বাঙালির সমস্ত ভুবন মিলে একটি সাধারণ সংবাদ ,সংস্কৃতির চ্যানেল করা সম্ভব?বাংলাদেশ ,পশ্চিম বাংলা,অসম,ত্রিপুরা বা ঝাড়খণ্ড সব জায়গা থেকেই সেটি পরিচালিত ও অ্যাকসেস করা সম্ভব।
প্রস্তাবটি ভালো এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয়।
কিন্তু টাকা দেবে কে? পুঁজিই তো আসল চালিকা শক্তি। আর পুঁজির মালিকরা শুধু পুঁজি বাড়াতেই পুঁজি বিনিয়োগ করতে ব্যস্ত থাকে।
বাঙালির সংস্কৃতি রক্ষায় পুঁজি বিনিয়োগ করার মত বাঙালি পুঁজির মালিক কি আছে? থাকলে কোথায়?
ক্লাউড ফান্ডিংই এক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প। কিন্তু সেখানেও সমস্যা আছে। এই ধরণের ফান্ডিংয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মানুষের আবেগ ও সহানুভূতি। বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি সম্পর্কে আম জনতার সেই আবেগ ও সহানুভূতি কি আছে অবশিষ্ট ?
আমার মনে হয়, নেই বললেই চলে। না থাকার কারণও আছে। সেখানেও চলছে পুঁজির খেলা।
উত্তর ও পশ্চিম ভারতীয় করপোরেট পুঁজির মালিকরা বেশ পরিকল্পনা করে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে মুছে দিতে চেষ্টা করছে। এবং আম বাঙালি অতি উৎসাহের সঙ্গে সেই পরিকল্পনার সঙ্গে নিজের শরীর ও মনকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিন বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো (যার সবকটাই উত্তর পশ্চিম ভারতীয় পুঁজিপতিদের দ্বারা পরিচালিত হয়) হিন্দু সংস্কৃতির নামে উত্তর ও পশ্চিম ভারতীয় সংস্কৃতিকে সুকৌশলে বাঙালির চিন্তা ও চেতনায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। দিনভর আম বাঙালি সেটাই ঘরের মধ্যে বসে বসে বোকাবাক্সয় চোখ রেখে দেখছেন এবং আত্মস্থ করছেন। হিন্দু সংস্কৃতির নাম করে উত্তর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদ এভাবে বাংলার সংস্কৃতিকে মুছে দেয়ার জন্য পুঁজি বিনিয়োগ করে চলেছে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। তাই বাংলা ভাষা শেখার চেয়ে হিন্দি ভাষা শিখতে পারাকে বেশি মর্যাদাকর বলে ভাবছে আমজনতা। সুতরাং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বাঙালির ক্রাউডফান্ডিং গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সেই আবেগ কোথায়?
বাংলাকে হিন্দি স্টাইলে উচ্চারণ করা এবং বাংলা ভাষার মধ্যে ‘কেন কি’ জাতীয় হিন্দি শব্দ ঢুকিয়ে সুকৌশলে বাংলাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। ভাবখানা এমন যে, হিন্দি ভাষার সাহায্য ছাড়া বাংলা ভাষা মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে খুবই দুর্বল। আম-বাঙালির একটা বড় অংশ এভাবে উচ্চারণ করার মধ্যে এক ধরনের গর্ববোধও অনুভব করে থাকেন।
বাঙালির সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসব এবং ইদ উপলক্ষে যে মাইক বাজে সেখানেও বাংলা গান স্থান পায় না। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বাংলার লোকসংগীত সেখানে অচ্ছুৎ হয়ে গেছে। রাত দিন সেখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হিন্দি গান যার সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির কোন যোগসূত্র নেই, নেই কোনো ছোঁয়াও।
বাংলাকে অক্ষন্ড রাখা এবং বাংলা ও বাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমরণ চেষ্টা চালিয়েছেন যে সমস্ত মানুষ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু’জন হলেন চিত্তরঞ্জন দাস ও ফজলুল হক। এপার বাংলায় এই দুটো মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে স্বাধীনতা-উত্তর কালের সূচনালগ্ন থেকেই। অথচ এই বাংলা-বিভাগের সঙ্গে যার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির গলায় মালা দেয়ার লোকের অভাব হয় না এই বাংলায়।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি রক্ষায় বাঙালির যে আবেগ থাকা প্রয়োজন তা এখানে নেই বললেই চলে। সুতরাং ক্রাউডফান্ডিং কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও বিশেষ সাড়া পাওয়া যাবেন না বলেই আমার ধারণা।
তবে আশা করতে তো বাধা নেই। তাই আমিও একমত প্রকাশ করছি যে এমন একটা উদ্যোগ নেওয়া খুবই প্রয়োজনীয় এবং তার সাফল্য কামনা করা খুব জরুরি।
প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন