প্রাচীন ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিষ্ঠা, পৃষ্ঠপোষকতা ও ধ্বংস করেন কারা?
Who established, sponsored and destroyed the universities of ancient India?
Kapil Mandal প্রাচীনতম নয়, প্রাচীনতমদের মধ্যে অন্যতম। প্রাচীনতা ও উন্নতির দিক থেকে দেখলে গ্রীস প্রথম। তারপর চীন এবং ভারতের স্থান। ১১ শ সালের পর নয়, ঋক বৈদিক পরবর্তী সময় থেকেই ভারতে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা পিছুতে থাকে। ১১০০ সালের পর যারা শাসক ছিল, তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুবাদ গ্রন্থ হিসেবে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার সংস্কৃতি নতুন করে জেগে ওঠে এবং আরব ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে ইউরোপে।
মৌর্যদের আমলে পুনরায় ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতির ব্যাপক উন্নতি হয়। গুপ্ত আমলের প্রথম দিক পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে গুপ্ত শাসকদের ব্রাহ্মণ্যবাদী মতবাদের প্রভাবে তা আবার নষ্ট হতে শুরু করে। এ সময় বহু বিশ্ববিদ্যালয় এবং লাইব্রেরী এরা নষ্ট করে ফেলে। বৌদ্ধ পন্ডিত সহ অসংখ্য শিক্ষাবিদ ভারত ছেড়ে পূর্ব এশিয়ায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আর তার ফলে বৌদ্ধধর্ম কেন্দ্রিক ভারতীয় উন্নত সংস্কৃতি পূর্ব এশিয়ার ছড়িয়ে পড়ে। ভারত বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রায় বধ্যভূমিতে পরিণত হয়।
উল্লেখ্য, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বললেন, সেগুলোর প্রায় প্রত্যেকটাই আসলে বৌদ্ধবিহার। বৌদ্ধ ধর্ম দর্শন সহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান হতো। আর এগুলো ভেঙে দিয়েছিলেন পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্ম বিরোধী ব্রাহ্মণ্যবাদী গুপ্ত শাসকরা। ‘তথাকথিত হিন্দু’ তথা ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসকদের তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ পাওয়া মুশকিল ভারতীয় ইতিহাসের পাতায়।
আর বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেই একটা দেশ জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে — এটা প্রমাণ হয় না। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সিলেবাস ফলো করা হতো তার বিশ্লেষনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে এই উন্নতির প্রকৃত স্বরূপ। ঋক বৈদিক পরবর্তী যুগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা (ইতিহাস, ভূগোল, শিক্ষা বিজ্ঞান প্রকৃতি বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি) হতো না। রাষ্ট্রদর্শন চর্চায় এনেছিলেন মৌর্য আমলে কৌটিল্য। পরবর্তীতে জিয়াউদ্দিন বরনি (১২৮৫-১৩৫৭) সুলতানি যুগে। প্রাচীন যুগের বাকি অংশ জুড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জায়গা দখল করে নেয় জ্যোতিষ শাস্ত্র। এবং এই সময় মূলত জ্যোতিষ শাস্ত্র (জ্যোতির বিজ্ঞান নয়), নীতিশাস্ত্র এবং ধর্ম দর্শন এবং ধর্মকেন্দ্রিক সাহিত্য চর্চা ছিল তাদের পাঠ্যসূচির মূল বিষয়।
আরবের আব্বাসীয় বংশের শাসকদের অবদান হলো, এরা এই তিন ক্ষেত্রের জ্ঞান ভান্ডারকে নতুন করে চর্চায় নিয়ে আসে, (যা ১১ শতকের ভারতীয় শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্ভব হয়েছিল একের পর এক ভারতীয় গ্রন্থ তারা আরবি ও ফারসি ভাষায় অনুবাদ করায়)। এই অনুবাদ আরবীয়দের হাত ধরে ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নতুন করে মানুষ জানতে পারে মানব সভ্যতার জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার ইতিহাসে এই তিন ক্ষেত্রের প্রাচীন সভ্যতাগুলোর (ভারতের ক্ষেত্রে ঋক বৈদিক যুগ ও মৌর্য যুগের) অবদান কতটা ছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন