বিজ্ঞান ও ধর্মের উৎসভূমি
What is the origin of science and religion?
বিজ্ঞান ও ধর্মের উৎসভূমি এক। একই মাতৃগর্ভে তাদের উৎপত্তি ও বেড়ে ওঠা। ভূমিষ্ঠ হবার পর একটু একটু করে বাড়তে থাকার সময় তাদের রূপ, চেহারা ও দর্শন পৃথক হতে থাকে। আস্তে আস্তে পৃথক চরিত্র লাভ করে। বাধে সংঘর্ষ। এ যেন একই মায়ের গর্ভে জন্মানো দুই ভাইয়ের মধ্যে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিবাদের অন্তহীন লড়াই।
অথচ একই জিজ্ঞাসা থেকে উভয়ের জন্ম। জগৎ ও জীবনের অপার রহস্য উন্মোচনই ছিল এদের লক্ষ্য।
এই লক্ষ্যে একপক্ষ যুক্তি বুদ্ধি ও তথ্যের উপর ভর করল, অন্যপক্ষ যুক্তি বুদ্ধির সঙ্গে বিশ্বাস মিশিয়ে দিল । পরবর্তীকালে এই বিশ্বাসই নির্ভরতার একমাত্র জমি দখল করে নিজে সর্বেশ্বরবা হয়ে উঠলো। জন্ম হলো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের।
অন্য দিকে, যারা যুক্তি, বুদ্ধি ও তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা অব্যাহত রাখল, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পূর্বের ধারণা বা সিদ্ধান্তকে সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো, তারা রূপ নিল বিজ্ঞানে।
যারা বিশ্বাসে ভর করলো, তারা পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন ও সংযোজন-এর প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করলো। ফলে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তিত করে যুগোপযোগী ধর্ম দর্শনের রূপান্তর হওয়া আর হলো না। ফলে একটু একটু করে ধর্ম দর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধতা বাড়তে থাকল। একটি ধর্মদর্শনের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে তৈরি হল আর এক ধর্মদর্শন। এভাবেই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য ধর্মদর্শন, যা সাধারণ মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম হিসেবে চেনে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এই ধর্ম দর্শনগুলোর স্বঘোষিত কর্তারা নিজেদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব দাবির জায়গা থেকে কেউ সরতে চায় না। নিজের দাবিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনের সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা দিতে গিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিযুক্ত হতেও পিছপা হয়। ফলে ধর্মকে কেন্দ্র করে বিভেদ-বিদ্বেষ সীমাহীন মাত্রায় পৌঁছেছে, এবং সংঘর্ষের জন্ম দেয়।
ফলে, একটি ধারা প্রতিনিয়ত জগত ও জীবনের রহস্যে ভেদ করে এগিয়ে চলেছে। যাকে আমরা বিজ্ঞান বলে জানি। এই বিজ্ঞান জীবদেহ দেহ থেকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের গভীর ও জটিল রহস্যের সমাধান বের করে চলেছে নীরবে নিভৃতে। সেখানে কোন বিভেদ নেই, বিদ্বেষ নেই, নেই রক্তক্ষয়।
অন্যটি জগত জুড়ে মানুষে মানুষে বিভেদ, বিদ্বেষ ও রক্তক্ষয় করে চলেছে যুগ যুগ ধরে মানব কল্যাণের নাম করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন