দীনকৃষ্ণ ঠাকুর — আলোর আর এক নাম
অন্ধকার আলোকে ভয় পায়। তাই সে আলোকে নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
আলো সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বা অন্যকে তার নিজস্ব রূপে সহজেই মানতে পারে। কারণ, সেটা সে দেখতে পায়। তাই সে ভয়ও পায় না কিছুকে। কিছু হারানোর ভয় সেকারণেই সে পায় না। সে কারণে তার হিংস্র হওয়ারও দরকার পড়ে না।
কিন্তু অন্ধকারের তো চোখ নেই। সে শুধু কলোকেই দেখতে পায়। তাই আলো দেখলেই সে ভয়ে চমকে ওঠে। দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে, আলোর দিকে তেড়ে যায়।
দীনকৃষ্ণ ঠাকুর অন্ধকারে আলো ফেলেছেন। তাই অন্ধকারকে যারা জীবিকার উৎস হিসাবে জানে, তারা অন্ধকারকে ক্ষেপিয়ে দেয় আলোর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। অন্ধরা ছুটে চলে আলোর পিছনে তাকে নিভিয়ে দেয়ার জন্য। তাই আজ দিনো কৃষ্ণর পিছনে ছুটে যাচ্ছে কিছু অন্ধ মানুষ, তাকে নেভানোর জন্য, তাকে থামানোর জন্য।
Achinta Das : সত্যি কথা বলতে কি, নূপুর শর্মা সেদিন কী বলেছিলেন তা আজও আমি জানি না। কারণ, তা নিজ কানে শুনিনি। জানার আগ্রহ আমার নেই। কারণ, যে কথাই তিনি বলে থাকুন না কেন, তাতে হজরত মুহাম্মদের মত মানুষের কিছুই যায় আসে না। মানব জাতির ওপর তাঁর যে প্রভাব তার ধারে কাছে নূপুর শর্মা কোনোদিনই যেতে পারবেন না। দুজনের সাথে তুলনা করলেই তা বোঝা যায়। তাঁর প্রভাব যাদের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সুবিধা বা অসুবিধার কারণ হয়, তারা তাঁকে নিয়ে কেউ নোংরামি করে, কেউ তাঁকে ভালোবাসার ভান করে হিংসা ছড়ায়।
আমি ওই দু’দলের কাউকেই পছন্দ করার মত কোন কারণ খুঁজে পাইনা। তাই তাতে আমার আগ্রহ নেই।
কিন্তু যারা সেদিন এই ঘটনাকে নিয়ে মার দাঙ্গা বাধাবার চেষ্টা করেছিলেন, আজকের মত সেদিনও তার বিরোধিতা করেছিলাম। তার জন্য আমাকে হুমকি ধমকিও দেওয়া হয়েছিল কিছু ধর্মান্ধ মানুষের পক্ষ থেকে।
কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য যে, আপনার মত বন্ধু সেদিন কিছুই দেখতে পাননি। অথবা দেখলেও মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি। অথচ আজ ঠিকই আপনার নজরে পড়েছে। এবং বেশ সুক্ষভাবে বিদ্রুপ করছেন। আমি বিশ্বাস করি, এতে আমি না, আপনিই মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। সিলেকটিভ মাইন্ড নিয়ে আর যাই করা যাক না কেন, সত্যের কাছাকাছিও পৌঁছানো যায় না - একথা আপনার মাথায় না থাকলেও আমার মাথায় সব সময় একটিভ থাকে। মনে রাখলে আমাকে বুঝতে আপনার সুবিধা হবে। মন্তব্য করতেও।
ভালো থাকবেন। মানব ধর্মকে ভুলে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম যে অর্থহীন ও অনিষ্টকারী হয়ে ওঠে, তা আপনার চেতনায় জায়গা পাক এই কামনা করি।
Achinta Das আমিও বলিনি যে আপনি তুলনা করেছেন। তুলনা আমি করেছি। এটা বোঝানোর জন্য করেছি যে নূপুর শর্মা যাই বলুন, তাতে হজরত মহম্মদের কিছু যায় আসে না। কারণ নূপুরের সে ক্ষমতা নেই। তাই তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও মত কিছু নেই। নূপুর ও তার উল্টো দিকে থাকা মানুষেরা হজরত মুহাম্মদকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন নির্লজ্যভাবে। দীনকৃষ্ণ ঠাকুরের বিষয়টা মোটেই তেমন কিছু নয়।
আমি কেন জাস্টিফাই করতে যাবো? আমার বক্তব্য হল তাঁর কথার সঙ্গে কেউ যদি একমত না হতে পারেন, তাহলে তাঁর কথা যুক্তি ও তথ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ঠিক নয়। মারতে যাবে কেন? মারলেই কী সত্য মিথ্যা, আর মিথ্যা সত্য হয়ে যাবে?
দ্বিতীয়ত এই সমস্যা আমাদের সমাজেও আছে। সেটাও আমি আমার পোস্টে উল্লেখ করেছি। আপনার সে কথা নজর এড়িয়ে গেল কীভাবে? আর গেছে বলেই অপ্রাসঙ্গিক ভাবে নূপুরের কথা এনে ফেলেছেন।
সবচেয়ে অবাক হয়েছি এই ভেবে যে, আমার পোস্টের সঙ্গে নূপুর শর্মার প্রসঙ্গ একেবারেই যায় না। অথচ তাকে আপনি এর সঙ্গে জুড়ে দিলেন! নূপুর শর্মা নিজের ধর্ম নিয়ে কথাটা বলেননি। কিন্তু দীনকৃষ্ণ নিজের ধর্ম সম্পর্কেই তাঁর মতামত জানিয়েছেন। নিজের ধর্ম সম্পর্কে মতামত জানানোর অধিকার তার তো রয়েছে। তাঁর যদি না থাকে যারা তাঁকে মারতে গেল তাদের থাকে কোন যুক্তিতে? এটা কখনই অন্য ধর্মের মানুষের ভাবাবেগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তাই এখানে নূপুরের সঙ্গে তুলনা চলেনা। অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এলেই সিলেকটিভ মাইন্ড উপস্থিতি থাকার প্রসঙ্গ এসে যায়। মনে রাখা দরকার ভিন্ন মতের সহাবস্থান চলে, কিন্তু ভিন্ন মনের সহাবস্থান চলেনা।
Achinta Das : মানবতাবাদী হতে হলে কি অন্যের ধর্ম বিশ্বাসকে অস্বীকার করতে হয়? আমি তা মনে করি না। মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম মতে বিশ্বাস করে। আমি কি তার বিশ্বাস হত্যা করতে পারি? পারিনা। আমার ভিন্ন মতের কথা জানাতে পারি মাত্র। সেটা উল্লেখ করে নূপুর শর্মা ও দীনকৃষ্ণের ঘটনার পার্থক্য দেখানো হলে কীভাবে নিজের মানবতাবাদী হওয়ার দাবী আটকে যায়, আমার মাথায় ঢুকলো না।
আর রাষ্ট্রের সম্পত্তি মানে নিজেদের সম্পত্তি। তাকে নষ্ট করা মানে নিজের ক্ষতি নিজে করা। তা কখনই সমর্থন করা যায় না। ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের লাভ জনক সম্পত্তিকে জলের দরে কর্পোরেট মালিকের কাছে বেচে দেওয়াকে সমর্থন করা যায় না। কিন্তু সরকার সেটা বিক্রি করে দিচ্ছে। নয় তো কৌশলে তাকে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। যেমন bsnl. এরও প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা কেউ এর প্রতিবাদ করি আবার কেউ সমর্থন করি। কেন এমন হবে? শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের সম্পত্তি বিশেষ ধর্মের মানুষকে দিয়ে দিচ্ছি মন্দির ও মসজিদ করার জন্য, ভোটের রাজনীতিতে সুবিধা নেওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে আপনার যদি তাকে সমর্থন করার অধিকার থাকে, তবে অন্যের তার বিরোধিতা করার অধিকারকেও স্বীকার করতে হবে। তবে তা সম্পত্তি নষ্ট করে নিশ্চয়ই নয়। নষ্ট করলে জাতি ধর্ম সরকার নির্বিশেষে তার বিরোধিতা করা দরকার। নূপুর শর্মার ঘটনার সময় ঘটার সাথে সাথে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়েছিল তার কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাই না?
Suranjan Adhikari একই রকম ভাবে সেটা নিয়েও মানুষ দুভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। যাঁরা যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদে বিশ্বাস করে তাঁরা তাঁকে সমর্থন করবে। আর যারা ধর্মান্ধ তারা তাঁর মুন্ডু নেওয়ার বিধান দেবে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ হবে। এই সহজ উত্তর আমার কাছে কেন জানতে চাইলেন বুঝলাম না। আমি তো সব সময় আশা করি আমার বন্ধু তালিকায় যারা আছেন, তারাও এভাবেই ভাবার ক্ষমতা রাখেন। কারণ, বন্ধুত্ব তো সমমনস্কদের মধ্যে হয়। আপনি কি আমাকে না বুঝেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন?
আর আমি আজ যেভাবে দীনকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার নিন্দা করছি, সেভাবেই নিন্দা করবো। আপনার মত ভাবাবেগের নাম করে অন্যায়কে সমর্থন করবো না। কারণ কারও কোন মতামতের বিরুদ্ধে মতামত জানানোর অধিকার আমার থাকলেও তাকে নিগ্রহ করার অধিকার আমার নেই। কোন সভ্য সমাজ এ অধিকারকে স্বীকার করে না।
আশা করি আমার এই উত্তর আপনাকে আমার অবস্থান বুঝতে সাহায্য করবে।
ভালো থাকুন। মানুষের মঙ্গলে আপনার মনের সুন্দর অংশের বিকাশ ঘটুক।
----------xx----------
কৌশিক সরকার : সাথি আপনি ভুল বুঝছেন। তাই নদীর রচনা লিখতে লিখতে কখন বোধ হয় গরুর রচনায় ঢুকে পড়েছেন। প্রশ্নটা মোটেও হিন্দু মুসলমানের বিষয় নয়। বিষয়টা মতামত প্রকাশের অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়ার। আমি যদি অন্যের মতামতকে যুক্তি ও তথ্য দিয়ে খন্ডন না করে খিস্তি খেয়ুর করে তাকে মারতে যাই তবে তা আর শিক্ষিত মানুষের কাজ বলে বিবেচিত হয় না। কোন যুক্তি-বুদ্ধি সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ তা মানতে পারে না। তার বিরুদ্ধে মতামত বা প্রতিবাদ করাটা মানুষের ধর্ম।
মানুষ তো আগে মানুষ, তারপর সে হিন্দু বা মুসলমান। মানুষ তো মানুষ হয়েই জন্মায়। হিন্দু মুসলমান হয়ে তো জন্মায় না। সমাজ তাকে জোর করে শেখায় তুই হিন্দু বা তুই মুসলমান। নিজের কাছে প্রশ্ন করুন দেখবেন আগে আপনি মানুষ। এটা আপনাকে কেউ বলে দেয়নি। শিখিয়েও দেয়নি। কিন্তু ধর্ম আপনাকে কেউ শিখিয়েছে যে আপনি হিন্দু আর আমি মুসলিম। বিশ্ব জুড়ে রাজনীতিকরা এই কাজ করে এসেছে ক্ষমতা দখলের কৌশল হিসেবে। আর আমরা যুগ যুগ ধরে এই শেখানো বুলি তোতাপাখির মত মুখস্ত করে আসছি।
নেতারা মন্ত্রী হবে। আর আমি আপনি মারামারি করে মরবো। এই বোকামি আর কতদিন চলবে বন্ধু। সাধারণ মানুষ নেতাদের উস্কানিতে মারামারি করে মরে। কোনদিন দেখেছেন নেতা বা মন্ত্রীর ছেলে বা মেয়েরা দাঙ্গায় মরতে? তারা নিরাপদে থেকে লেখাপড়া শিখে দেশের সম্পদের অংশীদারিত্ব আদায় করে নেয়। আর আমরা ধর্মের নাম করে মারামারি করি।
কবে আমাদের চৈতন্য হবে বন্ধু?
প্রসঙ্গ জানতে ফেসবুক দেখুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন