মুসলমান সমাজের পিছিয়ে পড়ার কারণ
বাবা শেখ মীরান ছিলেন কৃষক, মা সাইতুন বিবি গৃহবধূ। ছোট থেকেই লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলেন নিগার। ছবি : আনন্দবাজার পত্রিকা |
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
কাজী নজরুল ইসলামের এই ভুবন বিখ্যাত উক্তিটি আমরা পথে-ঘটে, মাঠে-ময়দানে, সভা-সমাবেশে গলা ফুলিয়ে গর্ব ভরে আওড়াই। আবার সেই আমরাই ঘরের মেয়েকে শুধুমাত্র একজন ভালো জামাই পাওয়ার লক্ষ্যে, যেটুকু লেখাপড়া করানো দরকার বলে মনে করি, শুধুমাত্র সেটুকুই পড়াই বা শেখাই। পারি আর না পারি, ছেলের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা এভাবে ভাবি না। এটা একটা ভয়ংকর রকমের বৈষম্যমূলক ভাবনা। এই ভাবনা মুসলিম সমাজ এবং মুসলিম ব্যক্তি মানসের বিকাশের পরিপন্থী।
যে মুসলমান সমাজ এভাবে ভাবে, সেই সমাজ এগোবে? অসম্ভব! অর্ধেক আকাশকে অন্ধকারে ঢেকে রেখে, আলোর পূর্ণ জ্যোতির প্রভাব আকাশ জুড়ে (মুসলিম সমাজ জুড়ে) অনুভব করা যায় না।
সবচেয়ে বড় কথা, এতে মেধার অপচয় হয়। ফলে এই সমাজই শুধু নয়, দেশ বঞ্চিত হয় এই সমাজের মধ্যে থাকা সঞ্চিত মেধার আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ থেকে।
এবার ভাবুন।
১) কৃষক বাবা যদি শরিয়তি বিধান মেনে ধর্ম শিক্ষার জন্য খারিজি মাদ্রাসায় পড়াতেন এবং একজন পরহেজগার জামাইয়ের উপযুক্ত পরহেজগার স্ত্রী তৈরির লক্ষ্যে বোরখায় মুড়ে মানুষ করতেন, স্বামী সেবার লক্ষ্যে, তবে আজ একটি পরিবার কী কী হারাতো? দুই পুত্র কন্যার জন্য যে সুযোগ তিনি তৈরি করতে পেরেছেন, তা কি সম্ভব হত?
২) দেশ কি এই মেধাবী ছাত্রীর সেবা থেকে বঞ্চিত হত না?
৩) ভাবুন, এই নারী একজন পুরুষের তুলনায় কোথায় পিছিয়ে? যদি পিছিয়ে না থাকে, তবে তাকে বাবা মায়ের সম্পদের ওপর সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত করি কোন্ যুক্তিতে?
৪) এই নারী হিজাব বা বোরখার কোনটাই ব্যবহার করেননি, তথাকথিত ‘নারীর আব্রু’ রক্ষার নামে। তাতে কি সত্যিই তাঁকে অশ্লীল দেখাচ্ছে?
৫) যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই দেখাচ্ছে, তবে তো তিনি কয়েক দশক ধরে ‘আল্লাহর বিধান’ মানছেন না। তাতে কি তিনি আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন? না। যদিও হিজাব বা বোরখায় নারীর শরীর মুড়ে রাখার কোন বিধান আজও কোরআন শরীফে আপনি সরাসরি খুঁজে পাবেন না।
আসলে, একটা পরিবারের স্বামী-স্ত্রী উভয়ই সমমানের শিক্ষার অধিকারী না হলে উভয়ের মধ্যে মতপার্থক্য চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এই মতপার্থক্য
১) পারিবারিক শান্তি ও সংহতি নষ্ট করে।
২) সন্তানদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, তারা বুঝতে পারে না — কে সঠিক, বাবা? না মা? যার পরিণতি হল, তারা বিভ্রান্ত হয়ে বিপথগামী হয়।
৩) প্রতিবেশী সহনাগরিকদের (মুসলিম ছাড়া) থেকে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ে। কারণ, শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণে একজন মুসলিম নারী চাকরি বা স্বাধীনভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করে পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যকে উচ্চতর মাত্রায় পৌঁছে দিতে কোন ভূমিকা নিতে পারেন না। একজন নারীকে এভাবে গৃহে সীমাবদ্ধ করে ফেলার অর্থ হল, একটা পরিবারকে আর্থিক সচ্ছলতা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা রাখার ক্ষমতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং মানব সম্পদ হিসাবে তার যে শক্তি আছে, তার শুধু অপচয় নয়, তাকে অসম্মান করা।
ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান - সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রতিবেশী সহ-নাগরিকদের তুলনায় এই মুসলিম পরিবার শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে। কারণ, আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা তাদের তুলনায় অর্ধেক হয়ে যায়।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, একজন নারী যদি চাকরি বা ব্যবসায় যুক্ত হয়, তবে সংসার সামলাবে কে? ছেলেমেয়েদের মানুষ করবে কে? প্রশ্নটা খুবই অপরিণত মস্তিষ্কের ফসল। কারণ, তাহলে আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর আগে দিতে হবে — নিগার শাহজির ছেলেমেয়েদের মানুষ করল কে?
আসলে সংসারটা একা নারীর নয়, দুজনেরই। তাই নারীবাদী বা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা সরিয়ে দুজনকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। যাবতীয় দায়িত্ব দু'জনে সামর্থ্য অনুযায়ী ভাগ করে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। মুসলিমদের মধ্যেও এইভাবে চলার উদাহরণ রয়েছে। অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে তো রয়েছেই।
তাই ধর্মের নামে মেয়েদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা একটি সামাজিক ও মানবিক অপরাধ। আর এই অপরাধই মুসলিম সমাজের পিছিয়ে পড়ার একমাত্র না হলেও অন্যতম প্রধান কারণ।
👁️🗨️ লেখাটা এখনও শেষ হয়নি। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন।
--------xx-------
🙋 পাঠকের প্রতিক্রিয়া দেখুন ফেসবুকে
মুসলিম সমাজে এত জলসা, ঈদের গেট ও অনুষ্ঠান, মহরমের অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ অর্থব্যয় হয়ে থাকে, সেটা কী মুসলিম WBCS, WBBPS, IAS, IPS তৈরীর জন্য কোচিং স্কুল তরী করা যেতে পারে না.........???
উত্তরমুছুনআপনার সঙ্গে আমি সম্পূর্ন সহমত। আসুন আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি।
মুছুনআমার এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন। সাথি।
উত্তরমুছুনhttps://alirprobondho.blogspot.com/2021/08/bhagya-o%20muslim-mnostatta-ebong%20islam-dhrmo.html