লেনিনের মূর্তি ভাঙা
যারা গতকাল গড়বেতায় লেনিনের মূর্তি ভাঙলেন তারা হতভাগ্য। কারণ পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে যেমন প্রত্যুষে বসে গভীর রাতের অন্ধকারের গভীরতা উপলব্ধি করা যায় না, তেমনই রুশ বিপ্লব পূর্ববর্তী পৃথিবীতে খেটে খাওয়া মানুষের যে করুন অবস্থা ছিল তাও এই সময় বসে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।যারা লেনিনের মূর্তি ভাঙলেন, তারা সে কারণেই উপলব্ধি করতে পারলেন না যে, তারা কত বড় হতভাগ্য মানুষ।
মানব সভ্যতার ইতিহাসের বিবর্তন যারা পড়েছেন, তারা জানেন, আজ যেটুকু অধিকার এই হতভাগ্য মানুষগুলো ভোগ করছেন তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল এই মানুষটির (লেনিন) হাত ধরেই। ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা আজ যেটুকু অধিকার মেহনতী মানুষকে দিয়েছে, তা বাধ্য হয়েই দিয়েছে। বাধ্য হওয়ার পিছনে যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি, তিনি আর কেউ নন, এই মানুষটিই। ভি আই লেনিন।
এদের দুর্ভাগ্য, তারা এই ইতিহাস জানে না, যাদের নির্দেশে তারা লেনিনের মূর্তি ভাঙলেন, তারা কিন্তু এই ইতিহাস জানে। জানে বলেই তারা ভয় পায়। ভয় পায় এই ব্যক্তির ভূমিকা জেনে এবং তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যদি এই বঞ্চিত মানুষগুলো আবার রুখে দাঁড়ায় পুঁজিবাদের ধারক ও বাহকদের বিরুদ্ধে তাহলে আর এক দফা সর্বনাশ হবে তাদের। গরীবের শ্রমে গড়ে ওঠা পুঁজির পাহাড়ের দখলদারি বেহাত হয়ে যাবে।
তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ধূর্ত পথ বেছে নেয় তারা। লেনিনের (রুশ বিপ্লবের নেতা) মত মানুষদের বিরুদ্ধে মনে বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের প্রেরণাদাতাকে তাদের দ্বারাই হত্যার ব্যবস্থা করে। এই হতভাগ্য (যারা লেনিনের মূর্তি ভাঙলেন) মানুষগুলো জানতেই পারে না এই বিষ কীভাবে তার অজান্তে তার শরীর ও মনকে তার জীবনের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী লড়াইয়ে নামিয়ে দিচ্ছে। জানতে পারে না তাদের শ্রমের ফসল কীভাবে শ্রমবিমুখ মানুষের পকেটে ঢুকে যাচ্ছে।
এরাই যে ধর্মের নামে হতভাগ্য মানুষগুলোকে বিভাজনের আত্মঘাতী খেলায় নামায়, তাও তারা জানতে পারে না। জানতে পারে না তারা যা গতকাল ভাঙল (লেনিনের মূর্তি) তা আসলে তাদের নিজের নিজের পাঁজর।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন