মুসলিম ভোট সব তৃণমূল পায়?
Does the Muslim vote get all TMC?
যারা বলে মুসলিম ভোট সব তৃণমূল পায়, তারা জেনে বুঝেই এই মিথ্যাটা বলে।
উদ্দেশ্য, হিন্দু ভোটের সিংহভাগ কৌশলে বিজেপির পক্ষে নিয়ে যাওয়া।
---------xx--------
এটা একমত হওয়া গেল না । সব ভোট না গেলেও গত দুটি বিধানসভা এবং সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে একটা বড় অংশের ভোট রাজ্যের শাসকদলের অনুকূলে গেছে । খুব যে ভালোবেসে গেছে তা হয়তো নয় , কিন্তু গেছে এটা সত্য । আগে এই ভোটটা বামেরা পেতো । এখন আর পায় না ।
আপনার কথা যদি সত্য হতো তাহলে অধীর চৌধুরী ভোটে হারার কথা নয় ।
এবার আপনি বলতে পারেন ভোট দিতে বাধ্য হয় । কেন বাধ্য হয় তার দুটো দিক আছে । প্রথমটা হলো পক্ষপাতদুষ্ট প্রচারে মুসলিম জনমানসে একটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে । আর দ্বিতীয়টা হলো রাজ্যের শাসকদল এমন একটা ইমেজের সৃষ্টি করতে সফল হয়েছে যে তারাই হলো সংখ্যালঘুদের রক্ষাকর্তা। আর সংখ্যালঘুরাও ধর্মনিরপেক্ষ সংখ্যাগুরু জনগণের চেয়ে একটা রাজনৈতিক দলকেই বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করেছে । এটার একটা বিরাট কুফল আছে । তবে সেটা বুঝতে একটু সময় লাগবে ।
-------------
Moti Lal Deb Nath সাথি, আপনার ব্যাখ্যার উত্তর আমি একটু পরে দিচ্ছি। আপনি শুধু বলুন, তাহলে তাদের এমন বলার উদ্দেশ্যটা কী? ভোট মানুষ তাকেই তো দেবে, যাকে সে পছন্দ করে। যাকে দিলে সে নিরাপদ বোধ করে। আমার আপনার মত অনুযায়ী তো দেবে না। তাহলে এখানে হিন্দু মুসলমান আসে কী করে?
মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা অংশ অবশ্যই তৃণমূলকে দেয়। আগে যেটা বামেরা পেত। এই কথার সঙ্গে আমি খানিকটা একমত। কারণ, সবটা কখনোই বামেরা পেত না। তারও আগে এই অংশ কংগ্রেস পেত। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, মুসলিমরা সবাই বামপন্থীদের ভোট দেয় কিম্বা কংগ্রেসকে ভোট দেয়, এমন ভাবে কোনদিন চর্চা হত তখন? দোষারোপ করা হতো? হত না। কেন? ভাবতে হবে। ভাবতে হবে, এখন হয় কেন? তারই উত্তর রয়েছে আমার উপরের মন্তব্যের মধ্যে।
অধীর চৌধুরীর হারার কথা নয়, এর জন্য দায়ী মুসলিম ভোট না পাওয়া? বলছেন? এভাবে ব্যাখ্যা করা যুক্তিযুক্ত? অধীর চৌধুরী কত ভোটে হেরেছেন? মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় তিনি এত ভোট পেলেন কী করে? যদি মুসলিমরা ভোট না দিতেন? দ্বিতীয়ত সেখানে অন্য দলগুলো ভোট পাইনি? তাদের পাওয়া ভোটকে কই হিন্দু ভোট বলে না তো কেউ? পোস্টাল ব্যালটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বিজেপি পেয়েছে। কারা তারা? সবাই তো হিন্দু। কই তখন তো হিন্দু ভোটের কথা উঠে না! হিন্দুরা ভোট দিয়ে বিজেপির মত সাম্প্রদায়িক দলকে পশ্চিমবঙ্গে জায়গা করে দিচ্ছে - এ অভিযোগ তো কেউ করে না! কেন? ধরে নেয়া হচ্ছে, মুসলিমরা সব ভোট তৃণমূলকে দিচ্ছে এবং তাই ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম দলগুলো ক্ষমতায় আসতে পারছে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট ‘হিন্দু ভোট’ নয়, তা সাধারণ ভোট, কিন্তু মুসলমানের ভোট সাধারণ ভোট নয়, ‘মুসলিম ভোট’ বলতে হয় কেন?
মুসলিমরা দুটি কারণে তৃণমূলকে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছে। আপনি বলেছেন। একটিকে বলছেন তৃণমূলের পক্ষপাত দুষ্ট প্রচার। সত্যিই কি পক্ষপাত দুষ্ট প্রচার?
বিজেপি আসার পর সংখ্যালঘু মানুষ কি আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যাগুরু মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন না? সারা দেশের নিরিখে? দলিতদের অবস্থা কি করুণ অবস্থায় ঠেকেনি? আজকের পত্রিকায় রয়েছে গরু পাচার সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে খুন করার কথা। তারা সবাই সংখ্যালঘু। এগুলো সংখ্যালঘুরা দেখতে পান। সংখ্যাগুরুদের চোখ হয় এড়িয়ে যায় অথবা দেখেও না দেখার ভান করেন। এর প্রভাব পড়ে ভোট বাক্সে। ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলো যেদিন শক্তিশালী হবে, সংখ্যালঘুরা সেদিন অধিকাংশই তাদের ভোট দেবে। লিখে রাখুন। এটা শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর সব দেশের সংখ্যালঘুদের এইভাবে ভাবতে হয়। বলা ভালো, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি যখন দুর্বল হয়, তখন তারা এভাবে ভাবতে বাধ্য হয়।
যে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে সংখ্যাগুরু মানুষ ত্যাগ করে, এবং তারা একটি সাম্প্রদায়িক দলকে সমর্থন করে, তখন তা হিন্দু ভোট হয় না! তখন তারা সাধারণ ভোট? আর সংখ্যালঘুরা যখন নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিকে সামনে রেখে কোন সিদ্ধান্ত নেয়, এবং অপেক্ষাকৃত কম সাম্প্রদায়িক, কোন দলকে সমর্থন করে, তখন তারা মুসলিম ভোট হয়ে যায়? তখন তারা আর সাধারন ভোটার থাকে না? কেন? কোন যুক্তিতে? তাদের কারণেই ওই দলটা জিতেছে - এভাবে বলা যায়? ভোট বিষয়টা তো আসলে ইসু ভিত্তিক। তৃণমূলের সামনে থাকা ইস্যুগুলো যাদের উপকারে আসবে বলে ভেবেছে, তারা তাকে ভোট দিয়েছে। এখানে হিন্দু-মুসলমান ভোট হয় কীভাবে? যারা হিন্দু মুসলমান বলে এভাবে ব্যাখ্যা করেন তারা আসলে মানুষকে হিন্দু মুসলমানের ভাগ করে সংখ্যাগুলো ভোটকে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ভোট বক্সে ফেলার লক্ষ্য নিয়েই করে থাকেন।
দ্বিতীয় যুক্তিটা অমান্য করা যায় না। তবে একাজ আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারাও এভাবে ভেবেছে। আর এভাবে ভাবাটা দোষের নয়। কারণ, একটা রাজনৈতিক দল যখন প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে এবং তাতে প্রভাবিত হয়ে একের পর এক সাম্প্রদায়িক হিংসা ছাড়ায়, তখন ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে সংখ্যালঘুদের পাশে এসে দাঁড়াতে হয়। আগে এ কাজ কংগ্রেস করেছে, বামফ্রন্টও করেছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় বামপন্থী নেতাদের রাত জেগে মসজিদ পাহারা দিতে দেখেছি। এটা ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে এবং এটা তাদের দায়ও বটে।
আর সংখ্যালঘুরা এই উদ্ভূত পরিস্থিতির শিকার হয়ে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করছে। আপনি বলছেন এর একটা কুফল আছে। সেটা বুঝতে সময় লাগবে। এই কুফল বোঝার দায়িত্ব একমাত্র সংখ্যালঘুর?
আপনি লিখেছেন, “আর সংখ্যালঘুরাও ধর্মনিরপেক্ষ সংখ্যাগুরু জনগণের চেয়ে একটা রাজনৈতিক দলকেই বেশি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেছে।” তারমানে আপনি বলছেন, তৃণমূল ধর্মনিরপেক্ষ নয়। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম আপনি ঠিক। এবার ভেবে দেখুন তো, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগুরু অংশের জনগণ, তৃণমূলের সংগে থাকা অংশকে বাদ দিলে যারা থাকে, তারা সংখ্যাগুরু জনগণের কত শতাংশ? মোটে ৫ শতাংশ, যারা আসলে বাম কংগ্রেস এর সংগে আছে। কারণ, আপনার মত অনুযায়ী তৃণমূল ধর্মনিরপেক্ষ নয়, আর ভোটের পরিসংখ্যান বলছে প্রায় ৩৯ শতাংশ সংখ্যাগুরু ভোট যা বিজেপি পেয়েছে, তা তো কোনভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ নয়। এবার বলুন, এই ৫ শতাংশের উপর ভরসা করা কতটা যুক্তিযুক্ত বলে ভাববে সাধারণ সংখ্যালঘু মানুষ।
এবারে আসুন, সংখ্যালঘু ভোট তিনভাগে বিভক্ত হয়েছে। তৃণমূল, বাম কংগ্রেস ও আই এস এফ। টিএমসি পেয়েছে ৪৭.৭৬, বিজেপি ৩৮.৭৩ বাম কংগ্রেস পেয়েছে ৫ শতাংশ। রাজ্যে বিজেপি ছিল না। তাহলে এই ৩৮ শতাংশ ভোট কার? বাম কংগ্রেস-এর। এবং তারা সবাই হিন্দু। এদের বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো নিজের দিকে ফেরাতে পারছে না। এটা একান্তই তাদের ব্যর্থতা। সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের ভোট দিচ্ছে এই কথা বলা আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা।
তাহলে কি আমরা চাইছি ৩৯ শতাংশ ভোট বিজেপির যায় যাক। সংখ্যালঘু ভোটটা আমাদের আসুক। তাতে বিজেপি যেতে জিতুক। আর জিতলে সেটা মানুষের ভোটে জেতা বলব। কিন্তু সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলে গেলেই সংখ্যালঘুরা কেন তৃণমূলকে দিল - এই প্রশ্ন তুলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকবো? এটা এক ধরনের ভন্ডামি। মানুষ এই ভন্ডামি ধরতে পারে। আমাদের দুর্বলতা মানুষের এই ভন্ডামি ধরার যে ক্ষমতা আছে, তা আমরা বুঝতে পারি না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন