সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্মের সঙ্গে গণতন্ত্র ও অসাম্যের সম্পর্ক

The-relationship-between-religion-and-democracy-and-inequality

যে দেশের মানুষ যত বেশি ধর্মের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস অবলম্বন করে বাঁচে সেদেশের গণতন্ত্র তত দুর্বল হয় এবং রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য তত বেশি প্রকট হয়ে ওঠে।

আসলে ধর্ম ও অন্ধ বিশ্বাস পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে চলে। বলা ভালো, ধর্মের যারা ধারক ও বাহক বলে নিজেদের দাবি করে, তারাই এই দুটোকে পাশাপাশি রেখে দেয়। এই রাখার পিছনে তাদের প্রধানত দুটো উদ্দেশ্য কাজ করে। ১) আর্থিক এবং ২) রাজনৈতিক।

ধর্মের ভিত্তি হচ্ছে একমাত্র বিশ্বাস। কারণ, বিশ্বাস বাদ দিলে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের আর কিছু থাকে না। কেননা, জাগতিক সব কিছুকে যুক্তি বুদ্ধি ও তথ্য দিয়ে বিচার করা সম্ভব। কিন্তু ঈশ্বেরর ধারণা এভাবে বিচার করা যায় না। বিচার করা যায় না তার বড় কারণ, ধর্ম দর্শন অনুযায়ী স্বয়ং ঈশ্বর-ই এ বিষয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করেন। তার স্পষ্ট বক্তব্য, তাঁকে নিশর্ত বিশ্বাস করতে হবে। কোনো প্রশ্ন বা সংশয় প্রকাশ করা যাবে না।

এই বিশ্বাসের দর্শন সবচেয়ে সহজ একটা পন্থা যা দিয়ে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ধর্মের এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর আদি লগ্ন থেকে এক শ্রেণির মানুষ তাদের আর্থিক লাভালাভকে নিশ্চিত করে আসছেন।

অবাক করা বিষয় হল, পৃথিবীর বয়স কয়েক কোটি বছর হলেও এই অনুৎপাদক সেক্টরে সব চেয়ে বেশি সম্পদ গচ্ছিত হয়ে পড়ে আছে। অথবা তা কেবলমাত্র কিছু মানুষের ভোগের পিছনে ব্যয় হচ্ছে।

এর ফলে একদিকে কিছু মানুষের কাছে ধর্ম একটি বিনা পুঁজির ব্যবসায় পরিণত হয়ে গেছে। এখানে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। সুতরাং আর্থিক উদ্দেশ্য পূরণে এর চেয়ে সহজ ও নিরাপদ বিকল্প দ্বিতীয়টি নেই। ফলে পৃথিবীর বিশাল সংখ্যার মানুষ কৌশলে এই বিশ্বাসের ক্ষেত্রটিকে সাংগঠনিক চেহারা দিয়ে বিশ্বাসের নামে অন্ধত্বের চাষ করে চলেছেন।

অথচ পৃথিবীর বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম গ্রন্থে যে ঈশ্বেরের কথা জানা যায়, তার একমাত্র চাওয়া হল তাঁকে বিশ্বাস করা এবং সৎকর্ম করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক ক্ষমতার কারবারিরাও ধর্মের নামে অন্ধ বিশ্বাসের চাষ করে চলেছেন সেই আদিকাল থেকে। রাজনৈতিক ক্ষমতা যেহেতু জীবনের সব ক্ষেত্রকে (সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণ করার মূল হাতিয়ার  সেহেতু তাঁকে কব্জা করার জন্য ধর্মকে অন্ধত্বের মোড়কে ঢেকে নিয়ে তাকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ধান্ধাবাজ রাজনীতিকরা ব্যবহার করে চলেছেন। এরা জানেন, অন্ধত্ব ছাড়া কেউ জীবন দিয়ে নেতাদের অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক সুবিধা করে দেওয়ার কাজে ঝাপাবে না। সুতরাং সবচেয়ে সহজ বিশ্বাসকে তারা অন্ধত্বের জটিল ও কঠিন আবরণে মুড়ে দিতে সদা ব্যস্ত।

আধুনিক সময়ে শাকের ওপর বোঝার আঁটির মত, কর্পোরেট পুঁজির নজর পড়েছে। তারাও দেখেছে এই ধর্মের নামে অন্ধত্বকে শক্তিশালী করতে পারলে তাদেরও কেল্লা ফতে। সুতরাং পরিকল্পনা মাফিক তারা তাদের অধিনে থাকা মিডিয়ার মাধ্যমে অন্ধত্বের চাষ করছেন এবং তাকে হাতিয়ার করে বিষ ছড়াচ্ছেন। তার সাথে পুঁজি বিনিয়োগ করে ধর্মান্ধতার পুজারিদের রাজনৈতিক ক্ষমতায় বসিয়ে দেশের সম্পদের দখল নিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলতে এই প্রবণতা বর্তমানে ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে। ধর্ম ও রাজনিতিকে এক হাঁড়িতে ফেলে অদ্ভুত এক আধুনিক ঘ্যাট বানিয়ে মানুষকে গেলাচ্ছে। আসলে আর্থিক শোষণকে সর্বোচ্চ মাত্রা নিয়ে যাওয়ার এটা একটা নিকৃষ্টতম কৌশলমাত্র। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি অনেকদিন আগেই এই কৌশল ত্যাগ করেছে। আর আমরা নতুন করে শুরু করছি।

সুতরাং ধর্মের সঙ্গে গণতন্ত্র ও অসাম্যের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা পড়ছে।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন