নেই কাজ তো খই ভাজ। বাঙালি পারেও ভালো। এখন আলাপন নিয়ে পড়েছেন। প্রায় সবাই। কেউ বলছেন তিনিই (আলাপন) একমাত্র মেরুদন্ডী প্রাণী, তো অন্যজন তাঁকে অমেরুদন্ডী প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগছেন।
কেউ আবার বাম আমলের মেরুদন্ডী প্রাণীদের খুঁজে এনে দাড়ি পাল্লায় চড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রমাণ করতে চাইছেন, তারাই আসল মেরুদন্ডী প্রাণী ছিলেন। যারা এসব করছেন তাদের অধিকাংশই সরাসরি রাজনীতি করেন না। কোনো সামাজিক কাজেও নেই। কারা কাজ করছেন? পরে বলছি।
আরে বাবা, মেরুদন্ডী প্রাণী আগেও ছিল। এখনও আছে। যাঁরা মেরুদন্ড নিয়ে জন্মায়, আর তার যত্ন নেয়, তাঁরা মেরুদন্ডীই থাকে। আমার আপনার বলায় কিছু যায় আসে না।
বিষয়টা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক? পুরোপুরি না। বলা ভালো, খানিকটা রাজনৈতিক ইগোর লড়াই। খানিকটা তথাকথিত রাজনীতি। রাজনীতিকরা করছেন। এগুলো করছেন সমস্যা থেকে মানুষের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য। করোনা ও ইয়াস সংক্রান্ত সংকটই এখন মূল আলোচ্য বিষয়। কীভাবে এই সংকট থেকে মুক্তি আসবে তা-ই এখন প্রধান আলোচ্য হওয়ার কথা। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কোন আর্থিক পরিকল্পনায় এই সংকট থেকে মুক্তির পথ বের হবে - আলোচনার কেন্দ্রে থাকার কথা সেই বিচার বিশ্লেষণ। আমরা সেখানে নেই।
সেখান থেকে নজর সরানোর জন্য বিজেপি ও তৃণমূল নন-ইস্যুকে ইস্যু করে তুলছে। বিজেপি বাজারে ছাড়ছে, তৃণমূল সেটাকে লুফে নিয়ে মাঠে নামছে। আর আমরা আমবাঙালী সেটা নিয়েই কচলাচ্ছি কিম্বা পেশি ফোলাচ্ছি।
বিজেপি জানে এসব ভুল। তবু তারা তা করে যাচ্ছে। করে যাচ্ছে, দুটি কারণে। এক. অঢেল অর্থ ও সময় দিয়েও বাঙালির মন জয় না করতে পারার জ্বালা। নিতে পারছে না। তাই বিপক্ষকেও জ্বালায় রাখতে চাইছে। দুই. দেশ পরিচালনায় একের পর এক ব্যর্থতা। মানুষ মুখ ফেরাচ্ছেন। সহ্য করতে পারছে না। আশু রিলিফের জন্য 'বাম' জাতীয় মলম বা 'জেল' (লোশন) খুঁজছেন। হাতের কাছে যা পারছে, লাগিয়ে দিচ্ছে। সাইড এফেক্ট কি হবে ভাবার সময় পারছে না।
প্রথমেই লাগালেন নারদ মলম। রিলিফ তো হলোই না, উল্টে মুখ পুড়লো। সুপ্রিম ও হাইকোর্ট মুখাগ্নির ব্যবস্থা করে দিল। শিক্ষা নিলো না। নেবে কি করে, ওই যে ব্যর্থতার জ্বালা। সেটাও তো সহ্য হচ্ছে না। তাই হাতের কাছে আলাপন (রিলিফ বাম) পেয়েছেন। লাগিয়ে দিয়েছেন। কী হবে? পরে দেখা যাবে। মানুষ তো নাচতে থাকুক। আমরা একটু রিলিফ পাই। আমরা নাচছি।
আমরা ভুলে যাচ্ছি যে, এটা ভোটের বাজার না। বিষয়টা ভোটের ইস্যুও নয়। এটা একান্তই প্রশাসনিক সমস্যা। এর সমাধান একমাত্র সংবিধান ও প্রশাসনিক নিয়মকানুনের মধ্যে বাঁধা। জনমনে যতই ঝড় উঠুক তার কোন প্রভাব পড়বে না।
তবে এই ঘটনার একটি রাজনৈতিক দিক অবশ্যই আছে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান ও রাষ্ট্র-কাঠামোর অস্তিত্ব রক্ষায় প্রশ্ন। তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত শুধু নয়, আবশ্যিক।
আমরা কিন্তু সেটা করছি না। কী করছি? না, মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডীর পার্থক্য খুঁজে বেড়াচ্ছি।
কেন্দ্র সরকার একের পর এক অর্ডিন্যাস জারি করে পার্লামেন্টেকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোয় করা যায় না। কোনো প্রতিবাদ বা আলোচনায় আমরা আনছি বিষয়টা? সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা মেরুদন্ডী-অমেরুদন্ডীর পার্থক্য খোঁজায় ব্যস্ত এটা তাদের দায়িত্ব নয়? হ্যা, দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা সেখানে নেই।
দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া, বাংলায় মুখ্যমন্ত্রীকে উপেক্ষা করে এবং অন্ধকারে রেখে মুখ্যসচিবদের কিংবা জেলা স্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক লাক্ষাদ্বীপ ও দাদরা-নগর-হাভেলির প্রথা ভেঙে রাজনৈতিক নেতাকে প্রশাসনিক প্রধান করা ইত্যাদি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। আমরা চুপ।
আমরা চুপ। কারণ, আমরা জানিনা এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল ভারতীয় জনগণকেই ভুগতে হবে। ভারত একটি বহু ধর্ম-বর্ন-ভাষা-সংস্কৃতির দেশ। এমন বিভিন্নতা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কোনো বিকল্প নেই। এই কাঠামোর বাইরে গেলেই অভ্যন্তরীণ সংকট দেখা দেবার সম্ভাবনা থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন