সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কাশ্মীর ও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা

"কাশ্মীর কোনওকালেই পাকিস্তানের অংশ ছিল না, হবেও না। পাকিস্তানকে এই সত্যিটা স্বীকার করার পরামর্শ দিলেন ইসলামীয় পণ্ডিত ইমাম মহম্মদ তাওহিদি। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি বলেন, কাশ্মীর কখনই পাকিস্তানের অংশ ছিল না। কাশ্মীর কখনও পাকিস্তানের অংশ হবে না। পাকিস্তান ও কাশ্মীর-- উভয়ই ভারতের অংশ। হিন্দু থেকে ধর্মান্তর হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। তাতে আসল সত্যটা বদলে যায় না যে, গোটা অঞ্চলটাই হিন্দু ভূমি। সত্যি বলতে কী, ভারত ইসলামের থেকেও পুরনো, পাকিস্তান কোন ছার.. সৎ হন।" সূত্র : আনন্দবাজার ওয়েব পোর্টাল।
ইমাম মহম্মদ তাওহিদি ঠিকই বলেছেন। কাশ্মীর পাকিস্তানের নয়। একই অর্থে ভারতেরও নয়। অর্থাৎ উনি যে অর্থে এই কথা বলেছেন, সেই অর্থে ভারত বর্ণ হিন্দুদেরও(আর্য) নয়। এটা ভারতের আদিম অধিবাসীদের দেশ। সেখানে হিন্দু-মুসলমান নেই। (এরা কেউ বিদেশ থেকে এসে উপনিবেশ গড়েছেন, কেউ ধর্মান্তরিত হয়েছেন।) আছে সাঁওতাল, কোল, ভিল, দ্রাবিড় প্রভৃতি অনার্য জনজাতি।
ভারতীয়, পাকিস্তানি, ফরাসি, ইংরেজ ইত্যাদি জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা আধুনিক যুগের ইউরোপীয় কনসেপ্ট। তাই আধুনিক যুগের আগে ভারতীয় জাতিরাষ্ট্রের ধারণা অনৈতিহাসিক। আর জাতি রাষ্ট্রের এই কনসেপ্ট যদি মানি (এটাই পৃথিবী জুড়ে মান্য কনসেপ্ট) তবে, কাশ্মীর পাকিস্তানেরও নয়, ভারতেরও নয়, কাশ্মীর কাশমিরীদের।
তবে, অন্যদিক থেকে বিচার করলে কাশ্মীরে ভারতের অধিকারটা বৈধ। তা এই কারণে যে, কাশ্মিরীরা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন স্বইচ্ছায়, চুক্তির মাধ্যমে। আর পাকিস্তানের অধিকার অবৈধ। কারণ, তারা তা জোর করে দখল করেছে। জাতিরাষ্ট্রের ধারণা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত হওয়ার পর এই প্রবণতা সমর্থনযোগ্য নয়।
প্রসঙ্গত মনে রাখতে হবে, হিন্দু একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের পরিচয় বহন করে। এর সাথে ধর্মের কোন যোগ নেই। যাঁরা ভারতীয় উপমহাদেশের (সিন্ধুনদের পূর্বদিকের) অধিবাসী তাঁরা সবাই হিন্দু জাতি নামে পরিচিত। আর এজন্যই ভারতের আর এক নাম হিন্দুস্তান। দেশভাগের আগে সমগ্র উপমহাদেশ এই নামেই পরিচিত হয়েছিল।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হিন্দু শব্দটি উপমহাদেশের একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী (যারা বৈদিক ধর্মের অনুসারী হিসাবে ইতিহাসে খ্যাত) হাইজ্যাক করে তাতে ধর্মীয় লেবেল সেঁটে দিয়েছেন। সমস্যাটা জটিল হয়েছে এখানেই। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে হিন্দু জাতিসত্ত্বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মপ্রাণ অংশের কাছে অচ্ছুত হয়ে পড়েছে।
আসলে ভারতীয় উপমহাদেশ নামের এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী সব মানুষই হিন্দু। তিনি যে ধর্মের মানুষই হন, তাঁর পরিচয় তিনি হিন্দু আর তার বাসভূমি হিন্দুস্তান। যাঁরা নিজেদের হিন্দুধর্মালম্বী বলে দাবি করে, তাঁরা আসলে সনাতন ধর্মাবলম্বী। আর্যদের এই ধর্ম যা বৈদিক ধর্ম নামেও পরিচিত, তা হিন্দুধর্ম বলে চালানো হয়। এটা ঐতিহাসিক ভাবে ভুল। অর্থাৎ হিন্দু কোনও ধর্ম নয়।
এককথায় ভারতে বসবাসকারী সবাই ভৌগোলিকভাবে হিন্দু, কিন্তু তাঁদের কেউ বৈদিক ধর্মাবলম্বী(যেটা এখন হিন্দু বলে চালানো এবং চাপানো হয়), কেউ ইসলাম ধর্মাবলম্বী, কেউ শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ইত্যাদি।
স্বাধীনতা উত্তরকালে, অর্থাৎ উপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দেশভাগের মধ্যে দিয়ে এখানে তিনটি নতুন জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। এক, হিন্দুস্তান বা ভারত, দুই পাকিস্তান এবং তিন বাংলাদেশ। আর এই ঐতিহাসিক বাধ্যবাধকতার কারণেই সবকটা জাতিরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ অনিবার্য ভাবে রয়ে গেছেন। কোন বিশেষ ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটানো যায়নি। যদিও বিভিন্ন সময়ে ধর্ম-রাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা হলেও তা নিশ্চিত ও নির্দিষ্ট রূপ নিতে পারেনি। আর সে চেষ্টা যদি কেউ করে তা অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
----------------

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন