সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে পার্থক্য

 শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে পার্থক্য

কেউ ভুল করলে শিক্ষিত মানুষ তাকে সবিনয়ে শুধরে দেয়, আর ঠিক করলে প্রশংসা করে। অন্য দিকে অশিক্ষিত মানুষ, ‘ভুল করা মানুষ’কে বিদ্রুপ করে, আর ঠিক করলে, অবলীলায় তা চেপে যায়।
শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে পার্থক্য

Difference between educated and uneducated people

কেউ ভুল করলে শিক্ষিত মানুষ তাকে সবিনয়ে শুধরে দেয়, আর ঠিক করলে প্রশংসা করে। অন্য দিকে অশিক্ষিত মানুষ, ‘ভুল করা মানুষ’কে বিদ্রুপ করে, আর ঠিক করলে, অবলীলায় তা চেপে যায়।
উল্লেখ্য, প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া জানা, বা না জানাটা এখানে বিষয় নয়। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া ছাড়াও একজন মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেন।

প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার গুরুত্ব প্রধানত দুটো।
১) এই ধরণের লেখাপড়া শিক্ষা অর্জনের প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে।
২) রাষ্ট্রীয় বা সাংবিধানিক এবং সামাজিক স্বীকৃতি এনে দেয়।

এবারে আসা যাক, কেন এমন মনে হল আমার, সে কথায় :

রোজকার মতো আজ সকালেও দুধ আনতে গেছি দুধের দোকানে। দু'প্যাকেট দুধ নিয়েছি। দাম বাহান্ন টাকা। আগের দিনের দুই টাকা বাঁকি ছিল। সুতরাং দিতে হবে, চুয়ান্ন টাকা। কারণ, খুচরো না থাকলে দুধ ওয়ালা সটান বলে দেন, দু’টাকা পরে দিও। আমি দুর্দান্ত ভুলো-মন। তবু আমাকেই মনে করে এই দেনা শোধ করার দায়িত্ব নিতে হয়। কারণ, উনিও আমার থেকে কম যান না। যথারীতি আজও তিনি ভুলে গেছেন।

সকালে, যখন দোকানে গেছি, প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। মাথায় ছাতা রয়েছে। ঘাড়ে ছাতার ডান্ডাটা রেখে থুতনি দিয়ে চেপে ধরে মানিব্যাগটা খুললাম। একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে তার হাতে দিলাম। এরপর খুচরো বের করতে গিয়ে দেখি দু'টাকার একটা  কয়েন আছে। দরকার চার টাকা। তাই, বাধ্য হয়ে সেটা রেখে, একটা দশ টাকার নোট বের করলাম। উনি বললেন, খুচরো নেই, পরে দিও। আমি বললাম, আগের দিনের দু’টাকা পাবেন। একেবারে চার টাকা নিয়ে নিন। ইতিমধ্যে, অন্য খরিদ্দার পাঁচ টাকার একটা কয়েন-সহ দুধের দাম মিটিয়েছেন। সেটা হাতে রেখেই, উনি আমার দেওয়া দশ টাকার নোটটা হাতে নিলেন।

টাকার বাক্সে দু’জনের টাকাটা রেখে উনি আমাকে এক টাকার একটা কয়েন হাতে ধরিয়ে দিলেন। এরপর যথারীতি অন্য খরিদ্দার সামলাতে লাগলেন। আমি হাতটা  বাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। ভাবছি এবার হয়তো পাঁচ টাকার কয়েনটা আমায় দেবেন। আরও দু’য়েকজনকে দুধ দিয়ে আমার দিকে তাকলেন। বোঝা গেল দুধ ওয়ালা একটু অবাক এবং একটু বিরক্ত বোধ করছেন। ক্ষণকল অপলক চেয়ে থেকে চোখের পলক ফেললেন। বললেন, কী হলো! এই টুকু হিসাবও করতি পার না! তুমি তো মশাই হিসাবে খুবই কাঁচা! বেশ বোদ্ধার মতো বিদ্রুপের স্বর মিশিয়ে বললেন, আগের দিনের দুই, আর আজকের দুই, মিলে হল গে চার। আমি একটাকা দিলাম। এটুকু বুঝতেই তোমার এত সময় লাগে?

এতক্ষণ পরে বুঝলাম, আমি যে হাত পেতে আছি, খানিকটা ভিখারীর মতন, সেটা দেখে উনি ভেবেছেন, আমি এতক্ষণ ধরে হিসাব করছি। কত দিলাম, আর কত পেলাম। তাই এই কড়া প্রতিক্রিয়া।

প্রসঙ্গত বলে রাখি, এর তিনচার মাস আগে, খুচরো না থাকার কারণে, আমার যা ফেরত পাওয়ার কথা, তার থেকে বেশি দিয়ে, আমাকে বকেয়া হিসাবে কিছু খুচরো দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ফিগারটা আমার এখন আর মনে নেই। যাহোক, সেই অনুযায়ী আমি দিয়ে দিলাম। হাটে বাজারে মাছ বা সবজি বিক্রেতারা যেভাবে হিসাব করেন, উনি সেভাবেই হরবড় করে হিসাব করে দিলেন। হিসাবটা ঠিকই ছিল। কিন্তু আমার সবই মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল। কারণ, ওভাবে হিসাব করার অভ্যাস তো আমার নেই।  ফলে যা হয় আর কি, আমি হিসাবটা বোঝার জন্য মোবাইল ক্যালকুলেটর বের করেছি। ব্যস। যাবে কোথায়! ‘এইটুকু হিসাব করতে ক্যালকুলেটর লাগে! তুমি অংকে এত কাঁচা!’ একটার পর একটা বিস্ময়বোধক চাহনি। আরও .... আরও ...।

পাশে আরও কয়জন দাড়িয়ে থাকা মানুষ হ্যাঁ করে আমায় দেখছেন। বুঝতে পারছি তারা বেশ মজাই পাচ্ছেন। একেকজন মানুষ একেক রকম ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানর চেষ্টা করছেন, আমি আসলে কতটা বোকা-শোকা মানুষ। তাদেরই একজজন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কী করেন? নিচু গলায় সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলাম। বললাম, শিক্ষকতা। লেখালেখি ছাড়াও আমার যে আরও একটু আধটু শিক্ষাদীক্ষা আছে, এই যেমন ধরুন, কম্পিউটার হার্ডওয়ার এন্ড নেটওয়ার্কিং এর ওপর ডিপ্লোমা করেছি, ওয়েবসাইট ডিজাইন শিখেছি, অনলাইন সফটওয়্যার তৈরি করতে পারি, একটি জনপ্রিয় অনলাইন সাহিত্য ম্যাগাজিনের সম্পাদক আমি, ইত্যাদি ইত্যাদি... — এসব বরাবরের মতো এখানেও গোপন রাখলাম। অবাক হয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত বার দুয়েক তিনি আমাকে দেখলেন। চোখ মুখ দেখে বুঝলাম, উনি আমার শিক্ষকতা করার যোগ্যতাটুকুকেও বিশ্বাস করেননি। সত্যিই তো, আমার বেশভূষা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, একটু আধটু লেখাপড়া আমিও জানি। সত্যি কথা বলতে কি আমি একটা সাধারণ লুঙ্গি ও একটা টি-শার্ট পরে যেভাবে বাজারে বেরোই, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার জন্য, তা দেখে যদি কেউ আমাকে রিক্সাওয়ালা ভেবে বসে, তো সে দোষ তার না, আমার। এবং তাছাড়া সবার সাথে মেশা বা আড্ডা দেওয়ার অভ্যাসও আমার নেই। তাই সেভাবে পরিচিতিও নেই এলাকায়। সুতরাং তারই বা দোষ দেই কীভাবে? যথারীতি বেশ অবজ্ঞা ভরে, বিদ্রুপ করেই বললেন, সে কারণেই তুমি হিসাবে এত পাকা।

আমি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনলাম। কিছুই বলতে পারলাম না। ভাবলাম, বলেই বা কী হবে! যতই বলি, বা নিজের পরিচয় দেই, কোন কাজই হবে না। এই মুহূর্তে হয়তো লজ্জা পাবে, কিন্তু স্বভাব পাল্টাবে না। কারণ, মানুষকে অপমান করে যে নিজেকে শিক্ষিত প্রমাণ করা যায় না, সেই শিক্ষাই তো ওদের মধ্যে জন্মায়নি। কিম্বা  তা গ্রহণ করার সুযোগই হয়তো তারা পাননি। শুধু দুধ ওয়ালাকে চোখের ইশারায় বললাম, ওই যে দশ টাকাটা, ওটা আমার দেওয়া। আরও পাঁচ টাকা ফেরত দিন। তিনি আমার দিকে তাকালেন। একটু ভাবলেন, তারপর সেই পাঁচ টাকার কয়েনটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে দিলেন। 

মজার ব্যাপার হল, যারা এত সময়, এত ধরণের শব্দ ব্যবহার করে আমাকে অশিক্ষিত ভেবে জ্ঞান দিয়ে গেলেন, তাদের শব্দ ভান্ডারে দুঃখ প্রকাশ করার মতো একটা শব্দও, সারা জীবন ধরে জমা হয়নি। শিক্ষায় এতটাই দরিদ্র তারা। তাদের সবার বয়স আমার মতোই হবে। কিম্বা একটু আধটু কম হবে বৈ বেশি হবে না। দুধ ওয়ালার তো বটেই।

 If someone makes a mistake, the educated person corrects him, and if he is right, he praises him. On the other hand, uneducated people make fun of people who make mistakes and suppress them when they are right.

---------xx--------

পাঠকের প্রতিক্রিয়া দেখুন ফেসবুকে

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে