সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রসঙ্গ : নেতাজিকে শ্রদ্ধা ও কিছু কথা

প্রসঙ্গ : নেতাজিকে শ্রদ্ধা ও কিছু কথা

Context: Tribute to Netaji and some words

Senjuti Saha প্রথমত, 'সহমত' হলে পরের মন্তব্যগুলো আসা উচিত নয়। কারণ, সত্যিই সহমত হলে, এই মন্তব্যগুলো প্রাসঙ্গিকতা হারায়।

দ্বিতীয়তঃ উচিত না হলেও তোমার উত্থাপিত প্রশ্নগুলোকে উপেক্ষা করা যায় না। তাই কিছু আলোচনা করা প্রয়োজন।

১) নেতাজিকে কে কী বলেছিলেন তার দায় একান্তই তাঁর বা তাঁদের। আমার বা তোমার নয়।


২) তবু যদি বিচার করতেই হয়, তবে তা তৎকালীন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিচার করেই তা করা উচিত। কারণ, প্রত্যেকটা ঘটনার পিছনে যে কার্যকারণ সম্পর্ক থাকে, তাতে নির্দিষ্ট একটি সময় এবং পরিস্থিতি  অর্থাৎ প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তাই যিনি বলেছিলেন, তার বক্তব্যের প্রেক্ষাপট আমাদের আগে জানা উচিত। সেটা না জেনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে (বর্তমান প্রেক্ষাপটে) সেই মন্তব্যকেই উদ্ধৃত করা অযৌক্তিক। কারণ, তা কখনোই বাস্তব সম্মত হবে না। যদিও নীতি-আদর্শহীন ধান্দাবাজ রাজনীতিকরা তা হামেশাই করে থাকে। কিন্তু শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ তা কখনোই করতে পারেন না। তবে, কোটেশনের মধ্যে যে শব্দটি উহ্য রয়েছে তাকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এ ধরনের শব্দ চয়ন যিনি করেছিলেন, তিনি ভুুুল ছিলেন।

৩) যদি সেই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে বিচার করার পরও যদি প্রমাণ হয় যে, ভাবনাটা ভুল ছিল, তবে তা ভুল ছিল বলে স্বীকার করে নেওয়াটাই যেমন বাস্তবসম্মত, তেমনি, কোন এক প্রজন্মের ভূলকে পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াটাও অযৌক্তিক। কারণ, ভুল না করা মানুষ পাওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে যুক্তি-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কর্তব্য হলো, ভুলটাকে স্বিকার করে অতীতের ইতিহাস থেকে সেটুকুই গ্রহণ করা, যেটুকু আমাদের দেশের এবং দেশের মানুষের পক্ষে কল্যাণকর এবং অগ্রগতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারবে। বাকিটুকু সযত্নে বাদ দিতে হবে। যদি আমরা এই পথ অনুসরন করতে না পারি, তাহলে নীতিহীন ধান্দাবাজ রাজনীতিকদের মতো আমরাও দেশ ও জাতির কাছে নিন্দিত হতে থাকব যুগ যুগ ধরে। শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক হিসেবে যেটা বড়ই বেমানান।

৩) চিন বা জাপানের কথা এখানে অপ্রাসঙ্গিক বলেই আমার মনে হয়। কারণ, ও দুটোর কোনটাই আমার দেশ নয়। তাই কারও পক্ষ অবলম্বন করা কিংবা কাউকে অনুকরণ করাও আমার কাজ নয়। তবে কারো মধ্যে যদি কোন মানব কল্যাণমুখী নীতি ও পরিকল্পনা দেখতে পাই তাকে অনুকরণ নয়, অনুসরণ করতেই পারি। আমাদের ভারতের সংবিধান পৃথিবীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সংবিধানকে অনুসরণ করেই তৈরি হয়েছিল। এখানে দোষের কিছু নেই।

এক্ষেত্রে যেটা করতে হয় সেটা হচ্ছে, তাকে একটি দেশীয় চরিত্রের রূপ দেওয়া। অর্থাৎ স্থান-কাল-পাত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তার এই নতুুুন রূপ দেওয়া উচিত।

৪) 'যে দলটা' বলে যাকে উদ্দেশ্য করলে, সেই দলটি এ বিষয়ে কী করেছে, এ প্রশ্ন তোলাই যায়। কিিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখন সেটা প্রাসঙ্গিক কিনা। আমার মতে, এখন সেটা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, সেই দলটা এখন আর ক্ষমতায় নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছে, তোমার-আমার প্রশ্ন তোলা উচিত, তারা কী করছে? তা না করলে অন্যের দোষকে তুলে ধরে আরেকজনকে আড়াল করা হয়ে যাবে। আমাদের কাজ হওয়া উচিত, যারা ক্ষমতায় আছে তারা কি করছে, এই প্রশ্নটা আগে তোলা। আগে যারা ছিল তারা কিছু করেনি বলেই তো সরকার পরিবর্তিত হয়েছে। এখন তো তাদেরই দায়, যারা ক্ষমতায় আছে। তাদেরই তো এখন  দায় নেতাজির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে তোলা। কারণ, তারা নেতাজিকে সম্মান জানাতে  এখন উঠে পড়ে লেগেছেন।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নেতাজির চিন্তা চেতনার কোন অংশ আজকের বিজেপির সরকার বাস্তবায়িত করে নি। উল্টে যা করছে, তার সবই নেতাজির মত ও পথের বিপরীত কাজ। তাই তার সমালোচনা না করলে, কিংবা না করে তাদের দেখনদারিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন  করলে, নেতাজির প্রতি অপমান করারই শামিল হয়ে যাবে।

৫) হ্যাঁ ঠিকই বলেছো, রাজনীতিতে নীতিহীনতা আগেও ছিল, আজও আছে। এটা সত্যি। কিন্তু চিরকালই থাকবে এ কথাটা অনৈতিহাসিক। চিরতরে মুছে যাবেনা একথা যেমন ঠিক, তেমনি তারা যে শক্তি হারাবে না, তা কখনোই জোর দিয়ে বলা যায় না। আমরা যারা শিক্ষিত মানুষ বলে দাবি করি, তাদের চাওয়া উচিত এই নীতিহীনতা শক্তি হারাক।

পৃথিবীতে একসময় দাস ব্যবস্থা ছিল। আজ নেই। একসময় মানুষ রাজনৈতিক অধিকারের কথা কল্পনায় আনতে পারতেন না। কিন্তু পৃথিবীর অনেক জায়গায় তা এখন খুবই শক্তিশালী চেহারা নিয়েছে। সুতরাং কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়, একথা ভুললে চলবেনা। সেইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, যে যুগ যুগ ধরে একটু একটু করে হলেও ন্যায় এবং সত্য শক্তি অর্জন করছে। তাই চিরকাল নীতিহীনতা থাকবে বলে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বিচার করতে পারিনা। এটা করলে নেতিবাচক ভাবনার অনুসারীরা শক্তি অর্জন করে। এটা আমাদের মনে রাখা উচিত।

যাই হোক, তোমার মতামতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। ভালো থেকো। সাবধানে থেকো। শুভকামনা রইলো।

প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

২৪/০১/২০২১

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন