তথ্য ও সত্যের পার্থক্য কী?
What is the difference between information and truth?
জানলে পাওয়া যায় তথ্য, আর বুঝলে পাওয়া যায় সত্য।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা একটা বিষয়ে অধিকাংশ সময় ভুল করে থাকি। ভুলটা সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। ফলে যা জানলাম, সেটাকেই সত্য বলে মেনে নেই। এটা এক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত।
জানা বিষয়কে যুক্তি, বুদ্ধি ও তথ্যের ভিত্তিতে বিচার বিশ্লেষণ করলে তবেই সত্যে পৌঁছানো সম্ভব। সত্যে পৌঁছানোর এই প্রক্রিয়া অধিকাংশ সময় আমরা অনুসরণ করি না। ফলে, যেটা সত্য বলে ভাবি, তা অধিকাংশ সময়, হয় মিথ্যা হয়ে যায়, নতুবা আপাত সত্য বলে চিহ্নিত হয়ে যায়। কখনও কখনও বিষয়টি সত্য বলেও চিহ্নিত হয়ে যায় বটে, তবে সেটা খানিকটা আন্দাজে ঢিল মেরে আম পারতে সফল হওয়ার মত।
এখন প্রশ্ন হল, আমরা বুঝবো কীভাবে কোনটা তথ্য আর কোনটা সত্য। এটা বুঝতে গেলে আগে যুক্তি, বুদ্ধি, তথ্য এবং বিচার বিশ্লেষণ শব্দগুলোর অর্থ জানা ও বোঝা দরকার।
যুক্তি হল এমন এক ধরনের চিন্তন প্রক্রিয়া যা কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে তথ্যের সঙ্গে মিশে আসা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খুঁজে বের করা যায় এবং সেগুলোকে সহজেই বাদ দেওয়া যায়। ফলে সত্যের কাছে পৌঁছানোর কাজ সহজ হয়ে যায়। আর এই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজন একটি প্রাকৃতিক নিয়ম বা আইন যার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এই নিয়মটা গড়ে উঠে একটা সহায়ক চরম সত্যের ওপর ভিত্তি করে। সেই সত্যটা হল কার্যকারণ সম্পর্ক, যার মূলকথা, কোন কারণ ছাড়া কোন জাগতিক ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়।
বুদ্ধি হল একটি চিন্তন ক্ষমতা, যা নিয়ে মানুষ জন্মায়। ইসলামী ধর্মদর্শন মতে একে ‘ইলহাম’ বলা হয়। সূরা আশ শামস্ অনুযাযী আল্লাহ এই ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠান, যা ব্যবহার করলে সত্য মিত্যার বা ন্যায় অন্যায় পৃথক করা যায়। এই ক্ষমতাকে যে যথাযথভাবে অর্থাৎ ন্যায় সঙ্গত ভাবে ব্যবহার করতে পারে সে সফল হয়। অর্থাৎ সত্যে পৌঁছাতে পারে। আর যে সেভাবে পারে না, সে ব্যর্থ হয়।
আধুনিক যুক্তিবিজ্ঞান এই চিন্তন ক্ষমতাকে ‘সহজাত জ্ঞান’ বলে অভিহিত করে। মানুষ জন্মানোর সময় এই চেতনার খাতা শূন্য বা ফাঁকা থাকে। চিন্তন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এই লৌকিক জগৎ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যৌক্তিক প্রক্রিয়ায় বিচার বিশ্লেষণ করলে বেরিয়ে আসে আসল সত্য। এই সত্য একটু একটু করে চেতনার শূন্য খাতায় জমা হতে থাকে। এই সত্য যত জমা হয়, আমরা তত শিক্ষিত হতে থাকি। এই প্রক্রিয়া চলে আজীবন ধরে।
‘তথ্য’কে আমরা ইংরেজিতে ‘ইনফর্মেশন’ বলে থাকি। আমরা কোন বিষয়কে দেখা বা শোনার বা পড়ার মধ্য দিয়ে তা সংগ্রহ করি। সাধারণভাবে আমরা এই তথ্য সংগ্রহের সাথে সাথে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই। ফলে সিদ্ধান্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল হয়ে যায়।
এই ভুল এড়াতে গেলে একজন মানুষকে যথাক্রমে এই যুক্তি, বুদ্ধি ও তথ্যের সাহায্যে বিচার বিশ্লেষণ করে সত্যাসত্য যাচাই করতে হয়। এবং পরিশেষে তার প্রয়োগ সম্ভব হলে, তা করে, সেটাকে গ্রহণ বা বর্জন করতে হয়। এভাবে যখন কোন বিষয় গ্রহণ বা বর্জন করা হয় তখনই সত্য অর্জন হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত করা যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন