অভিজিৎ গাঙ্গুলি ও আধুনিক বিচার ব্যবস্থার সংকট
আপনি যদি দাবি করেন, আপনি একজন আধুনিক মানুষ, তবে তা শুধু মুখে বললেই হবে না। আপনাকে আধুনিকতার কিছু ধারণাকে নিজ চিন্তায় ধারণ করতে হবে এবং তাকে মেনে চলার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
আধুনিকতার এই ধারণার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, যুক্তিবাদী হওয়া, বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া, মানবতাবাদী ও সাম্যবাদী হওয়া। এবং এই ধারণাগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা রাষ্ট্র, সমাজ কিংবা ধর্ম দর্শন ও অর্থ ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখা। সেই সঙ্গে এই ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নিজের দায়বদ্ধতাকে স্বীকার করা। শুধু স্বীকার নয়, এই দর্শনকে মানব সমাজের কল্যাণে প্রয়োগ করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। কারণ, এগুলোর সমর্থক হওয়া ও তাকে সুরক্ষা দেওয়ার অঙ্গীকারের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতা তথা মানব মুক্তির মূল মন্ত্র। তাই মানব মুক্তির আর এক নাম হল আধুনিকতা।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, আধুনিকতার সঙ্গে নগ্নতা কিম্বা স্বেচ্ছাচারিতার কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে কেবলমাত্র মানব কল্যাণের। তাই, যা মানুষের কল্যাণ করে, তা-ই আধুনিকতা।
এখন প্রশ্ন হল এই মানব মুক্তির সামনে সবচেয়ে বড় হুমকি কী? এক কথায় এর উত্তর হল স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে বা বলা ভালো বিরত থাকতে বাধ্য করতে পারে একমাত্র নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা। আধুনিক গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসাবে যে চতুর্থ স্তম্ভের কথা বলা হয় তার সর্বোচ্চ স্থানে আছে বিচার ব্যবস্থা। কারণ এই ব্যবস্থা অন্য তিনটি ব্যবস্থা ফেল করলে মানুষকে বিচার ব্যবস্থার দ্বারস্থ হতে হয়। এবং প্রয়োজনে এই বিচার বিভাগ শাসন ও আইন বিভাগকে প্রশ্ন করতে পারে এবং প্রয়োজনে আইন বিভাগের তৈরি আইনকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এই ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে। কারণ তা তাকে দেয় দেশের সংবিধান। সংবিধান ছাড়া বিচার বিভাগ কারও কাছে মাথা নত করে না। করতে বাধ্য নয়।
কিন্তু মুশকিল হল, বিচার ব্যবস্থার এই ক্ষমতা কতটা কার্যকরী হবে তা নির্ভর করে বিচারকের সততা, নিরপেক্ষতা যুক্তিবাদী চিন্তা চেতনার প্রতি সম্মান জানানো ইত্যাদি নানা শর্তের ওপর। অন্ধ আইনের অনুসারী হওয়া ও এই আইনের যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেকে রাজনীতি নিরপেক্ষ থাকার অবিচল সংকল্পের ওপর। তাকে হতে হয় নির্ভীক ও নির্লোভ। বিচাপতি হওয়া এবং অবসর নেওয়ার পর তার রাজনৈতিক মতামত নিতান্ত ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখার মানসিক জোর। তাঁর ভাবনা ও অভিজ্ঞতার কথা তিনি লিখতে পারেন কিন্তু রাজনীতিতে কোনভাবেই নয়।
আইনের শাসন হল আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিশ্বাস কখনও আইন হতে পারে না। কারণ বিশ্বাস ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম অনুসরণকারী মানুষের কাছে ভিন্ন ভিন্ন চেহারায় উপস্থিত হয়। কিন্তু আইন মূলত যুক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়। যুক্তি বিজ্ঞানের প্রয়োগ করে যুক্তির দুর্বলতা দূর করে তাকে সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলা যায়। একজন বিশ্বাসী মানুষ একাজ কখনই নিরপেক্ষভবে করতে পারেন না। বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত মানুষ মাত্র ভীরু প্রকৃতির হয়। তাই তার পক্ষে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে পারেন না।
“সিবিআইয়ের গা-ছাড়া মনোভাব দেখলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো - ২৫ জুলাই, ২০২৩
“...শিক্ষকদের এই অবস্থা? স্কুল চালাতে না পারলে আদানিকে বেচে দিন।" - ৩১ জুলাই, ২০২৩
দরকার পড়লে যোগী আদিত্যনাথের থেকে বুলডোজার ভাড়া করুন।" - ২৮ জুলাই, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন