বহুরূপে মানুষ,
মানুষ শৈশবেই কেবল মানুষ থাকে। যৌবনে জন্তু হয়। বয়স যত বাড়তে থাকে, সিংহভাগই, ধার্মিক হওয়ার চেষ্টা করে।
আসলে মানুষের মত বহুরূপী প্রাণী পৃথিবীতে দ্বিতীয় আছে বলে মনে হয় না।
শৈশবে একজন শিশু আর একজন শিশুকে শুধু নিজের মত একজন মানুষ হিসেবেই দেখে (যদিও এ সময় তার জাতের নাম যে ‘মানুষ’, তাও তার অজানা থাকে)। এ ছাড়া তার কাছে অন্য কোন পরিচয় থাকে না। তাই তারা খুব দ্রুত পরস্পর পরস্পরের বন্ধু হয়ে যায়। কে কালো, কে সাদা; কে হিন্দু, কে মুসলমান; কে নারী কে পুরুষ ইত্যাদি -- কোন বিষয়ই তাদের কাছে কোন গুরুত্ব পায় না, প্রাধান্য তো পায়ই না।
সে যত বড় হয়, তত সমস্যা বাড়ে। তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়, তার সঙ্গে অন্যের পার্থক্য কোথায়। এই পার্থক্যবোধই বৈষম্যের জন্ম দেয়। বৈষম্য তৈরি করার উদ্দেশ্যেই এই পার্থক্যবোধ শিশুর মধ্যে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এই মানুষ যখন যৌবনে পদার্পণ করে, সে তখন জান্তব চেহারা নেয়। তার দৈহিক ও মানসিক শক্তি তাকে কিছু পরোয়া না করার পরামর্শ দেয়। বৈষয়িক ও চতুর যারা, তারা এদের উস্কে দেয় অসম্ভবকে সম্ভব করার, কখনও কখনও অনুচিতকে ঔচিত্যের মোড়ক দেওয়ার কাজে। ফলে তার জান্তব চেহারা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
শরীরের শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করলে, সে ধার্মিক সাজার চেষ্টা করে। ক্ষয় যখন রোগের চেহারা নেয়, সে তখন সত্যিকারের ধার্মিক হওয়ার চেষ্টা করে। এসময়, ধর্মের নামে মানুষ মারতেও কেউ কেউ দ্বিধা করে না। কেউ কেউ তো একাজে গর্ববোধ করে। প্রকৃত ধার্মিক হওয়ার উদগ্র বাসনায়, সে ভুলেই যায় যে, মানুষকে মারা নয়, অমানুষকে মানুষে রূপান্তরে সাহায্য করাই ধর্ম দর্শন উৎপত্তির একমাত্র প্রেক্ষাপট।
জগৎ ও জীবনের যুক্তিবিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা যাঁরা উপলব্ধি করতে পারে, তারাই কেবল ব্যতিক্রম হিসাবে নিজেকে স্থির রাখতে পারে। অর্থাৎ মানুষ হয়ে জন্মায়, মানুষ হিসাবেই মৃত্যুবরণ করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন