সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নিন্মবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? পাঠকের মত ও তার উত্তর

Subrata Kumar Biswas বিভাজন যাদের মজ্জাগত, এবং শোষনের হাতিয়ার, তারা ভারতের মানুষকে হাজার ভাগে বিভক্ত করবেন সেটাই স্বাভাবিক। আপনি যদি সেই দলের হন তবে আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি আপনার দলে নই।

আমি সমাজের মানুষকে দুইভাগে বিভক্ত হতে দেখেছি। সুবিধাভোগী আর সুবিধা বঞ্চিত। বুঝবার সুবিধার জন্য তাই তাদেরকে উচ্চবর্গ আর নিম্নবর্গ বলেছি। আপনি নিজেকে ‘সম্যক ধারণার’ অধিকারী বলে দাবি করছেন, অথচ উচ্চবর্গ এবং নিম্নবর্গ শব্দ দুটিকে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন। বুঝদার মানুষ হিসেবে আপনার বোঝা উচিত ছিল বর্গ আর বর্ণের পার্থক্যের কথা।

হিন্দু সমাজ সম্পর্কে আমার কি ধারণা আছে তা প্রকাশ করার জন্য এই নিবন্ধ আমি লিখিনি। সুতরাং তা আপনি এখান থেকে পাবেন না। 

আমার লেখার উদ্দেশ্য যেটা, সেটা প্রকাশ করার জন্য যেটুকু বলা দরকার সেটুকুই বলেছি। আপনি যদি সেটা ধরতে না পারেন, তার দায় বোধহয় আপনারই। আমার নয়। বুঝতে না পারলে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন। তখন ব্যাখ্যার দায় খানিকটা আমার ওপর পড়ত বটে।

কিন্তু আপনি তো সে পথে হাঁটেননি। নিজেকে পন্ডিত আর আমাকে মূর্খ ভেবেছেন। ভাবতেই পারেন। ভাবুন। কে  আটকাবে আপনাকে?

তবে আমি নিজেকে পন্ডিত মনে করি না, আপনার মত অন্যকে মূর্খও ভাবি না। আমি জানি, যে মানুষ যতটুকু জানেন এবং বোঝেন তিনি সেটাই বলেন। আপনি যতটুকু জানেন, ততটুকুই বলেছেন। আপনি ভুলে গেছেন, আপনার জানার বাইরেও কিছু থাকতে পারে, যা আপনি জানেন না বা ভাবেননি।

আমি বুঝতে পেরেছি,আমি যা বলেছি তা আপনার জানার বাইরেই ছিল। তাই আমার ভাবনার সঙ্গে আপনার ভাবনা মেলেনি। আর মেলেনি বলে আপনি আমাকে মনের মত বিশেষণ বসিয়ে ছোট করার চেষ্টা করেছেন। যারা নিজেদের ‘পন্ডিত’ বলে মনে করেন, তারা এভাবেই মানুষকে ছোট করেন। কিন্তু তারা জানেন না, মানুষের বিরুদ্ধে কিছু অবাঞ্ছিত শব্দ ছুড়ে দিলেই সেই মানুষটা ছোট হয়ে যান না। অবাঞ্ছিত শব্দ প্রয়োগের কারণে তিনি নিজেই ছোট হয়ে যান।

শিক্ষাদিক্ষা সমাজ সংস্কৃতি সর্বোপরি রাজনৈতিক দর্শন ও যুদ্ধ কৌশলের ক্ষেত্রে পিছিয়ে না থাকলে একটা জাতি তার চেয়ে অনুন্নত কোন জাতির কাছে পরাজিত হয় না। এটা বোঝার জন্য খুব বেশি পান্ডিত্যের প্রয়োজন আছে বলে হয় না। একটু যুক্তি বুদ্ধি থাকলেই এটা বোঝা যায়। আমি বিশ্বাস করি না যে, সেটুকু যুক্তি বুদ্ধি আপনার নেই। আপনি আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্তকে প্রমাণ করার জন্য আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। জেনে বুঝেই তাই সত্যকে গোপন করেছেন। অথবা সত্যি সত্যি আপনি জানেন না - এটাও হতে পারে।

আমি অসংখ্য তথ্য দিতে পারি এবং প্রমাণ করতে পারি যে, পৃথিবীর ইতিহাসে সেই সেই জাতি পরাজিত হয়েছে, যারা বিজয়ী জাতির চেয়ে পিছিয়ে ছিল। পিছিয়ে না থাকলে কেউ পরাজিত হয় না গো দাদা!

হতে পারে, আপনি প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার গৌরবময় সময়-কালের কিছু অংশের সঙ্গে মধ্যযুগের বা প্রাক মধ্যযুগের ভারতীয় শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতিকে গুলিয়ে ফেলেছেন। অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই গুলিয়ে দিতে চাইছেন। যে জাতি ইতিহাস চর্চা করতে শিখলো এই সেদিন, যে জাতির মধ্যে সতীদাহকে পুণ্যের কাজ বলা হত, বিধবাকে চিরকাল বৈধব্য জীবন কাটাতে বাধ্য করা হত, সমাজপতিদের শিশু সন্তানকে গঙ্গাসাগরে বিসর্জন দেওয়ার নিদান দিতে বুক কাঁপত না, সেই জাতি যদি পিছিয়ে না থাকা হয়, তবে কারা তা?

আমি আপনাকে কয়েকটা বই পড়ার কথা বলতে পারতাম। সুলতানি এবং মুঘল শাসকেরা ভারতীয় শাসকদের তুলনায় এগিয়ে ছিল কিনা তা বোঝার জন্য।  কিন্তু বলছি না এই ভেবে যে, আপনি জেনে বুঝেই সত্য গোপন করছেন এবং অসত্যকে সত্য বলে চালানোর চেষ্টা করছেন। আর তা যে আপনি করছেন, তা আপনার আক্রমনাত্মক শব্দ প্রয়োগ এবং বাচনভঙ্গির ক্ষিপ্রতা দেখে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই বই পড়তে বলাটা অরণ্যেরোধন হবে বলে ভাবছি।

নিম্নবর্গীয়দের (আপনার ভাষায়, নিম্নবর্নীয়দের) পিছিয়ে থাকার যে কারণ দেখিয়েছেন আপনি,আমি তার বিরোধিতা করেছি কোথায়? আপনি যেখানে শেষ করেছেন আমি আমার নিবন্ধে সেখান থেকেই শুরু করেছি। আপনি যেটুকু বললেন, সেটুকু নতুন কিছু নয়। ওটা ইতিহাস ও সমাজ সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন। আমার লেখা ‘নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে’- এই বাক্যাংশের মধ্যেই তা উজ্জ্বল হয়ে আছে। আপনি দেখতে পান নি।

আপনি শেষ করেছেন এই বলে যে, চোর এসে আপনার বাড়ির সব জিনিস চুরি করে নিয়ে গেল। এবার আপনি কাঁদতে বসেছেন আর সবাইকে বোঝাচ্ছেন চোরে সব নিয়ে গেল রে...। চোরই একমাত্র দায়ী আমার এই অবস্থার জন্য।

আমি শুরু করেছি ঠিক এখান থেকে। আমি প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছি যে, চোর তো চুরি করেছে, করছে এবং করবে; আমি কি চোরকে আটকানোর ক্ষমতা অর্জন করেছি? যদি না করে থাকি তাহলে আমার দায় কি থাকে না? থাকে। আমি মনে করি এই দায়টাই হচ্ছে আসল দায়, প্রকৃত দায়। নিম্নবর্গীয়রা এই দায় মুক্ত হওয়ার কোন চেষ্টাই সেভাবে করেনি। কিংবা করতে পারছে না। খোঁজার চেষ্টা করেছি, কেন পারছে না? কোথায় সমস্যা? সমাধানই বা কি?

জানিনা পরিষ্কার করতে পারলাম কি না?


মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন