সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্বামীজির সমাজ দর্শনের মূল কথা

স্বামীজির সমাজ দর্শনের মূল কথা

The-essence of Swamiji's social philosophy

আপনি কি স্বামীজির ভক্ত? বেশ। তাহলে তো স্বামীজির সমাজ ও ধর্ম-দর্শনকে শ্রদ্ধা করেন। তাই তো? তাহলে আগামীতে ভারতে শূদ্রদের আধিপত্য কায়েম হবে। মানতে পারবেন? এটা তাঁর ভবিষ্যৎবাণী এবং তাঁর একান্ত চাওয়া।

আপনি কি সেই চাওয়াকে পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন? কী? উত্তর দিতে সমস্যা হচ্ছে?

তাহলে স্বামীজির 'বর্তমান ভারত' পড়ুন।

বর্তমান ভারতে স্বামী বিবেকানন্দ বৈদিক যুগ থেকে ব্রিটিশ শাসন পর্যন্ত ভারতের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস পর্যালোচনা করেছেন। এই পর্যালোচনার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন, বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ পুরোহিত, পরে শক্তিশালী যোদ্ধা বা ক্ষত্রিয়রা এবং সবশেষে বৈশ্যরা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ইতিহাসের এই ব্যাখ্যা শেষে তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, চক্রাকার পথে বৈশ্যের পর এবার ভারতীয় সমাজে শূদ্রের জাগরণ ঘটবে এবং তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। শুধু হবে না, তার ভাবনায় এবং চাওয়ায় - এটা হতে বাধ্য।

এভাবে সমাজের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের হাতেই ভবিষ্যত ভারতীয় সমাজ গড়ে উঠবে - এটাই ছিল তার ভবিষ্যৎবাণী।

তিনি এই গ্রন্থে তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেই তুলে ধরেছেন যে, প্রকৃত স্বাধীনতার অর্থ হল সমাজের এই প্রান্তিক মানুষের অধিকার ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।

এবারে ভাবুন তো, আপনি কি এভাবেই ভাবেন এবং প্রাত্যহিক জীবনে এটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই কাজ করেন?

যদি উত্তর 'হ্যাঁ' হয়, তবে আপনি স্বামী বিবেকানন্দের প্রকৃত ভক্ত। আর উত্তর 'না' হলে, ভন্ড ভক্ত।

যদিও যারা ভন্ড তারা আজ প্রকৃত ভক্ত সাজার চেষ্টায় ব্যস্ত আর প্রকৃত ভক্ত যারা তারা অন্ধ হয়ে বসে আছেন। বসে আছেন এই ভেবে যে, সবই স্বামী বিবেকানন্দের অলৌকিক কৃপায় তা এমনি এমনিই ঘটে যাবে। আমাদের কিছুই করতে হবে না, গৃহের নিভৃত কোণে বিবেকানন্দের ছবিতে ধুপ ধানা ধোনা আর ফুলের পাপড়ি ছেটানো ছাড়া।

অন্যদিকে দেখুন, ভন্ডরা স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু করে দিয়েছেন। যেন-তেন-প্রকারণে স্বামীজিকে ব্যবহার করে সুবিধাভোগী উচ্চবর্গের মানুষেরা ব্রাহ্মণ্যবাদী ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে তৎপর হয়ে উঠেছে। ক্রমশ স্বামীজি এখন তাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ঢাক ঢোল পিটিয়ে স্বামীজীর ভজনা করছেন আর স্বামীজীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পরিবর্তে, তাকে সামনে রেখেই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন বেশ সুচারু কৌশলে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যরা পরস্পরের হাত ধরাধরি করে শুদ্রদের মেরুদন্ড ভাঙ্গার খেলায় মেতে উঠছে।

যে সম্প্রদায়কে বিদেশীরা হিন্দু বলে ঘৃণা করতো, শূদ্র জাগরণের ভয়ে নিজেদেরকে সেই হিন্দু (যারা আসলে শূদ্র, এদেশের মূলনিবাসী) নামে পরিচয় দিতেও তাদের দ্বিধা নেই। আসলে নিজেদের হিন্দু পরিচয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে এবং হিন্দুর নেতা হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে বৃহৎ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যাদেরকে আমরা শূদ্র বলে জানি, তাদেরকে ভাঙ্গা ও নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল হাতে নিয়েছে। স্বামীজীর ভক্তরা কি তা বুঝতে পারছেন?

এই ভাঙনের শুরু কিন্তু আজ নয়, যুগ যুগ ধরে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী ঘটে চলেছে এই ঘটনা। ঘটছে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ইতিহাসের পাতা খুলুন, যীশু খ্রীষ্ট, হযরত মুহাম্মদ, গৌতম বুদ্ধের দিকে তাকান এবং ইতিহাস পর্যালোচনা করুন, দেখবেন একই খেলার শিকার এই মহামানবেরাও। 

কী বলছে মানব সভ্যতার ইতিহাস? বলছে, যখনই প্রান্তিক সমাজের মানুষ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, তখনই ছদ্মবেশে সুবিধাভোগী উচ্চবর্গের মানুষ তাদের নেতৃত্ব দখল করেছে এবং তাদের আন্দোলনকে বিপথগামী করেছে। একই রকম ভাবে, কোন মনীষী বা মহামানব (অতিমানব নয়, কারণ, অতি মানব বলে কিছু হয় না) যখন এই প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার ও সুরক্ষার কথা বলেছেন,সেই মানুষগুলো দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন, তাদের নিয়ে সংগঠন গড়ে তুলেছেন এবং তাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টাকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন, তখনই সেই সংগঠনের মধ্যে ছদ্মবেশে ঢুকে গেছে সুবিধাভোগী উচ্চবর্গের মানুষের প্রতিনিধি। এভাবে নেতৃত্ব দখল করে সেই সংগঠনকেই একসময় হয় পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে, না হয় বিপথগামী করা হয়েছে। 

এভাবেই ইসলামিক রিভোলিউশনারি রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইসলামিক পারিবারিক ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে, যীশু খ্রীষ্টের বৈপ্লবিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা 


তাই পৃথিবী আজও সাম্য ও স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। 

তারা, বুঝছে না ভাই প্রান্তিক যারা।

পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানতে এখানে ক্লিক করুন

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে