সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতের পিছিয়ে পড়ার কারণ

বিশ্বমঞ্চে ভারতের পিছিয়ে পড়ার কারণ

স্বাধীনতার এতো বছর পরও ভারত যে এগোতে পারেনি, তার অন্যতম প্রধান কারণ হল, এদেশের লেখাপড়া জানা বড় বড় ডিগ্রিধারী মানুষদের বড় অংশই সাম্প্রদায়িক অথবা বর্ণবিদ্বেষী মানসিকতা সম্পন্ন। এরা চায়না পিছিয়ে পড়া নিম্নবর্গের মানুষ লেখাপড়া শিখুক। চায় না নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোক। কারণ, নিম্ন বর্গের মানুষ লেখাপড়া শিখে শিক্ষায় আলোয় আলোকিত হয়ে গেলে, তারা তাদের অধিকার দাবি করবে। আর তা করলে এই ক্ষুদ্র অংশের মানুষ, যারা জনসংখ্যার মাত্র তিন থেকে পাঁচ শতাংশ মাত্র, তারা নেতৃত্ব হারাবে এবং এদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য নষ্ট হবে।

জনসংখ্যার সিংহভাগ মানুষকে এভাবে পিছিয়ে রাখলে কোনো দেশ এগোতে পারেনা। কারণ, একেকজন মানুষই মানে এক একজন মৌলিক ও প্রধান সম্পদ। কারণ, দক্ষ মানব সম্পদ ছাড়া প্রকৃতির কোন সম্পদই সম্পদ হয়ে উঠতে পারে না। তাই যে দেশের সরকার বা নীতিনির্ধারকরা সিংহ ভাগ মানব সম্পদকে অশিক্ষিত রেখে দিতে চায়, নিজেদের ক্ষুদ্র শ্রেণি বা গোষ্ঠী স্বার্থে, সে দেশ কখনও এগোতে পারে না। এটা সম্ভব নয়, তার কারণ হল অশিক্ষিত মানুষ কখনও এবং কোনভাবেই দক্ষ শ্রমিক বা কারিগর হয়ে উঠতে পারে না। ফলে উৎপাদনের গুণগত মান ও পরিমাণ পর্যাপ্ত হয় না।

এই সব অদক্ষ শ্রমিক বা কারিগরদের দিয়ে অল্প পারিশ্রমিকে কাজ করানো যায়। মালিকপক্ষ মুনাফার পাহাড় গড়তে পারে। কিন্তু বিশ্বের বাজার ধরার ক্ষমতা অর্জন করা যায় না। কেননা এই সব নিম্নমানের পণ্য উন্নত বিশ্বের বাজার গ্রহন করে না। একারণেই ভারতের বাজার চিনা পণ্যে চেয়ে আছে। অবাক লাগে যখন দেখি, ভারতীয় জনগনের অধিকাংশই জানেন না যে, এগুলো চিনা পণ্য।

এত বড় একটা দেশ, এত জনসংখ্যা — এদের যদি চিনের মত, মানব সম্পদ হিসাবে গড়ে তোলা যেত, বিশ্ব আজ ভারতের হাতের মুঠোয় থাকত। কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য বিদেশে মন্দির তৈরি করা হচ্ছে। দেশে ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। অথচ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে ধুঁকছে।

বলা হচ্ছে, এদের স্বাবলম্বী হতে হবে। সরকার এদের দায় নিতে পারবে না। আসলে নেবে না। কারণ, এগুলো চালাতে গেলে যে বিপুল অর্থ লাগে, সেখানে যাতে বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থা পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এরা পয়সার বিনিময়ে পয়সা ওয়ালা ঘরের ছেলেমেয়ে দের পড়াবে, এবং তাদের অদক্ষ শ্রমিক করার উপযোগী শিক্ষার ডোবায় চুবিয়ে ছেড়ে দেবে। তারপর তারাই অদক্ষতার অজুহাতে অল্প মজুরিতে দীর্ঘ সময় কাজ করিয়ে নেবে।

এই ধরণের শোষণমূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন শ্রমিক বা কর্মচারী সৎভাবে তার সেরা মেধাকে প্রয়োগ করতে পারে না। সে দুর্নীতিতে ডুববে, কাজে ফাঁকি দেবে। হতাশার জীবন জীবন নিয়ে অসামাজিক কাজে ঝাপাবে। সবচেয়ে বড় কথা তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারবেনা। একটা অযোগ্য মানবসম্পদ হিসেবে সমাজের বোঝা হয়ে জীবন কাটাবে। আর এই বোঝা না বইতে পেরে দেশ আরও পিছনের দিকে এগোবে।

লজ্জার কথা, নিজেদের এই অযোগ্যতা, অদূদর্শিতার এবং সর্বোপরি ক্ষুদ্র বর্ণবাদী মানসিকতার কারণে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আমাদের অধরা থেকে গেছে। আফসোসের কথা হল, এই অযোগ্যতাকে ঢাকার জন্য আমাদের চিনা পণ্যের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাতে হয়। বলতে হয়, চিনা পণ্য মানেই ‘সস্তার তিন অবস্থা’। খেয়াল করলে দেখা যাবে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চোরা পথে নিম্নমানের পণ্য এনে চিনা পণ্য নাম দিয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করে। আমরা সেটা দেখেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি এই ভেবে যে, দেখো চিনা পণ্য মানেই নিম্নমান। একবারও আমরা আমাদের বাড়ির নামি ব্র্যান্ডের বিলাস বা ভোগ্য পণ্যগুলোর ভিতরে উঁকি মেরে দেখিনা যে, সেখানে লেখা আছে ‘মেড ইন চায়না’। ভাবিনা কেন সেখানে লেখা হল না মেড ইন ইন্ডিয়া বা কেন নেই।



এখানে আমাদের একটাই

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ ...

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে, ...

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা? বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

ইতিহাস কী?

ইতিহাস কী? ইতিহাস হচ্ছে মানুষের তৃতীয় নয়ন। এই তৃতীয় নয়ন মানুষকে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বিষয়ে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। এই পর্যবেক্ষণই জগত এবং জীবনের প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। একজন মানুষ, জগত ও জীবন সম্পর্কে  প্রকৃত সত্য যতটা উপলব্ধি করতে পারেন, তিনি ততটাই শিক্ষিত বলে বিবেচিত হন। তাই ইতিহাস জানা এবং বোঝা ছাড়া একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেন না। ইতিহাস কেন তৃতীয় নয়ন? একটা উদাহরণ নেওয়া যাক। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা ধরুন। আমরা এই ঘটনাকে যখন প্রত্যক্ষ করি, তখন দেখি দুটি ভিন্ন ধর্মের মানুষ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠছে। আমরা খুব সহজেই এই ঘটনাকে ধর্মের সঙ্গে জুড়ে দিই এবং ধর্মকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করি। ধর্মীয় বিদ্বেষের ফল হিসেবে সেগুলোকে ব্যাখ্যা করি। কিন্তু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসকে কার্যকারণ সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এই দাঙ্গাগুলোর পিছনে ধর্মের চেয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য খুবই শক্তিশালী ভূমিকায় রয়েছে। অর্থাৎ মূলত, ...

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম শিক্ষার প্রভাব দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে