সৃষ্টি।আপনি আপনার কল্পনার ডানা মেলে অতীত উড়ে যান, দেখবেন পৃথিবীতে যা কিছু ছিল তা আপনার কল্পনাতীত সুন্দর। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ছিল প্রকৃতির সেই সৌন্দর্যের অসংখ্য নমুনা। কোথাও সবুজ বনভূমি, কোথাও সাদা বরফে মোড়া পার্বত্য ভূমি। আবার কোথাও ঊষর মরুভূমি কিম্বা নদী নালায় ভরা সমতল ভূমির সুশীতল পরিবেশ। সেখানে প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের দেয়া নেয়ার সম্পর্ক, যার ভিত্তি সাম্যবাদ। কোথাও কেউ বাধা দেয়ার নেই আবার কারোর উপরে কারোর জুলুম নেই। বেঁচে থাকার জন্য যার যেটুকু প্রয়োজন, সে সেটুকুতেই সন্তুষ্ট।
মানুষকে বাদ দিয়ে প্রকৃতিকে ভাবুন, দেখবেন প্রতিটা জীবের মধ্যে এই সাম্যবাদী ভাবনা এখনও কি সুন্দর ভাবে টিকে আছে। প্রকৃতির বেঁধে দেয়া অলঙ্ঘনীয় নিয়ম মেনে। প্রাণীরা দল বেঁধে শিকার করে। শিকারের পর সবাই মিলে ভাগ করে খায়। সেখানে, যে শিকারে অংশ নেয়নি সেও বাদ যায় না। যারা শিকার করেছে তাদের পেট ভরে গেলেই তারা সরে পড়ে। অন্যেরা এসে তা বিনা বাঁধায় ভোগ করে। জমা করে রাখা বা আগলে রাখার জন্য পারস্পরের মধ্যে লড়াই সেখানে নেই।
আপনার উচ্ছিষ্ট খাবারের টুকরোয় যখন পিঁপড়েরা এসে জড়ো হয়, লক্ষ্য করুন সেখানে কোন লড়াই নেই। আছে সহযোগিতার অপার সৌন্দর্য।
এই পরিবেশে বিশ্বজগতের সবাই স্বাধীন ও মুক্ত। এই স্বাধীন ও মুক্ত জীবনের যে সৌন্দর্য সেটাই জগতের আসল সৌন্দর্য। তা কি আজ আছে? নেই।
সুবিশাল প্রাসাদ তুল্য অট্টালিকার নিচে খোলা ফুটপাতে আশ্রয়হীন, খাদ্যবস্ত্রহীন মানুষ যখন গভীর নিদ্রায়ও স্বপ্ন দেখে সুখের, আর অট্রালিকায় শুয়ে থাকা মানুষগুলো দুশ্চিন্তায়, সম্পদ হারানো অথবা আরো না পাওয়ার অনৈতিক বেদনায়, ডিপ্রেশনে চলে যায়, তখন যে কুৎসিত সৌন্দর্য নগ্ন হয়ে আমাদের সামনে উঠে দাঁড়ায় - তার চেয়ে কুৎসিত পৃথিবীতে আর কী আছে?
ভেবে দেখুন এই সৌন্দর্যকে নষ্ট করেছে কে? পশুপাখি? না। প্রকৃতি নিজে ভেঙ্গেছে? মোটেও না। হয়তো বলবেন, ভাঙ্গা গড়া তো প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে সৃষ্টির আদি থেকেই হয়ে চলেছে। তাহলে শুধু মানুষই কেন তার জন্য দায়ী?
দায়ী এ কারণেই যে, প্রকৃতি ভাঙ্গে নতুন করে গড়ার জন্য। যা কিছু জরাজীর্ণ তাকে নতুন করে গড়ে তোলাই সেই ভাঙ্গনের উদ্দেশ্য। মানুষ সে-পথে হাটে না। তারা ভাঙ্গে ক্ষুদ্র স্বার্থে। মানুষ গাছ কাটে কিন্তু রোপন করে না। প্রকৃতি দশটা গাছ ভাঙলে লক্ষ গাছ জন্মানোর পরিবেশ তৈরি করে নেয় এবং তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে থাকে। সুতরাং প্রকৃতির ভাঙ্গা গড়ার সঙ্গে মানুষের ভাঙ্গা গড়ার পার্থক্য রয়েছে গভীর।
মানুষ প্রকৃতি থেকে নেয় বিশুদ্ধ জিনিস, আর ফিরিয়ে দেয় অশুদ্ধ এবং নোংরা বর্জ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন