সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ

ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ

Goutam Ray ইতিহাস বলে, হিন্দু বলে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠী নেই। ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি কোন বিশেষ দুর্বলতাও আমার নেই, আপনার যেমন তথাকথিত হিন্দু ধর্মের প্রতি আছে। একমাত্র মানুষের প্রতিই আমি দুর্বলতা অনুভব করি। তাই মানুষের কথা বলি।

ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণ্যবাদ আলাদা। এটা সম্ভবত আপনার জানা বোঝার বাইরে আছে। সম্প্রদায় এবং সাম্প্রদায়িকতা যেমন আলাদা - এটাও তেমনি। ব্রাহ্মণ হচ্ছে একটা সামাজিক গোষ্ঠী যার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আর ব্রাহ্মণ্যবাদ একটি পুরোপুরি রাজনৈতিক মতাদর্শ। যার দ্বারা মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে একটা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আধিপত্য কায়েম করে। যুগ যুগ ধরে পৃথিবী জুড়ে এই আধিপত্যবাদ কায়েম ছিল, গণতন্ত্র আসার আগে পর্যন্ত। কোন কোন দেশে এখনো তা বজায় আছে। একজন মানুষ হিসেবে আমি এর বিরোধিতা করি। এখানে কোন হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নেই। 

একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি আপনার ভালোবাসা এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি ভয় ও বিদ্বেষ আপনাকে আষ্টেপিষ্ট বেধে ফেলেছে। এই ভয় ব্রাহ্মণ্যবাদীরাই আপনার মধ্যে ঢুকিয়েছে। আমি এটারই বিরোধিতা করি। মানব সভ্যতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে আপনিও এই জায়গায় আসতে বাধ্য হবেন।

ভারতীয়রা ভয় পায় না। তাদেরকে সাময়িক ভুল বোঝানো যায় হয়তো। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে তারা আবার বুঝে নেয় এবং নেবে, কাকে ভোট দেয়া উচিত। 

পৃথিবীর কোন দেশেই সংখ্যালঘুরা সংখ্যালঘু বলেই দাঙ্গা বাধাতে চায় না। এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে যেমন সংখ্যালঘুরা দাঙ্গা বাধায় না, ঠিক তেমনি এখানেও সংখ্যালঘুরা দাঙ্গা বাধায় না। কারণ দাঙ্গা বাঁধলে সংখ্যালঘুদেরই বেশি ক্ষতি হয়। আপনি এটা বুঝতে পারেন না, এটা আমি বিশ্বাস করিনা।

আমাকে হিন্দু বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ করছেন? যে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান এই জাত-বিচারটাই মানে না, তার বিরুদ্ধে আপনি হিন্দু বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলছেন! আপনার এসব বিশ্লেষণ শুনলে আমার মাঝে মাঝে হাসি পায়। আপনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি যে বিদ্বেষ ফুটে বেরোয়, আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিষ্টে থাকা, যারা শিক্ষিত ও শিল্পসাহিত্য জগতের মানুষ বলে নিজেদের পরিচয় দেয়, কারো মধ্যে তা দেখি না। আমি ভাবতে পারি না, এই ধরনের পরস্পর বিরোধী দুটো সত্তা একজন মানুষের মধ্যে একসঙ্গে থাকে, এটা কীভাবে সম্ভব হয়।

আর এই বৌদ্ধ ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বন্দ্বের যে ইতিহাস তা আমার তৈরি করা কোন ইতিহাস নয়। আপনি যাদের হিন্দু বলেন, তারাই এসব কথা বলে গেছেন। লিখে গেছেন তাদের বইতে। সেগুলো পড়েই আমি এই কথাগুলো বলছি। কারণ এ বিষয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন গবেষণা গ্রন্থ নেই। অন্তত আমার জানা নেই। হতে পারে, এসব বই পড়ার সৌভাগ্য/ দুর্ভাগ্য আপনার হয়নি।

যাই হোক, আপনি সম্প্রদায় নিয়ে থাকুন, বিদ্বেষ নিয়ে থাকুন। আমি মানুষ নিয়ে থাকি। একজন মানুষ যদি আরেকজন মানুষের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ায়, আমি তার বিরুদ্ধে বলি। আমি তাকে ঘৃণা করি। প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক দর্শনকে যারা আধুনিক গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করে মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক দর্শনকে নিকৃষ্ট বলে প্রচার করে, সেই দর্শনের অনুসারী একটি বিশেষ শাসকগোষ্ঠীকে আক্রমণকারী বলে, এবং তাদের ধর্মীয় দর্শনের অনুসারী হওয়ায় একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে, তাদেরকে আমি নির্বোধ ছাড়া অন্য কিছু বলি না। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের আইটি সেল-এর লোকজন যদি এই এই মিথ্যা বানোয়াট গল্প নিয়ে ঘৃণা না ছাড়াতেন, আমার এই পোস্ট করতে হতো না। এটা কি আপনি বোঝেন?

অনুগ্রহ করে পারলে একটা সমসাময়িক ভারতীয় ঐতিহাসিক ও তাঁর গ্রন্থের নাম বলুন, যেখানে বক্তিয়ার খলজী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছেন বলে লেখা আছে। তবেই আমি মেনে নেব। তার আগে নয়। অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এনে একজন মানুষকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস বন্ধ করুন। অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথার উত্তর আমি আর আপনাকে দেব না।

ভালো থাকুন। আর পারলে সম্প্রদায় নয়, মানুষকে নিয়ে ভাবুন। বিদ্বেষ নয়, ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে এক সুতোয় বাধার চেষ্টা করুন।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে