‘সেকু’, ‘মাকু’ কী এবং কেন?
‘সেকু’, এবং ‘মাকু’। শব্দ দুটো ইদানিং বেশ চলছে। কারণ কী জানেন? কারণ হল, বিভাজনের রাজনীতি বাড়ছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আছে, দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উন্নয়নের জন্য, যাদের তেমন কোন বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা বা কর্মসূচি নেই। নেই কোন সাফল্যের অতীত খতিয়ানও। তাই তারা মানুষে মানুষে সম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে রাজনীতি করে। বিভাজনকে হাতিয়ার করে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে এবং রাখতে চায়। পরাধীন ভারতে ইংরেজরা একারণেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াল দুটি আধুনিক ইউরোপীয় মতাদর্শ। যা এই দুটি শব্দের সংক্ষিপ্ত উচ্চারণের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে। একসময় এদের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার কারণে, এরাই বিভাজনকারীদের সবচেয়ে বড় শত্রু বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী এলিমেন্ট হিসাবে উঠে আসে। যেমন জার্মানিতে হিটলার।
স্বাধীনতা উত্তর কালে, ব্রিটিশরা চলে গেলে, সাম্প্রদায়িক বিভাজনকেই প্রধান অস্ত্র করে নেয় কিছু রাজনৈতিক সংগঠন। বর্তমানে তারা অনেকটাই সাফল্যের মুখ দেখেছে। আর এজন্য এই শব্দ দুটোর উচ্চারণও অনেকটা বেড়ে গেছে।
আসুন, দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে তা হল। আধুনিক যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মানবতাবাদ। এর মূল কথা হল,
১) মানুষে মানুষে বিভাজন বা বিরোধ নয়, পারস্পরের প্রতি ভালোবাসাই হল মানুষের প্রধান ও প্রকৃত ধর্ম।
২) মানুষ পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসতে পারলেই মানব সভ্যতা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছবে। আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর হবে এবং বর্ণবাদ পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। ইউরোপীয় নবজাগরণের ইতিহাস পড়লেই আপনি এটা জানতে এবং বুঝতে পারবেন। মনে রাখবেন, এটাই যুগের বা সময়ের প্রধান চাহিদা।
এখন এই মানবতাবাদকে চোখের মণির মত দেখে এবং তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে যে দুটো আধুনিক মতাদর্শ, তা হল যথাক্রমে সেক্যুলারিজম এবং মার্কসিজম। স্বাভাবিকভাবেই বিভাজনকারীদের প্রথম এবং প্রধান টার্গেট হল, এই দুটো মতবাদ বা মতাদর্শ। এই দুটো মতাদর্শ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে কাছাকাছি এনে দেয়। জোট বাঁধতে উৎসাহিত করে। উৎসাহিত করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসতে শেখায়। ভাবতে শেখায়, সমস্ত মানুষই এক এবং অভিন্ন মানবাত্মার অংশ। তাই এ পৃথিবীতে সমস্ত মানুষের অধিকার ও মর্যাদা সমান।
এক কথায় এই দুই মতাদর্শের কারণে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবতাবাদ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। ফলে বিভাজনের রাজনীতি শক্তি হারাতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই বিভাজনকারী রাজনীতিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। জন্ম নেয় এই দুই মানবতাবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে সীমাহীন ক্ষোভ। আর তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই ক্রোধ মেশানো বিকৃত উচ্চারণে। তাদের ক্রোধের আগুনে পুড়ে যাওয়া উচ্চারণে ‘সেকুলারিজম’ হয়ে যায় ‘সেকু’, আর ‘মার্কসিজম’ হয়ে যায় ‘মাকু’।
--------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন