বিজ্ঞানের সঙ্গে পুঁজিবাদের সম্পর্ক
বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীরা যে সমস্ত বৈপ্লবিক আবিষ্কার করেন, তার মধ্যে সেটুকুই কর্পোরেটপুঁজি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে, যা তার পুঁজির বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করে। বাকিগুলো নির্দ্বিধায় আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেয়। আর রাষ্ট্র যখন তার সহায়ক হয়, তখন তা বিধ্বংসী রূপ নেয়।এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, জলবায়ু পরিবর্তন ও তার বিপদজনক পরিণতি সংক্রান্ত আবিষ্কারকে পৃথিবীর সব কর্পোরেট মালিক উপেক্ষা করে চলেছেন। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত।
সেইসঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে এনার্জি এমার্জেন্সি ঘোষণা করেছেন, যাতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে কোন বাধা না থাকে। এরফলে ১.৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রা নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অন্ধকারের অতল গহ্ব ঘরে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আসলে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর প্রত্যক্ষ শিকার কর্পোরেট মালিকরা হন না। এর শিকার হন দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যখন কোন বিপর্যয় নেমে আসে, তার সরাসরি শিকার হয় এই সমস্ত সাধারণ মানুষ। কারণ, এই অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের থাকে না। এবং এই কর্পোরেট পুঁজিট মালিকরা বা তাদের দোসরা তাদের পুঁজির পাহাড়কে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে বিকল্প রাস্তায় নিজেদেরকে রক্ষা করার সুযোগ পায়। ফলে এই পরিবর্তনের আশঙ্কা তাদের চিন্তা ও চেতনায় কোন প্রভাব ফেলে না। তাই তাদের লোভের আগুনে জল নয়, বলা যায় ঘি ঢালে এই সমস্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো। মূলত বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীরা যে সমস্ত বৈপ্লবিক আবিষ্কার করেন, তার মধ্যে সেটুকুই কর্পোরেট পুঁজি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে, যা তার পুঁজির বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করে। বাকিগুলো আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেয়।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বারংবার সতর্ক করছেন এই বলে যে, কর্পোরেট সংস্থাগুলো, বিশেষ করে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলো যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার সীমিত করে অথবা সমাপ্তি ঘটিয়ে বিশ্বকে বি-কার্বনীকরণের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য না করে, তাহলে খুব শিঘ্রই পৃথিবী বিপর্যয়ের মুখ দেখবে।
এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এই আশঙ্কা যে মোটেই অমূলক নয়, তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিধ্বংসী দাবানল সৃষ্টি হওয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নত একটা দেশ এই বিপর্যয়কে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই বিপর্যয় সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ সে দেশের পুঁজিপতিদের কোন হেলদোল নেই। কারণ, পুঁজির পাহাড়ে চেপে বসে থাকা এই মানুষগুলো নিরাপদ দূরত্বে থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। যারা মরেছেন, ধনে এবং প্রাণে, তারা সব নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত এবং কিছু উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাধারণ মানুষ।
আমাদের দেশেও চলছে উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করার উদ্দাম নৃত্য। খনিজ সম্পদের লোভে কর্পোরেটপুঁজি নির্বিচারে সরকারের সহযোগিতায় আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস করে চলেছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে মাওবাদী তকমা এবং সটান জেল।
নাওমি ক্লেইন, একজন পরিবেশ কর্মী। ২৯১৬ সালের ২৯ শে জানুয়ারি মাইকেল উইনশেপ এর সাথে কথোপকথনকালে অসংখ্য প্রকাশ করেন,
যদি আমরা আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন না করি, তাহলে জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের ভৌতজগতের সবকিছু বদলে দেবে।
আর জলবায়ু বিজ্ঞানীরা আমাদের এটাই বলছেন, যখন তারা বলেন যে, স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে। আমরা সেই পথেই আছি। আমরা এখন কোন পথে আছি? আমরা কি ভাবছি?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন