প্রকৃত (আসল) ধর্ম কি?
What is the real religion?
মানুষের মধ্যে বিভাজন কিংবা ভেদাভেদ - যাই বলুন না কেন, তা করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম। কারণ, মানুষের জন্য যে ধর্ম, সে ধর্ম মানুষকে ভাগাভাগি করেনা।
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, যার ভিত্তি হল অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস, ভীরু মানুষেরা তার দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হন। কারণ, প্রচলিত ধারণা হল, এই বিশ্বাসের সঙ্গে একটু ভক্তি মেশালেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
মৃত্যু ভয় আর সাফল্যের আকাঙ্ক্ষা প্রত্যেক মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। একটা বহল প্রচলিত ধারণা হল, সাফল্য লাভ কিংবা মৃত্যু ভয় এড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস এবং তার ভজনা করা। সহজেই পাওয়ার আশ্বাস থাকে বলে, এমন বিষয় ও বিশ্বাসের প্রতি মানুষ বেশি আগ্রহ দেখায়। এবং সে কারণেই এই পথকেই মানুষ বেশি বেশি করে আঁকড়ে ধরতে চায়। এই মৃত্যুকে জয় করা যাবে না জেনেও, তাকে ঠেকিয়ে রাখার আকাঙ্খা থেকেই অলৌকিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়।
কিন্তু এটা প্রকৃত ধর্ম নয়। ধর্মের স্বঘোষিত প্রচারক যারা, তারা নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে এই ধারার ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এই ধর্ম আসলে তাদের একটা হাতিয়ার। সহজ সরল মানুষ সহজে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে মৃত্যু ভয় এড়ানো ও সাফল্য অর্জনের উপায় হিসেবে এই হাতিয়ারের সামনে নতজানু হয়।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য কিছু মানুষ সাধারণ মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় এবং প্রকৃত ধর্মকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেয়। ফলে শুরু হয় ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে অন্ধবিশ্বাসের মাখামাখি। এভাবে লাগামহীন মাখামাখির ফলে একসময় প্রকৃত ধর্মকে পিছনে ফেলে অন্ধবিশ্বাস নেতৃত্ব নিয়ে নেয়। শুরু হয় ধর্মের নামে অধর্মের অভিযান।
এই অভিযানের নেতৃত্ব কে দেবে? কে খাবে এর মধু? তাই শুরু হয় নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের অবশ্যম্ভবই পরিণতি হিসেবে জন্ম নেয় একের পর এক প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম। মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়ে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ে।
-----xx----
Ali Hossain তাহলে আপনি বলতে চাইছেন একত্ববাদের সুচনা থেকেই ধর্মীয় হিংসা?
কিন্তু আল্লাহ সৃষ্টির ৫০,০০০ বছর পূর্বে কুরআন লাওহে মাহফুজে লিখিত করে রেখেছিলেন। এছাড়া মুমিন মুসলমানেরা দাবি করেন সৃষ্টির শুরু থেকেই ইসলাম ছিল।
এখন আমার কথা হচ্ছে যে বইকে ঐশ্বরিক বলা হয় এবং সরাসরি আল্লাহর থেকে প্রাপ্ত সেই বইতে যদি এরকম সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া থাকে তাহলে তার অনুসারীরা কি করবে? কোন আল্লাহর পক্ষ থেকে এরকম বিভেদমুলক নির্দেশ কি নিশ্চিত আসতে পারে? যেহেতু সবাই তারই সন্তান।
আর কোন ধর্ম গ্রন্থে এরকম সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে জানাবেন।
-------xx-------
Shovan Mandal না। ধর্মের আবির্ভাবের সময়কাল থেকেই এই হিংসা রয়েছে। তবে মনে রাখা দরকার, হিংসা বৃদ্ধির জন্য ধর্মের আবির্ভাব হয়নি। বরং হিংসা বন্ধ করার জন্যই এর জন্ম। কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার দখলদারদের হস্তক্ষেপের কারণে তা হিংসাশ্রয়ী হয়ে গেছে। ঢুকেছে অন্ধত্ব। এটাই বলছে ধর্মের ইতিহাস।
বাকি যা আপনি বললেন, এগুলো আসলে মাইথলজি। মানুষের বিশ্বাস। ধর্মের সুবিধাভোগীদের দ্বারা বিকৃতির কারণে কিছুটা এবং বয়স ও অভিজ্ঞতার তারতম্যের ফলে, ভাবনা চিন্তায় পরিবর্তন আসার প্রভাবে কিছুটা, এই ধরণের স্ববিরোধী বক্তব্য রয়ে গেছে। এই স্ববিরোধিতাকে স্বীকার করে নিলে এই গ্রন্থ আর ঐশ্বরিক থাকে না। কারণ, আপনার তোলা প্রশ্ন এক্ষেত্রে খুবই যুক্তিযুক্ত। এর মান্যতার স্বপক্ষে উত্তর দিতে গেলে আপনাকে বিশ্বাসের ওপর ভর করতে হবে, জন্ম নেবে নানা রকমের অলৌকিক কাহিনী, বা মাইথোলজি। আর আপনি যদি বিশ্বাসের উপর ভর করেন, তবে এই স্ববিরোধিতার কোন যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা পাবেন না।
আসলে, যারা ঈশ্বরের বিশ্বাস করেন, তারা যেমন ঈশ্বরকে দেখেননি, শুধুই বিশ্বাস করেন, তেমনি যারা বিশ্বাস করেন না, তারাও আসলে অন্য আর এক ধরনের বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেন এবং বলেন, যে তিনি নেই। কারণ, আছে যেমন প্রমাণ নেই, তেমনি, নেই, তারও প্রমাণ দেওয়া যায় না। কেননা, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কোন এক অজানা শক্তির দ্বারা এবং সেই শক্তি কাজ করছে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। বিজ্ঞান সেই নিয়মকে প্রাকৃতিক নিয়ম বা আইন হিসেবে ব্যাখ্যা করে। সেই নিয়মের দ্বারাই চন্দ্র সূর্য ওঠে, অস্ত যায়, ঘরের পাখা ঘোরে, আবার বন্ধ হয়। সেই নিয়ম ভাঙ্গলেই বিপর্যয় নেমে আসে। সুতরাং কোন এক শক্তি দ্বারা এই নিয়ন্ত্রণ চালু আছে। কোনো বিশ্বাস দিয়ে এই নিয়ন্ত্রণকে ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ নিয়মের ভিত্তিভুমি হচ্ছে যুক্তি ও তথ্যের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া একটা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া থেকে যুক্তি কিংবা তথ্য সরে গেলে, সেই নিয়ম কাজ করে না। সুতরাং যে বিশ্বাসের মধ্যে যুক্তি ও তথ্য নেই, সেই বিশ্বাস আসলে এক ধরনের অন্ধবিশ্বাস। এই অন্ধবিশ্বাসে ভর করলে, ভুল পথে চালিত হতে বাধ্য। এবং সেই অন্ধবিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বক্তব্যের মধ্যে স্ববিরোধিতা ঢুকে পড়ে।
অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কোন অন্ধবিশ্বাস নয়, নির্দিষ্ট কিছু যুক্তি ও তথ্য নির্ভর নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আর এই নিয়মের পিছনে রয়েছে একটা শক্তি। বিজ্ঞানীরা খোঁজার চেষ্টা করছেন সেই শক্তির উৎস। কিন্তু এখনো পুরোপুরি সাফল্য আসে নি। কিন্তু যেটুকু সামনে এসেছে, তার দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, পৃথিবীতে কোন কিছুই বিশ্বাসের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় কার্যকারণ সম্পর্ক ও তথ্যের সমন্বয়ের গড়ে ওঠা নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের দ্বারা। এই শক্তিকে আপনি ঈশ্বর বলতে পারেন, আল্লা বলতে পারেন, পারেন ভগবান বলতেও। সেটা আপনার বিশ্বাস। তবে যাই বলুন না কেন, তার পিছনে কার্যকারণ সম্পর্ককে অস্বীকার করতে পারবেন না। কারণ এই ঈশ্বর বা আল্লাহ অন্ধবিশ্বাসের দ্বারা কোন কিছুই পরিচালনা করেন না। যিনি নিজে তার সৃষ্টিকে যদি নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুনের বন্ধনে আবদ্ধ রেখে পরিচালনা করেন, তবে তিনি কোন যুক্তিতে তার সৃষ্টিকে বিশ্বাসের উপর নির্ভর করতে বলবেন। তিনি যে বলেননি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, আপনার সামনে থাকা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুনের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। কোন কিছুই বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আপনি বিশ্বাস করলেই আপনার ঘরের পাকা চলা শুরু অথবা বন্ধ হবার ঘটনা ঘটবে না। এক্ষেত্রে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করে যার দোহাই দিন দেন না কেন চলা পাকা বন্ধ অথবা বন্ধ পাকা চলবে না। এ নিয়ম ঐ শক্তির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। যাকে আপনি ঈশ্বর বা ভগবান বলছেন কিম্বা আল্লাহ। বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রাকৃতিক শক্তি ও তার নিয়ম।
এই বিশ্বাসের যে ভিত্তি তা কার্যকারণ সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই রাখতে হবে। যদি তা না রাখেন তাহলে ওই বিশ্বাস অন্ধত্ব দ্বারা ঢাকা পড়ে যাবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন