মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ নয় বরং তার উল্টোটাই প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ
Bhabani Sankar Chatterjee আপনি ধর্ম নিয়ে থাকুন। আমরা ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাই না। শ্রদ্ধেয় সৌমিত্র বাবুও নির্দ্বিধায় জানিয়েছেন, তিনিও ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামান না।
ধর্ম মানুষের বিশ্বাসের বিষয়, ঘরের কোণে নিভৃতে বসে তাকে ঈশ্বরকে স্মরণ করাই ধার্মিক এর কাজ। এখানে দেখনদারির কিছু থাকেনা।
কিন্তু ধর্মের নামে যারা মানুষে মানুষে বিভেদ ছড়ায় তাদের তিনিও যেমন মানুষ ভাবেন না, আমিও তেমনি তাদের মানুষ ভাবি না।
সাপ আর নেউল দুটো ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। তাদের মধ্যে সখ্যতা না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ তো ভিন্ন প্ৰজাতির নয়, মানুষকে মানুষ ছাড়া আর অন্য কিছু কি বলা হয় পৃথিবীতে? হয় না। সাপের সঙ্গে নেউলের মিলনে সন্তানের জন্ম হওয়া সম্ভব নয়। কারণ তাদের মিলন প্রকৃতির আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। তাই কোনমতেই তাদের মধ্যে অপত্য ভ্রূণ জন্মানোও সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বিধি নিষেধ প্রকৃতির নিয়মের মধ্যে নেই। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের নর-নারীর মধ্যে মিলন হলেই অপত্যের জন্ম হয়। কোন ধর্মের তা এখানে বিচার্য বলে বিবেচিত হয় না। তাহলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতিতে আপনার কোথায় বাধে, বুঝলাম না। আর এই তুলনা কি ধরনের যুক্তির ভিত্তিতে করলেন? খুবই হাস্যকর একটি যুক্তির অবতারণা করলেন আপনি।
যারা মন্দির বা মসজিদ ভাঙ্গে আমরা তাদের পক্ষে নই। তাদেরকে মানুষ বলে আমরা ভাবি না। আপনি তেমন কাজ করলে, আপনাকেও মানুষ বলে স্বীকার করতে পারবোনা। দুঃখিত।
ধর্ম নিয়ে যতটুকু পড়াশোনা করেছি, তাতে বুঝেছি, কোন ধর্মই মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করতে শেখায় না। ধর্মস্থান ভেঙে দেওয়াও শেখায় না। এটা যারা করে, তারা ধর্মোন্মাদ। আর যারা করায়, তারা ধর্মব্যবসায়ী বা রাজনীতির কারবারি। এদেরকে ঘৃণা করতে না শিখলে আর এদের খপ্পর থেকে বের হতে না পারলে, আপনি আমি কেউই কোনভাবেই সত্যিকারের মুক্তি পাবো না। নিজের মধ্যে বিষ পুষে সেই বিষয়ে জর্জরিত হয়ে শেষ হয়ে যেতে হবে নিজেদেরই।
সত্যকে স্বীকার করতে না পেরে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য এনে মানুষকে কি ভুল পথে পরিচালিত করা যাবে? আমার মনে হয়, না যাবে না।
এসিড ও ক্ষারের উদাহরণটাও বড্ড হাস্যকর হয়ে গেল না? অ্যাসিড আর ক্ষার কোন কালে কোন অবস্থাতেই এক অবস্থায় একই পাত্রে রাখা যায় না। তার মধ্যে বিক্রিয়া ঘটে। কিন্তু এটা বুঝি আপনি জানেন না, যে হিন্দুর রক্ত মুসলমানের শরীরে (আপনার ভাষায় পাত্রে) দিলে মুসলমান বাঁচে, আবার মুসলমানের রক্তে হিন্দুও বাঁচে। জানেন তো? এবার একটু মন দিয়ে ভাবুন। আপনার যুক্তিটা কতটা যুক্তি হয়ে উঠতে পেরেছে!
শুধু যুক্তি দিলেই হয় না। যুক্তিটা বৈধ কিনা তাও বিচার করতে হয়। যারা যুক্তিবিজ্ঞান পড়েছেন, তারা এটা জানেন। আপনার যুক্তিটা যুক্তি বিজ্ঞান সম্মত নয় অর্থাৎ বৈধ নয়। এটা একটা অবৈধ যুক্তি। এসব বলে, প্রকৃত শিক্ষিত মানুষকে বিপদগামী করতে পারবেন না।
যাক, অনেক কথা হলো। ভালো থাকুন, আপনার ধর্ম নিয়ে আপনি সুখে থাকুন। আমাদের মোটা মাথায় এসব ঢুকবে না। বৃথাই চেষ্টা করছেন। যে ধর্ম, ধর্মস্থান, ঈশ্বর নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে পারেন না, মানুষকেই তাদের রক্ষার দায়িত্ব নিতে হয়, সেই ধর্ম, ধর্মস্থান নিয়ে আপনি থাকুন। আমরা মানুষকে নিয়ে থাকতেই ভালোবাসি। ভালোবাসতে চাই। মানুষে মানুষের যারা ভেদাভেদ তৈরি করে, আবারো বলছি, তাদেরকে মানুষ বলে ভাবতে পারিনা।
বড্ড কষ্ট হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন