আপনার ভাবনা কে সম্মান জানাই। কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যারা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিকে ধ্যান না দিয়ে শুধুমাত্র ঐ সম্প্রদায়কে বিরোধীদলের জুজু দেখিয়ে সস্তা সমর্থন আদায় করতে চায় (যে কাজে তারা দারুন ভাবে সফল) তারা কি বিদ্বেষের বীজ জিইয়ে রাখবে না? উন্নয়নের প্রশ্নে ভোট হলে বাম কংগ্রেস কি একটাও আসন পেত না? তাই ভোট পরবর্তী হিংসা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হওয়ার কোনো কারন নেই। এক শ্রেনীর ক্ষমতালোভী রাজনীতিকের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার একটা হীন প্রচেস্টা।
সাথি, আপনার কিছু কিছু ভাবনাকে আমিও সম্মান জানাই। আপনার সাহিত্য কর্মকে আমি সম্মানের চেখেই দেখি। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষণের সাথে একমত হতে পারি না। কারণ,
১) আপনার ভাবনার সঙ্গে আপনার দলের ভাবনা ও পরিকল্পনা অনেক ক্ষেত্রেই বিপরীতমুখী।
যেমন ধরুণ, আপনি যে বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য তৃণমূল সরকার কিছুই করে নি বলছেন, আপনার দল কিন্তু লাগাতার প্রচার করে যাচ্ছে যে এই দলটি ওই বিশেষ সম্প্রদায়কে তোষণ করে চলেছে। আর সংখ্যাগুরুদের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে।
২) এই সম্প্রদায়কে কেউ কেউ সরাসরি ভয় দেখছে (যেমন বিজেপি) আর কেউ পরোক্ষে ভয় পাওয়াচ্ছে ( যেমন তৃণমূল)। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই সম্প্রদায়ের মানুষ কিছু নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ভয় পাচ্ছে। শুধু তৃণমূল নয় বিজেপি ছাড়া সবদল এই ভয়ের বাস্তবতা স্বীকার করে। সেই ভয় ভাঙানোর ব্যাপারে আপনার দল কোনো ইতিবাচক ভূমিকা সচেতনভাবেই নিচ্ছে না। কারণ, সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর বিভাজনকেই এরা প্রধান হাতিয়ার করে ভোটে জেতার পরিকল্পনা করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে।
৩) আর সব সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূল পেয়েছে একথা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, তথ্য বলছে সংখ্যালঘু প্রধান ১১টি কেন্দ্রে ISF দ্বিতীয় স্থানে আছে। একটি কেন্দ্রে জিতেওছে। তাহলে সব সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূল পেয়েছে একথা মোটেও সত্য নয়। সুতরাং তাদের বিজেপির ভয় দেখিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে মানা যাচ্ছে না।
৪) এবারে বাংলার ভোট শুধুমাত্র সংখ্যালঘু ভোটের কারণেই তৃণমূল জিতেছে একথা যারা বলছেন, তারা আসলে পরোক্ষে এবং সুকৌশলে সাম্প্রদায়িক ভাবনা-চিন্তাকে উস্কে দিচ্ছেন। মাত্র ৩০% জনসংখ্যার অনুসারী মানুষ কীভাবে ভোটের হার-জিত নির্ধারণ করে? যদি ধরে নি করে, তবে প্রশ্ন ওঠে যে ৩০% যদি পারে তবে কোন যুক্তিতে ৭০% পারে না? এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা?
আসলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশ সুকৌশলে সাম্প্রদায়িক ভাবনাকে চাগিয়ে তোলার জন্যই এই সব অযৌক্তিক কথা বলে চলেছেন।
৫) বামপন্থীরা এবার ভরাডুবিকে রুখতে পারেন নি। পারেন নি, তার তার একাধিক কারণ রয়েছে। যেটা প্রধান কারণ, তারা নিজেদেরকে তৃণমূলের বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠতে পারেননি।
কোন কোন দিক থেকে তারা পিছিয়েছে?
প্রথম, তৃণমূলের জনকল্যানমূলক পরিকল্পনাগুলোকে তারা সমর্থন না করে এগুলোকে ভিক্ষার সঙ্গে তুলনা করেছে। অথচ এগুলোর অধিকাংশই বামপন্থার সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত। বামপন্থীরা ৩৪ বছর ধরে ভিন্ন নামে এই প্রকল্প গুলো চালিয়ে এসেছে। (পার্থক্য শুধু এখানে যে, তারা সেটা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করতো না, তৃণমূল সেটা করে। ফলে সুবিধা ভোগীরা তাকে সমর্থন করেছে আর যারা এখনও সুবিধা পায় নি তারা পাওয়ার আশায় সমর্থন করেছে।) কারণ, এগুলো তাদের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ পরিপূরক। এই প্রকল্পগুলোর বিরোধিতার ফলে যেটুকু জনভিত্তি তাদের ছিল সেটাও হারিয়েছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন