সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুসলমান সমাজের পিছিয়ে পড়ার কারণ

মুসলমান সমাজের পিছিয়ে পড়ার কারণ

বাবা শেখ মীরান ছিলেন কৃষক, মা সাইতুন বিবি গৃহবধূ। ছোট থেকেই লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলেন নিগার। ছবি : আনন্দবাজার পত্রিকা
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
কাজী নজরুল ইসলামের এই ভুবন বিখ্যাত উক্তিটি আমরা পথে-ঘটে, মাঠে-ময়দানে, সভা-সমাবেশে গলা ফুলিয়ে গর্ব ভরে আওড়াই। আবার সেই আমরাই ঘরের মেয়েকে শুধুমাত্র একজন ভালো জামাই পাওয়ার লক্ষ্যে, যেটুকু লেখাপড়া করানো দরকার বলে মনে করি, শুধুমাত্র সেটুকুই পড়াই বা শেখাই। পারি আর না পারি, ছেলের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা এভাবে ভাবি না। এটা একটা ভয়ংকর রকমের বৈষম্যমূলক ভাবনা। এই ভাবনা মুসলিম সমাজ এবং মুসলিম ব্যক্তি মানসের বিকাশের পরিপন্থী।

যে মুসলমান সমাজ এভাবে ভাবে, সেই সমাজ এগোবে? অসম্ভব! অর্ধেক আকাশকে অন্ধকারে ঢেকে রেখে, আলোর পূর্ণ জ্যোতির প্রভাব আকাশ জুড়ে (মুসলিম সমাজ জুড়ে) অনুভব করা যায় না।

সবচেয়ে বড় কথা, এতে মেধার অপচয় হয়। ফলে এই সমাজই শুধু নয়, দেশ বঞ্চিত হয় এই সমাজের মধ্যে থাকা সঞ্চিত মেধার আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ থেকে।

শনিবারই সূর্যের রহস্যভেদের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে ইসরোর যে সৌরযান আদিত্য-এল১, তার সুতো বাঁধা আছে এক নারী বিজ্ঞানীর হাতে। আর সেই নারীর নাম নিগর শাহজি। বাবা শেখ মীরান ছিলেন একজন মুসলিম কৃষক। মা সাইতুন বিবি, একজন গৃহবধূ। দুই সন্তান আছে তাঁর। নিগারের দুই সন্তানই কৃতী। পুত্র নেদারল্যান্ডসে গবেষণা করছেন। কন্যা চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করছেন স্নাতকোত্তর স্তরে।

এবার ভাবুন। 
১) কৃষক বাবা যদি শরিয়তি বিধান মেনে ধর্ম শিক্ষার জন্য খারিজি মাদ্রাসায় পড়াতেন এবং একজন পরহেজগার জামাইয়ের উপযুক্ত পরহেজগার স্ত্রী তৈরির লক্ষ্যে বোরখায় মুড়ে মানুষ করতেন, স্বামী সেবার লক্ষ্যে, তবে আজ একটি পরিবার কী কী হারাতো? দুই পুত্র কন্যার জন্য যে সুযোগ তিনি তৈরি করতে পেরেছেন, তা কি সম্ভব হত?
২) দেশ কি এই মেধাবী ছাত্রীর সেবা থেকে বঞ্চিত হত না?
৩) ভাবুন, এই নারী একজন পুরুষের তুলনায় কোথায় পিছিয়ে? যদি পিছিয়ে না থাকে, তবে তাকে বাবা মায়ের সম্পদের ওপর সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত করি কোন্ যুক্তিতে?
৪) এই নারী হিজাব বা বোরখার কোনটাই ব্যবহার করেননি, তথাকথিত ‘নারীর আব্রু’ রক্ষার নামে। তাতে কি সত্যিই তাঁকে অশ্লীল দেখাচ্ছে?
৫) যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই দেখাচ্ছে, তবে তো তিনি কয়েক দশক ধরে ‘আল্লাহর বিধান’ মানছেন না। তাতে কি তিনি আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন? না। যদিও হিজাব বা বোরখায় নারীর শরীর মুড়ে রাখার কোন বিধান আজও কোরআন শরীফে আপনি সরাসরি খুঁজে পাবেন না।

আসলে, একটা পরিবারের স্বামী-স্ত্রী উভয়ই সমমানের শিক্ষার অধিকারী না হলে উভয়ের মধ্যে মতপার্থক্য চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এই মতপার্থক্য
১) পারিবারিক শান্তি ও সংহতি নষ্ট করে।
২) সন্তানদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, তারা বুঝতে পারে না — কে সঠিক, বাবা? না মা? যার পরিণতি হল, তারা বিভ্রান্ত হয়ে বিপথগামী হয়।
৩) প্রতিবেশী সহনাগরিকদের (মুসলিম ছাড়া) থেকে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ে। কারণ, শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণে একজন মুসলিম নারী চাকরি বা স্বাধীনভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করে পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যকে উচ্চতর মাত্রায় পৌঁছে দিতে কোন ভূমিকা নিতে পারেন না। একজন নারীকে এভাবে গৃহে সীমাবদ্ধ করে ফেলার অর্থ হল, একটা পরিবারকে আর্থিক সচ্ছলতা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা রাখার ক্ষমতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং মানব সম্পদ হিসাবে তার যে শক্তি আছে, তার শুধু অপচয় নয়, তাকে অসম্মান করা।

ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান - সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রতিবেশী সহ-নাগরিকদের তুলনায় এই মুসলিম পরিবার শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে। কারণ, আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা তাদের তুলনায় অর্ধেক হয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, একজন নারী যদি চাকরি বা ব্যবসায় যুক্ত হয়, তবে সংসার সামলাবে কে? ছেলেমেয়েদের মানুষ করবে কে? প্রশ্নটা খুবই অপরিণত মস্তিষ্কের ফসল। কারণ, তাহলে আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর আগে দিতে হবে — নিগার শাহজির ছেলেমেয়েদের মানুষ করল কে?

আসলে সংসারটা একা নারীর নয়, দুজনেরই। তাই নারীবাদী বা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা সরিয়ে দুজনকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। যাবতীয় দায়িত্ব দু'জনে সামর্থ্য অনুযায়ী ভাগ করে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। মুসলিমদের মধ্যেও এইভাবে চলার উদাহরণ রয়েছে। অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে তো রয়েছেই।

তাই ধর্মের নামে মেয়েদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা একটি সামাজিক ও মানবিক অপরাধ। আর এই অপরাধই মুসলিম সমাজের পিছিয়ে পড়ার একমাত্র না হলেও অন্যতম প্রধান কারণ।

👁️‍🗨️ লেখাটা এখনও শেষ হয়নি। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন।
--------xx-------

🙋 পাঠকের প্রতিক্রিয়া দেখুন ফেসবুকে

মন্তব্যসমূহ

  1. মুসলিম সমাজে এত জলসা, ঈদের গেট ও অনুষ্ঠান, মহরমের অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ অর্থব্যয় হয়ে থাকে, সেটা কী মুসলিম WBCS, WBBPS, IAS, IPS তৈরীর জন্য কোচিং স্কুল তরী করা যেতে পারে না.........???

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আপনার সঙ্গে আমি সম্পূর্ন সহমত। আসুন আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি।

      মুছুন
  2. আমার এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন। সাথি।
    https://alirprobondho.blogspot.com/2021/08/bhagya-o%20muslim-mnostatta-ebong%20islam-dhrmo.html

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে