নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলমানদের প্রবেশাধিকার দেননি বিদ্যাসাগর - এ অভিযোগ কার?
সঠিক ও জরুরি মূল্যায়ন। ইতিহাস খুঁড়ে এভাবেই সত্য বেরিয়ে আসুক, মিথের অবসান ঘটুক।
Anirban Choudhury এখানে কোন্ সত্য বের হলো, যা মাটিতে চাপা পড়ে ছিল? এতো প্রকাশ্য সত্য। এ ব্যাপারে কোনও মিথ নেই। কোনও মুসলিম, যারা দাবি করে আমরা পিছিয়ে পড়েছি, পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার সুযোগ না পাওয়ায়, তারা বিদ্যাসগরকে দোষ দিতে যান না। যাবেনই বা কেন? কারণ, বিদ্যাসাগর তো দাবি করেননি যে, তিনি মুসলিম সমাজের সংস্কার ও সেখানে নবজাগরণ ঘটানোর উদ্দেশ্যে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
যাঁরা বিদ্যাসাগরকে সমালোচনা করেন সেটার একটা নির্দিষ্ট দিক আছে। এই বিষয়টার জন্ম দিয়েছেন তারা, যারা বিদ্যাসাগরের প্রশংসা করতে গিয়ে তাঁকে মানব থেকে মহামানব এবং সেখান থেকে অতিমানবীয় চেহারায় তুলে ধরতে গিয়েছেন। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। যুগকে একশ শতাংশ অতিক্রম করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। বিদ্যাসাগরও পারেননি। একথা, এই অতিভক্তরা মনে রাখেনি।
তাই তাঁর মূল্যায়ন করতে গিয়ে নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া হল বাংলার সমাজ, ধর্ম ও শিক্ষা সংস্কারক হিসাবে বিদ্যাসাগর সমালোচনার উর্দ্ধে। এখন এই যে বলা হল, ‘বাংলার সমাজ’ ‘বাংলার ধর্ম’ ও বাংলার শিক্ষা’র সংস্কারের কথা — এই দাবি কি বিদ্যাসাগর নিজে কোন জায়গায় কোনদিন করেছেন? করেননি। কারণ, তিনি জানতেন, এই বাংলার সমাজ, ধর্ম ও শিক্ষা মানে শুধু হিন্দুর সমাজ, ধর্ম ও শিক্ষাকে বোঝায় না। কারণ, এই বাংলায় শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন না। তিনি জানতেন এই বাংলায় হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুপাত প্রায় সমান। তাঁর লেখায় তাই শুধুমাত্র ‘হিন্দু ধর্ম সমাজ শিক্ষা’ কথাটা এসেছে বার বার। শুধমাত্র ‘বাংলার’ কথাটা আসেনি।
অথচ, বিদ্যাসাগরের প্রতি অতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে তারা তাঁকে বাংলার সমাজ, ধর্ম ও শিক্ষার মহান সংস্কারক বলে বসলেন। এই মূল্যায়নের সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ। এখানেই চলে এসেছে একটি অমোঘ প্রশ্ন — তিনি তো মুসলমান সমাজের ধর্ম, সমাজ ও শিক্ষা বিষয়ে কোন আন্দোলন করেননি। তাহলে তাকে ‘বাংলার সংস্কারক’ বলা হচ্ছে কেন? আর এরই সূত্র ধরে প্রশ্ন উঠে আসে, কেন করেননি? অন্নদাশঙ্কর সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। এটা দোষের কিছু নয়। এটা একটা সীমাবদ্ধ। আর এই সীমাবদ্ধতার দায় বিদ্যাসাগরেরও নয়। কারণ, বিদ্যাসাগর দাবি করেননি যে, বাংলার সমস্ত সম্প্রদায়ের সমাজ ও ধর্ম সংস্কারের দায়িত্ব তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাহলে দায় কার?
সেটার দায়, তাঁর মূল্যায়ন করার সময় যারা বিদ্যাসাগরকে মানব থেকে অতিমানব রূপে দেখানোর এবং ‘সমগ্র বাংলার সংস্কারক’ রূপে দেখানোর অনৈতিক চেষ্টা করেছেন, তাদের।
শী বা শী ষ বাবু বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অন্নদাশঙ্কর রায়ের উত্থাপিত সীমাবদ্ধতাটুকু মানতে পাচ্ছেন না। কিন্তু মানুন আর না মানুন এটাই ইতিহাস। হিন্দু কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজের রূপান্তরের এটাই ইতিহাস। ইতিহাস বলছে, হিন্দু কলেজ থাকা কালীন সেখানে শুরুতেই উচ্চবর্ণের হিন্দু ছাড়া অন্য কোন ছাত্র ভর্তি হতে পারত না। বিদ্যাসাগর এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। কারণ, তিনি সাহস পাননি। কেন পাননি তা তার জীবনের উল্লেখযোগ্য সংস্কার আন্দোলনগুলোর ইতিহাস পড়লেই জানা যায় কীভাবে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। এবং এটা ঠিক, যে তিনি যেটুকু করতে পেরেছেন, তা সম্ভব হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলেন বলেই। না হলে, মুসলিমদের মত শুধু নয়, তার চেয়েও বেশি মাত্রায় ভারতীয় হিন্দু সমাজ পিছিয়ে পড়াই থেকে যেত। এর প্রমাণ বাংলা বাইরে উত্তর ভারত জুড়ে সেই অবস্থা এখনও বিরাজ করছে।
তাছাড়া, যিনি দোষ দিয়েছেন বা অভিযোগ করেছেন তিনি (অন্নদাশঙ্কর রায়) কি মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি?
উল্টে এই লেখার মধ্যে যে দুজন মুসলিম লেখকের কথা বলা হল তারা তো বিদ্যাসাগরকে দোষ দেননি। উল্টে তাঁরা এই অভিযোগের বিরুদ্ধে বলেছেন এবং তাঁদের পূর্বপুরুষদের হয়ে আত্মসমালোচনাই করেছেন।
লেখাটা পড়ে অবাক হলাম এই ভেবে যে,
১) যাঁরা আত্মসমালোচনা করেছেন এবং করছেন প্রতিদিন, তাদেরই দোষ দেখিয়ে আত্মসমালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে!
২) অভিযোগ করলেন যিনি, তিনি মুসলিম সমাজের কেউ নয়, অথচ তাঁর বক্তব্যকে মুসলিম সমাজের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলো, এবং প্রশ্ন করা হলো : নিজেদের পূ্বপুরুষদের আয়নার সামনে না দাঁড় করিয়ে সব দোষ বিদ্যাসাগরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে হবে? এটা কেমন প্রশ্ন হল! উদ্দেশ্যই বা কী? প্রশ্ন তুললেন আপনারা, আর সেই প্রশ্ন তোলার দায় চাপিয়ে দিলেন মুসলিমদের উপর?
উল্টে এই লেখার মধ্যে যে দুজন মুসলিম লেখকের কথা বলা হল তারা তো বিদ্যাসাগরকে দোষ দেননি। উল্টে তাঁরা এই অভিযোগের বিরুদ্ধে বলেছেন এবং তাঁদের পূর্বপুরুষদের হয়ে আত্মসমালোচনাই করেছেন।
লেখাটা পড়ে অবাক হলাম এই ভেবে যে,
১) যাঁরা আত্মসমালোচনা করেছেন এবং করছেন প্রতিদিন, তাদেরই দোষ দেখিয়ে আত্মসমালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে!
২) অভিযোগ করলেন যিনি, তিনি মুসলিম সমাজের কেউ নয়, অথচ তাঁর বক্তব্যকে মুসলিম সমাজের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলো, এবং প্রশ্ন করা হলো : নিজেদের পূ্বপুরুষদের আয়নার সামনে না দাঁড় করিয়ে সব দোষ বিদ্যাসাগরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে হবে? এটা কেমন প্রশ্ন হল! উদ্দেশ্যই বা কী? প্রশ্ন তুললেন আপনারা, আর সেই প্রশ্ন তোলার দায় চাপিয়ে দিলেন মুসলিমদের উপর?
তবে, ভালো লাগলো এই ভেবে যে, হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম হাজি মহম্মদ মহসিন, যিনি তাঁর দানকে মুসলিম সমাজের কল্যাণে প্রদান করলেও তাকে ‘কেবলমাত্র মুসলিমদের’ বা ‘শুধুমাত্র ধর্মশিক্ষার’ জন্য বলে যাননি। জনশিক্ষার জন্য বলা হয়েছে। এই ব্যতিক্রম তো হিন্দু সমাজে নেই। এটাই তো সত্য। তাহলে আত্মসমালোচনা কাদের করা দরকার? শুধুমাত্র মুসলিমদের? প্রশ্নটা রাখলাম।
অবাক হলাম, লেখক অভিযোগ করলেন যে, মুসলিমরাই অভিযোগ করেছেন। এবং আপনি সেটাকেই সমর্থন করে সত্য খুঁড়ে বের করার দাবি করলেন। বুঝলাম না, আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইলেন?
মনে রাখা দরকার, যারা (মুসলিম সমাজের) পাশ্চাত্য শিক্ষার বিরুদ্ধে, তারা ঈশ্বরচ্ন্দ্র বিদ্যাসাগরকে দোষ দিতে যাবেন কোন দুঃখে? কারণ, অভিযোগ সত্য হলে তো এটা প্রমাণ হয় যে, বিদ্যাসাগর তাদের উপকার করেছেন।
এও মনে রাখা দরকার, এখনও যারা বিজ্ঞান শিক্ষার চেয়ে ধর্ম দর্শন শিক্ষাকে জরুরি বলে মনে করেন, তারা ভুলেও এ অভিযোগ করেন না। আর করেন না, ওই উপকার করার কথা মাথায় রেখেই।
অবাক হলাম, লেখক অভিযোগ করলেন যে, মুসলিমরাই অভিযোগ করেছেন। এবং আপনি সেটাকেই সমর্থন করে সত্য খুঁড়ে বের করার দাবি করলেন। বুঝলাম না, আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইলেন?
মনে রাখা দরকার, যারা (মুসলিম সমাজের) পাশ্চাত্য শিক্ষার বিরুদ্ধে, তারা ঈশ্বরচ্ন্দ্র বিদ্যাসাগরকে দোষ দিতে যাবেন কোন দুঃখে? কারণ, অভিযোগ সত্য হলে তো এটা প্রমাণ হয় যে, বিদ্যাসাগর তাদের উপকার করেছেন।
এও মনে রাখা দরকার, এখনও যারা বিজ্ঞান শিক্ষার চেয়ে ধর্ম দর্শন শিক্ষাকে জরুরি বলে মনে করেন, তারা ভুলেও এ অভিযোগ করেন না। আর করেন না, ওই উপকার করার কথা মাথায় রেখেই।
চাপা পড়ে যাওয়া তথ্য যদি কিছু এ লেখায় থেকে থাকে, (আমার মতে অবশ্যই আছে) তবে তা এটাই যে, বাংলা তথা ভারতে শিক্ষার প্রসারে হাজী মোহাম্মদ মহসিন এর অবদান কতটা এবং তিনি বিদ্যাসাগরের মধ্যে যে সীমাবদ্ধতা ছিল তাকেও তিনি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। কারণ, এটাই অধিকাংশ মানুষ জানেন না।
আপনি কি এটার কথাই বললেন, সাথি?
আপনি কি এটার কথাই বললেন, সাথি?
লেখার প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন