ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ালে কাদের লাভ?
টিভি এবং সোস্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখা যাচ্ছে না। ঘৃণা আর বিদ্বেষ ভাষণে ছেয়ে গেছে এইসব প্ল্যাটফর্ম। সাম্প্রতিক কালে (৫ আগষ্ট ২০২৪) বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। গণ আন্দোলনের জেরে সেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতায় বদল ঘটেছে। তাকে কেন্দ্র করেই এই পরিস্থিতি।
সেখানে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যা — আমরা, যারা সাধারণ মানুষ, তাদের পক্ষে তা জানা বা বোঝা খুবই কঠিন। সত্য মিথ্যা যাই হোক, তা জানা, বোঝা এবং তা নিবারণের ক্ষমতা আছে একমাত্র রাষ্টের হাতে। সেদেশের সরকারের দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া। তারা ব্যর্থ হলে তার প্রতিবাদ বা চাপ সৃষ্টি করার রীতি ও নীতি দুইই আছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও তা প্রয়োগের নির্দিষ্ট পথও আছে। প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় সরকার সেই পথ অবলম্বন করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য অভিযুক্ত দেশের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে।
আমরা সাধারণ মানুষ, কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর দাবি করতে পারি সেই চাপ তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে। কিন্ত আমরা যেটা পারিনা, তা হল এই বিষয় নিয়ে এমনভাবে কথা বলতে, যার ফলে নিজের দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এমনভাবে বলতে পারিনা, যাতে সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরুর মধ্যে অবিশ্বাসের কালো ছায়া তাদের সম্পর্ককে গ্রাস করে ফেলে। সতর্ক থাকতে হয়, পরস্পর পরস্পরের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিষ যাতে না জন্ম নেয় এবং তা না ছড়িয়ে পড়ে। এটাই একজন সচেতন ও শিক্ষিত নাগরিকের দায় এবং দায়িত্ব।
ঘৃণা-বিদ্বেষ দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয় এবং তা ছড়িয়ে দেয়। দাঙ্গা ছাড়া, সে আর এমন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, যা আপনার জীবনের মান উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে। উল্টে, আপনার জীবনকে সে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়।আপনি কখনও দেখেছেন, দাঙ্গায় কোন রাজনৈতিক নেতা বা তাঁর পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে? দেখেননি। তাহলে আপনি কেন কোন নেতার বিদ্বেষ ভাষণে নেচে উঠবেন বা ক্ষেপে উঠবেন? কেন আপনার নিরিহ প্রতিবেশীকে মারতে যাবেন? গনতান্ত্রিক অধিকার আছে আপনার। ভোট দিয়ে আপনার মতামত প্রকাশ করুন। আপনার অধিকার আদায় করে নিন। আপনার সংবিধান তো সে অধিকার আপনাকে দিয়েছে।
সুতরাং ভাবুন। ভাবুন, কে কী উদ্দেশ্যে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। ভাবুন, তাতে আপনার লাভ কতটা এবং দাঙ্গা করে কীভাবেই বা সেই লাভ পাওয়া সম্ভব। ইতিহাস এব্যাপারে কী বলছে? ইতিহাসে কি এমন কোন প্রমাণ আছে যে, ঘৃণা ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের কোন লাভ হয়েছে?
অন্যদিকে দেখুন, ঘৃণা ছড়িয়ে, বিদ্বেষ ভাষণ দিয়ে ক্ষমতায় এসে ছোট নেতা বড়ো নেতায় উন্নীত হয়েছে। বড়ো নেতা মন্ত্রী হয়ে গেছেন। তার সন্তান বা স্বজনরা টাকার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছেন। বিদেশে গিয়ে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বড়ো বড়ো পদে বসে নিজের জীবনকে আরাম আয়েশে থাকার পাকা ব্যবস্থা করে ফেলেছেন।
আর আপনি? যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই রয়ে গেছেন। অথবা দাঙ্গা ফ্যাসাদে জড়িয়ে নিজের জীবনকে সঙ্কটাপন্ন করে ফেলেছেন।
----------xx----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন