সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পুঁজির প্রকৃত মালিক কে?

পুঁজির প্রকৃত মালিক কে?

পুঁজির জন্ম হয় কীভাবে এবং কোথা থেকে?

পুঁজির উৎস কী? কীভাবে পুঁজির জন্ম হয়?পুঁজির জন্ম হয় কিভাবে?, পুঁজির প্রকৃত মালিক কারা?
পুঁজির প্রকৃত মালিক কে? — আলী হোসেন 

পুঁজির জন্ম হয় শ্রম থেকে। কারণ, শ্রমিকের শ্রম যুক্ত না হলে প্রকৃতির কোন সম্পদই প্রকৃত অর্থে সম্পদ হয়ে ওঠে না। প্রকৃতির সেই সব বিষয় বা বস্তু সম্পদ বলে বিবেচিত হয়, মানুষের কাছে যার ব্যবহারিক মূল্য আছে। প্রকৃতির যে সমস্ত বিষয় বা বস্তু মানব সভ্যতার উন্নয়নে কোনদিন, কোনভাবে, কোন কাজেই লাগে না, তাকে কেউ সম্পদ বলে বিবেচনা করে না। বন বা জঙ্গলের আগাছাগুলো একারণেই কোনদিন সম্পদ হয়ে ওঠেনি। আর এই বিষয় বা বস্তুকে সম্পদে পরিণত করার একমাত্র হাতিয়ার হল শ্রমজীবী মানুষের কায়িক শ্রম ও তাদের বুদ্ধিমত্তা।

অর্থাৎ প্রকৃতির নানান উপাদান যখন শ্রমজীবী মানুষের কায়িক শ্রম ও বুদ্ধিমত্তা সহযোগে মানুষের ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে, তখনই জন্ম হয় সম্পদের। আর যুগ যুগ ধরে এই সম্পদই পুঁজির প্রধান উৎস। এদিক থেকে বিচার করলে শ্রমজীবী মানুষই হচ্ছে একমাত্র সম্পদ, যাকে বাদ দিয়ে কোন সম্পদ নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারে না। আর এ কারণেই মানুষকে সব সম্পদের সেরা সম্পদ বলা হয়। প্রাচীন যুগে এ কারণেই শ্রমজীবী মানুষকে সম্পদ হিসেবে দেখা হতো। এবং অন্য সম্পদের মতই শ্রমজীবী মানুষকেও কেনাবেচা করা যেত। প্রাচীন পৃথিবীতে দাস ব্যবস্থার জন্ম এভাবেই হয়েছিল। মানুষকে সম্পদ হিসেবে ভাবা ও তাকে কব্জা করার ইচ্ছাকে ভিত্তি করেই জন্ম নিয়েছিল দাস প্রথা।

শুনলে আশ্চর্য হবেন, এই দাস ব্যবস্থাই ভিন্ন নামে এবং চেহারায় আজও পৃথিবীতে কায়েম রয়েছে। দীর্ঘ লড়াই ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তার একটি পরিশীলিত চেহারা তৈরি করেছে, বলা ভালো, করতে বাধ্য হয়েছে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা। কীভাবে?

ইতিহাসের আদিমতম পাতায় গভীর বিশ্লেষণী ও যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চোখ রাখলে দেখা যায় সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে কৌশলে সেই পুঁজির দখল নেয়, একদল শ্রম-বিমুখ বুদ্ধিমান (চালাক), ও অধিক পেশী শক্তির অধিকারী মানুষ। পরবর্তীতে সেই অবৈধভাবে দখল করা পুঁজিকে পুনঃবিনিয়োগ করে সে দাবি করে, শ্রমের চেয়ে পুঁজির মূল্য বেশি । এবং এই যুক্তিতেই তারা দাবি করে, উৎপাদনের সিংহভাগ শ্রমের মালিকের নয়, পুঁজির মালিকের পাওনা। এর চেয়ে বড় মিথ্যা ও ভয়ংকর শঠতা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টা নেই।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, যুগ যুগ ধরে শ্রমজীবী মানুষ এই মিথ্যাটাকেই সত্য এবং প্রকৃতির (ঈশ্বরের) অলঙ্ঘনীয় নিয়ম বলে মেনে আসছে। কারণ, এই মিথ্যাকে মিথ্যা বলে জানতে গেলে যে চেতনার অধিকারী হতে হয়, তা তারা অর্জন করতে পারে না। আর পুঁজিবাদী শাসকরা এই সত্যকে মিথ্যা অথবা মিথ্যাকে সত্য করে তোলার জন্যই প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছে। টিভি, সিনেমা, খবরে কাগজ সহ সমস্ত পুঁজিবাদী মিডিয়া, এমনকি স্কুল কলেজের সিলেবাসের মাধ্যমে সুকৌশলে তারা এই কাজ করে চলেছে।

আর এই কাজে তাদের অন্যতম বড় হাতিয়ার হল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম। এ কারণেই মিডিয়া ও ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে থাকে পুঁজির তথাকথিত শ্রমবিমুখ মালিকরা। গড়ে ওঠে হাজার হাজার মন্দির, মসজিদ, গীর্জা ইত্যাদি। যুগ যুগ ধরে এগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে শয়ে শয়ে ধর্ম মত এবং অসংখ্য ঈশ্বর ও সে সম্পর্কিত ভাবনা, যাদের দাপটে প্রকৃত ঈশ্বর রয়ে গিয়েছে আলোর আড়ালে, গভীর অন্ধকারে।

পুঁজির তথাকথিত মালিকরা জানে, এই সম্পদকে নিজেদের অধীনে রাখার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হল রাষ্ট্রযন্ত্র। তার হাতেই থাকে অসীম ক্ষমতা। তাকে কাজে লাগানোর এক্তিয়ার যার থাতে থাকবে, সেই হবে সম্পদের কার্যকরী মালিক। ফলে মিডিয়া ও ধর্মকে ব্যবহার করে তারা এই রাষ্ট্র শক্তিকে কব্জা করার চেষ্টা করে। জগত জুড়ে এই কাজ করে চলেছে এই সব তথাকথিত পুঁজির মালিকশ্রেণি। এই কাজের সাংবিধানিক নাম রাজনীতি।

এই রাজনীতির একটি সীমাবদ্ধতা হল পার্থিবভাবে এই রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন চ্যালেঞ্জের উদাহরণ রয়েছে অসংখ্য। ইতিহাসের পাতায় তা কখনো দাস বিদ্রোহ, কখনো আদিবাসী বিদ্রোহ, আবার কখনো কৃষক বা শ্রমিক বিদ্রোহ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ সমস্ত বিদ্রোহ যখনই দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে, তখনই রাজনীতির সহায়ক বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে ধর্মতত্ত্বের কথা। উৎপত্তি হয়েছে ঈশ্বরের নামে নানান প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের। ঈশ্বরের নাম করে চালু করা হয়েছে নানান বিধি-বিধান এবং আইন কানুন। এইসব আইন কানুনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পুঁজি ও তার উৎসের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা। ঈশ্বরকে সাধারণ মানুষ ধরাছোঁয়ার মধ্যে পায় না। তাই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করা যায় না। অকল্পনীয় শক্তির আধার হিসাবে কল্পিত এই অশরীরি শক্তিকে সামনে রেখে পুঁজির প্রকৃত মালিককে(শ্রমের মালিক) সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ঈশ্বরের নামে ধর্মীয় অনুশাসন তৈরির মাধ্যমে দান, খয়রাত দেওয়ার বিধি-বিধান তৈরি করে কৌশলে সমাজে বৈষম্যকে বৈধতা দেওয়া হয়। শ্রমজীবী মানুষকে সহজেই বুঝিয়ে দেওয়া যায় বৈষম্য আসলে ঈশ্বরেরই তৈরি। এর বিরুদ্ধে পার্থিব কোন লড়াই বা সংগ্রাম বৈধ নয়। তিনি যেমন চেয়েছেন, তুমি তেমন অবস্থায় আছো।

এভাবে মানুষকে বঞ্চিত করার অভিনব কৌশল ফাঁদা হয়। বর্তমান সময়ে ধর্ম থেকে রাজনীতি আলাদা করা হয়েছে। যুগের চাহিদায় তা হয়েছে। ফলে এই দান-খয়রাত তার রূপ পাল্টে নিয়েছে অভিনব রাজনৈতিক চেহারা। নাম দেয়া হয়েছে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রনীতি। শোষিত বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নামমাত্র ভর্তুকি দিয়ে তাদেরকে কোনক্রমে বাঁচিয়ে রাখা। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে পুঁজির মালিকানা হস্তান্তরের বৈধতার স্বকৃতি আদায় করা।

সুতরাং আধুনিক ধনতান্ত্রিক রাজনীতির মূল উদ্দশ্যই হল পুঁজি ও তার উৎসকে (শ্রমিকের শ্রম) কব্জা করা। মনে রাখতে হবে সব সম্পদের সেরা সম্পদ হল মানব সম্পদ। তাই সেই সম্পদকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতেই রাজনীতিকে নীতিহীন খেলায় রূপান্তরের এতো আয়োজন। চলছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, সমগ্র বিশ্বজুড়ে। টিভি নামক বোবা বাক্সের সামনে বসে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ আমরা বোকা হওয়ার তুমুল প্রতিযোগিতা করে চলেছি আমি, আপনি এবং আমরা, অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ। এভাবেই প্রতিদিন সুকৌশলে পুঁজির মালিকানা হস্তান্তরিত হয়ে যাচ্ছে সকলের অজান্তে।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন