সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

‘নামাজ’ আর ‘নমস্কার’এর মধ্যে সম্পর্ক

 ‘নামাজ’ আর ‘নমস্কার’এর মধ্যে সম্পর্ক

‘নামাজ’ আর ‘নমস্কার’ - একই ধাতুমূল থেকে এসেছে। আর তাহল ‘নমস্’।

ভাবুন, এটা কীভাবে সম্ভব? ধর্ম নিয়ে বিবাদ করার আগে এর ব্যাখ্যা খুঁজুন।

ফেসবুক পোস্ট, ১৬/০৫/২০২৪

----------xx-----------

আসলে দুটো শব্দই এসেছে একই ভাষাগোষ্ঠী থেকে। আর তা হল, ইন্দো-ইরানিয় ভাষা গোষ্ঠী। অর্থাৎ সংস্কৃত (নমস্কার) ও ফার্সি (নামাজ) - দুটো ভাষাই এসেছে ইন্দো-ইরানিয় ভাষা গোষ্ঠী থেকে। তাই তাদের মূল ধাতু এক। 

আমার ফেসবুক পোস্টের অভ্যন্তরে ছিল এই প্রশ্ন : এই বিষয় থেকে আমদের উপলব্ধি কী হওয়া উচিত? আমাদের অর্থাৎ হিন্দু মুসলমানসহ সমগ্র মানবগোষ্ঠীর মধ্যেকার সম্পর্ক কি বিরোধের, না বন্ধুত্বের কিংবা এক কথায় আত্মীয়তার?

----------xx-------

বেশ কয়েকজন ফেসবুক বন্ধু আমার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। বোঝাতে চেয়েছেন আমি ভুল।

আপনাদের বিনয়ের সঙ্গে জানাই, আপনাদের আলোচনায় ‘কেন আমি ভুল’ তার কোন সদুত্তর নেই। (যা আছে, তা প্রায় সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা, যা আপনারা জানেন বলে দাবি করেন। তা কতটা যুক্তিযুক্ত বা তথ্যসমৃদ্ধ সে বিষয়ে আমি যাচ্ছি না। কারণ, সে বিষয়গুলো আলাদাভাবে আলোচনার দাবি রাখে। তা করাও যেতে পারে, আলাদা সময়ে।) থাকা সম্ভবও নয়। কারণ, দুটো শব্দের গর্ভগৃহ এক। তাই তারা পরস্পর পরস্পরের আত্মীয়। বিরোধ যা, তা মানুষ নিজেরা তৈরি করেছে, নিজেদের স্বার্থে। সেই স্বার্থ কখনো রাজনৈতিক ক্ষমতার দখল নেয়ার লক্ষ্যে জন্ম নিয়েছে, কখনো অর্থনৈতিক আধিপত্যের জন্য। অর্থাৎ বিভক্তির পিছনে রয়েছে মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব। 

আবার যখন মানুষে মানুষে এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন ধর্ম দর্শনের, এই স্বার্থান্বেষী মহল, ধর্মকেই বিকৃত করে নতুন নতুন অনুশাসন তৈরি করে, ধর্মের নামেই মানুষের ঐক্য ভেঙে দিয়েছেন। অর্থাৎ এভাবেই ধর্মের কারণেও মানব জাতি বিভক্ত হয়েছে নানা ধর্ম ও সম্প্রদায়ে। খ্রিস্টান, ইহুদি, ইসলাম সহ নানান ধর্ম সম্প্রদায়ে মানুষকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। পরবর্তীকালে এই ধর্মগুলো আবার অসংখ্য সম্প্রদায় বিভক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা শোনাচ্ছে। অসহায় সরল সহজ হতদরিদ্র মানুষ গুলো তাদের প্ররোচনায় এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের আশায় পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে।

এভাবেই সনাতন ধর্মের এক (ব্রহ্মা) ঈশ্বর ৩৩ কোটি দেবতায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। আজও চলছে এই প্রক্রিয়া। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অদূর ভবিষ্যতে নতুন কোন অবতার বনে যেতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথাও ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে। দেখা দিয়েছে সে সম্ভাবনাও। মোট কথা, মানুষ নিজেরাই নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থেই, নিজেদের বিভক্ত করেছে। আল্লাহ বা ভগবান বা ঈশ্বর, যে নামেই তাকে ডাকেন না কেন, তিনি এই বিভক্তি করেননি। কখনো ধর্মের নামে, কখনো সংস্কৃতির নামে, কখনো বা বর্ণের নামে, আবার কখনো গোত্রের নামে এই বিভক্তি মানুষই করেছে। আবার বলছি, তার পিছনের মূল উদ্দেশ্য হল, কিছু মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ (কুক্ষিগত) করা।

দুই ভাই আলাদা হয়ে সংসার পাতলেই যেমন রক্তের সম্পর্ক মুছে যায় না, তেমনি মতপার্থক্যের বা ব্যক্তি স্বার্থের কারণে আলাদা ধর্ম বা সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হলেও এই রক্তের সম্পর্ক মুছে যায় না। বাইরের দিক থেকে হয়তো মুছে দেওয়া যায়, পোশাক পরিচ্ছদ বা আচার বিচারের মাধ্যমে, কিন্তু ভেতরটা সম্পূর্ণ মোছা যায় না। মোছা যায় না বলেই এই দুটো শব্দের উৎস-ভূমিও যে এক, তা এখনো মুছে ফেলা যায়নি। মোছা অসম্ভব। তাই এত মিল। একটু ভাবলেই এটা বোঝা যায়।

আচ্ছা বলুন তো, বিজ্ঞানের কথা বাদ দিন, ইসলামিক ধর্ম দর্শন অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম মানুষ কে? আদম তো? তার থেকেই পৃথিবীর বর্তমান জনগোষ্ঠী এসেছে বলে আপনি জানেন এবং মানেন। তাইতো? সনাতন ধর্মদর্শনেও ঠিক এমনই একজনের কথাই বলা হয়েছে, যাকে সনাতনীরা বলেন ব্রহ্মা। অন্য বৃহৎ ধর্ম গোষ্ঠীর ধর্ম গ্রন্থেও প্রায় একই রকম কথা বলা হয়েছে। সুতরাং, যে, যে নামেই ডাকুনা না কেন, এর দ্বারা কি প্রমাণ হয় না, মানবজাতির পূর্বপুরুষ এক। তাহলে মানুষ পরস্পর পরস্পরে আত্মীয় নয়? 

মনে রাখতে হবে, এ কারণেই কোরআনকে শুধু মুসলমানের জন্য নয়, মানব জাতির জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে বলে কোরআনেই দাবি করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, সনাতন ধর্মদর্শনেও সমগ্র বিশ্বের মানুষকে পরস্পর পরস্পরে আত্মীয় বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। মহা উপনিষদে বলা হয়েছে,  বাসুধৈব কুটুম্বকম। অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বই আসলে একটি পরিবার।

তাহলে কি দাঁড়ালো? মানবজাতির সমস্ত সদস্য পরস্পর পরস্পরের আত্মীয় নয়? ধর্মগ্রন্থাইগুলোতেই যদি একথা বলা থাকে, তাহলে ধর্ম নিয়ে এত বিরোধ কিসের? এবং কেন? 

খেয়াল করে দেখেছেন, এই বিরোধের সবচেয়ে বড় বলি হয় কারা? যারা হন, তাদের সিংহভাগই হচ্ছেন গরিব, সহজ, সরল, ধর্মপ্রাণ খেটে খাওয়া মানুষ। চেয়ে দেখুন চার-পাশটা, দেশ থেকে বিশ্বময়; প্যালেস্টাইন থেকে ইউক্রেন; পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীর কোন না কোন জায়গায় এই একই ঘটনা ঘটে চলেছে। আসলে ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। ভাবতে বলেছি এটাই।

ছোট্ট করে এটাই ছিল আমার বর্তমান পোষ্টের মূল বক্তব্য। বোঝাতে পারলাম? এরপরও যদি বোঝাতে না পারি, তাহলে ধরে নেব আপনাকে বোঝানোর দায়, আমার নয়। কারণ, সবার সব ক্ষমতা থাকে না। আপনাকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। 

আর মনে রাখবেন, চিন্তার এত দৈন্যতা নিয়ে বেঁচে হয়তো আপনি থাকবেন, কিন্তু মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন না। সারা পৃথিবীতে মুসলমানের যে দুরবস্থা, তা থেকেই এটা স্পষ্ট বোঝা যায়। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যিই ভারতের সংখ্যাশুরু জনগোষ্ঠীও আজ এই দৈন্যতার বড় ভাগীদার হতে চলেছে। 

------------xx----------

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে