ধর্ষণের কারণ
ধর্ষণ হচ্ছে একটি মানসিক ও শরীরবৃত্তীয় ব্যাধির সামাজিক রূপ। এর ভিত্তি হচ্ছে আর্থসামাজিক বৈষম্য। তাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা না বলে, শুধু কঠোর শাস্তির কথা বললে, ধর্ষণ বন্ধ হবে না।
সমাজের সবাই ধর্ষক নয়। তবে, কেউ কেউ ধর্ষক। ধর্ষকের কোন লিঙ্গভেদ হয় না। দৈহিক চাহিদা নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই বর্তমান। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত। তাই একে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সমাজ সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে। যে এই নিয়ন্ত্রণের বলয়ে নিজেকে সুচারু রূপে আবদ্ধ রাখতে শিখেছে, তাকে আমরা সভ্য বলি। যে শেখেনি, তাকে অসভ্য এবং ধর্ষক বলি।
সুতরাং স্ত্রী পুরুষ উভয়ই ধর্ষক মানসিকতা সম্পন্ন হতে পারে। কে কতটা ধর্ষক হয়ে উঠবে, তা নির্ভর করে তার আর্থসামাজিক অবস্থা ও ব্যবস্থার ওপর।
এই ধর্ষক মানসিকতা প্রধানত দু’ভাবে প্রকাশ পায়। একটি লোকচক্ষুর অন্তরালে, গোপনে। হিসেব-নিকেশ করে। অন্যটি হয় বেহিসেবী ও বেপরোয়াভাবে। লোক লজ্জার ভয় কিংবা গোপনীয়তার ধার না ধেরেই। যারা বেপরোয়াভাবে এবং বেহিসেবী হয়ে এই কাজ করে, সভ্য সমাজ তাকেই ধর্ষক বলে দেগে দেয়। এবং গেল গেল রব তোলে। আর যে হিসেব-নিকেশ করে গাঁটের কড়ি খরচ করে এ কাজ করে, তারা ছাড় পেয়ে যায়। সমাজে তারা ‘সভ্য মানুষ’ হিসেবে সসম্মানে ঘুরে বেড়ায়।
ধর্ষনের সংগে জোর বা জবরদস্তির সম্পর্ক রয়েছে। দুজনের সহমতের ভিত্তিতে দুটি নারী পুরুষ মিলিত হলে তাকে ধর্ষণ বলা যায় না। এখন প্রশ্ন হল এই সহমত বিষয়টা কীভাবে সংজ্ঞায়িত হবে? এই সহমতের এক এবং অদ্বিতীয় শর্ত হল কোন রকম উদ্দেশ্য ও শর্ত ছাড়াই কেবলমাত্র ভালোবাসা ও ভালোলাগার কারণে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ। এর বাইরে অন্য কোন শর্ত সাপেক্ষে যদি এই এই সহমত প্রকাশ পায়, তবে সেটাও এক ধরণের ধর্ষণ। অর্থ বা অন্য কোন কিছুর প্রলোভনে কাউকে রাজি করানোকে সহমত বলে না। সুতরাং যারা এভাবে তার যৌন ক্ষুধাকে মেটানোর চেষ্টা করে তা ধর্ষক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ, প্রলোভন এখানে জবরদস্তির একটি বিকল্প অস্ত্র বা হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। যে হিসেবি এবং গাঁটের কড়ি গোনার মত সক্ষমতা আছে, সে এই পথ বেছে নেয়। আমরা তাকে ছাড় দিই। ‘সভ্য মানুষ’ হিসাবে সমাজে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার প্রকারান্তরে স্বীকৃতি দেয়। আর যার নেই, সে জবরদস্তির পথ বেছে নেয়। আমরা তাকে ধর্ষক বলি, রে রে করে তেড়ে যাই।
অর্থাৎ জবরদস্তি দুই শ্রেণির মানুষ করে থাকেন। একশ্রেণি অপর্যাপ্ত ধন সম্পদের অধিকারী হলে। অন্য শ্রেণি পর্যাপ্ত সম্পদ থেকে নিদারুণভাবে বঞ্চিত হলে।
নারীরা কীভাবে ধর্ষক?
নারীদের ধর্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। ফলে সে একজন পুরুষের তুলনায় তার ধর্ষক মানসিকতাকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়। এই প্রতিবন্ধকতার দুটো দিক আছে। একটি সামাজিক, যা পুরুষতান্ত্রিক মানুষের দ্বারা সৃষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত। সমাজ তাকে সভ্য সমাজের নিকৃষ্ট জীব হিসেবে চিহ্নিত করে দেবে এবং তার পক্ষে সামাজিকভাবে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্যটি প্রকৃতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
চলছে......!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন