ধর্ম দর্শন কী পরিবর্তনশীল?
Is the philosophy of religion, changing?
ধর্ম দর্শনের ভিত্তি হল ঈশ্বর-কেন্দ্রিক বিশ্বাস। যারা ধর্ম বিশ্বাসী, তারা বিশ্বাস করেন ঈশ্বরের দ্বারাই এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয় এবং হচ্ছে। তার নির্দেশ ছাড়া গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ে না।
এখন প্রকৃতির দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এবং অবশ্যই এই পরিবর্তন একটি নির্দিষ্ট নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই নিয়ম আবার কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে, যার স্রষ্টা বা নিয়ন্ত্রক, ধর্ম দর্শন অনুযায়ী, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বা আল্লাহ। আমরা প্রতিদিন দেখছি এই পৃথিবী সহ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড একটু একটু করে পরিবর্তিত হচ্ছে। পাহাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমতল ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। নদী গভীরতা হারিয়ে স্থল ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। মানুষের পোশাক পরিচ্ছদ থেকে খাদ্যাভ্যাস পাল্টে যাচ্ছে। জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন উপকরণ যোগ হচ্ছে। জীবন ও মৃত্যু আংশিক হলেও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
ধর্ম দর্শন অনুযায়ী সব কিছুই যখন তাঁর নির্দেশে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন এই পরিবর্তনগুলোও তো তাঁর নির্দেশেই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই সংঘটিত হচ্ছে। সুতরাং তিনি যখন এত কিছুর পরিবর্তনকে মান্যতা দিচ্ছেন, তখন সুদূর অতীতে দেওয়া ধর্ম গ্রন্থের বক্তব্য ও ব্যাখ্যা অপরিবর্তিত থাকে কীভাবে?
যিনি পার্থিব পরিবর্তনকে বৈধতা দিচ্ছেন, তিনি ধর্ম গ্রন্থের মাধ্যমে ব্যক্ত করা বিষয় ও বক্তব্যকে চিরস্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল বলবেন কীভাবে? যদি ধরে নেই, বলেছেন, তাহলে তার বক্তব্য ও কার্যকলাপের মধ্যে স্ববিরোধ রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়ে যায় না? আর তা (স্ববিরোধী) যদি হয়, এবং আমরা যদি তা মেনে নিই, তা কী তার বিধানের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাহীনতার অভিযোগ উঠবে না? অথচ বাস্তবে তাঁর পরিচালন ব্যবস্থায় এ ধরণের শৃঙ্খলাহীনতার কোন লক্ষ্মণ তো আমরা দেখতে পাই না। সব কিছুই তিনি পরিচালনা করছেন নির্দিষ্ট নিয়মের বন্ধনে বেঁধে। এই বেঁধে দেওয়া বিধান এক সেকেন্ড পরিমাণে হেরফের হলে এই ব্রহ্মান্ডে প্রলয় ঘটে যাবে। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের গবেষণা তো তা-ই বলছে।
আমরা যদি নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই পরিবর্তনশীলতাকে অস্বীকার করি তাহলে তাঁর ও তাঁর কর্মকান্ডের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ পাবে।
কিন্ত প্রকৃতিতে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এবং কোরআনকে বিশ্লেষণ করলে এই পরিবর্তনকে আমাদের স্বীকার না করে উপায় নেই। কেননা ধর্ম গ্রন্থের মধ্যে সেই ইঙ্গিত রয়েছে। সূরা আল শামস-এ বলা হচ্ছে :
শপথ মানুষের এবং তাঁর, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন।
তারপর তাকে তার সৎকাজের এবং তার অসৎ-কাজের জ্ঞান দান করেছেন।
সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে নিজেকে পবিত্র করেছে।
অর্থাৎ মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন সৎ কাজ ও অসৎ কাজ কাকে বলে তা বোঝার মত জ্ঞান দিয়ে। যে ব্যক্তি তাকে কাজে লাগাবে, সে বুঝতে পারবে কখন, কী কাজ, কীভাবে করতে হবে, অথবা কোন্ পরিস্থিতিতে তা করা যাবে না। এবং সেই বোধ বা জ্ঞান ব্যবহার করলেই মানুষ সফল হবে।
সুতরাং এখানে জ্ঞানের প্রয়োগকে পরিস্থিতি নির্ভর হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজের বিচার বুদ্ধির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে পরিস্থিতি বুঝে কাজ করার অনুমতি দেওয়ার অর্থ হল পরিস্থিতির পরিবর্তনকে মান্যতা দেওয়া।
উদাহরণ বাকারা
ধর্ম দর্শন পরিবর্তনশীল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন