বিদ্যাসাগরের ইসলামোফোবিয়া বিষয়ে শীবাশীষ বসু ও আলী হোসেন
Shibashish Basu and Ali Hossain on Islamophobia in Vidyasagar
শিবাশীষ বসু বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ কোন্ মুসলিম ঐতিহাসিক বা বুদ্ধিজীবী তুলেছেন, সেটা জানা গেল না। যে কারণে পরামর্শ দিলেন এবং প্রশ্ন তুললেন, “নিজেদের পূ্বপুরুষদের আয়নার সামনে না দাঁড় করিয়ে সব দোষ বিদ্যাসাগরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে হবে?” সেটাও পরিষ্কার হল না। কারণ, আমার জানা মতে, প্রত্যেক শিক্ষিত মুসলিম জানে যে, এর দায়, তাদের পূর্বপুরুষদের, যাঁরা আধুনিক শিক্ষাকে গ্রহণ করতে পারেননি। যদিও তার একটি সুনির্দিষ্ট মনস্তাত্বিক সমস্যা ছিল, যেটা তারা অতিক্রম করতে পারেননি। এটা তাদের সমস্যা, বিদ্যাসাগরের নয়।বিস্তারিত মতামত এখানে। পড়ার পর আপনার সুচিন্তিত মতামত জানালে বাধিত হবো।
----------xx----------
Ali Hossain বাবু, অধমের লেখাকে এতোটা গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এবার আপনার প্রবন্ধের বিষয়ে আসা যাক।
প্রথমত, অন্নদাশঙ্কর রায় ছাড়াও বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক আহমদ শরীফও বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন যে, "তাঁর মেট্রোপলিটান স্কুলেও সম্ভবত একই আশঙ্কায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ ছিল।" আপনি তাঁর 'বিদ্যাসাগরজীবনের পুঁজি ও পাথেয় : জেদ ও নাস্তিক্য' প্রবন্ধটি পড়ে নেবেন।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সাইটগুলোর সঙ্গে আপনি বোধহয় পরিচিত নন। পরিচিত থাকলে দেখতেন, ওই অন্নদাশঙ্কর ও শরীফের বক্তব্যের তথ্যসূত্র নিয়ে শয়ে শয়ে লেখা পোস্ট হয় যাতে বিদ্যাসাগরকে ইসলামোফোবিক হিসেবে অপবাদ দেওয়া হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, হিন্দু কলেজের সঙ্গে বিদ্যাসাগর কস্মিনকালেও জড়িত ছিলেন না, তাই কাকে সেখানে ভর্তি করা হবে, কাকে হবে না সেই নিয়ে বিদ্যাসাগরের অভিমত রাখবার কোনো স্কোপই ছিল না।
বাকি রইলো বিদ্যাসাগরকে অতিমানব বানানোর ব্যাপারটা। এ সম্বন্ধে আপনি যা লিখেছেন তার সঙ্গে আমি সহমত।
শিবাশীষ বসু, আপনি আপনার মূল লেখায় বললেন, আহম্মেদ শরীফ অভিযোগ নয়, অনুযোগ করেছেন। আহম্মদ শরীফ ‘সম্ভবত’ কথাটা ব্যবহার করেছেন। আর এখন বললেন, অভিযোগ করেছেন। তাহলে আমি কোনটা সত্যি ধরবো? অনুযোগ, না অভিযোগ? এই দুটো শব্দের মানে তো এক নয়। এবং ‘অনুযোগ’ ও ‘সম্ভবত’ শব্দ দুটো ব্যবহার করে আহম্মেদ শরীফ তো এই বিষয়ে তাঁর সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলেই ইঙ্গিত করেছেন।
প্রথমত, অন্নদাশঙ্কর রায় ছাড়াও বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক আহমদ শরীফও বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন যে, "তাঁর মেট্রোপলিটান স্কুলেও সম্ভবত একই আশঙ্কায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ ছিল।" আপনি তাঁর 'বিদ্যাসাগরজীবনের পুঁজি ও পাথেয় : জেদ ও নাস্তিক্য' প্রবন্ধটি পড়ে নেবেন।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সাইটগুলোর সঙ্গে আপনি বোধহয় পরিচিত নন। পরিচিত থাকলে দেখতেন, ওই অন্নদাশঙ্কর ও শরীফের বক্তব্যের তথ্যসূত্র নিয়ে শয়ে শয়ে লেখা পোস্ট হয় যাতে বিদ্যাসাগরকে ইসলামোফোবিক হিসেবে অপবাদ দেওয়া হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, হিন্দু কলেজের সঙ্গে বিদ্যাসাগর কস্মিনকালেও জড়িত ছিলেন না, তাই কাকে সেখানে ভর্তি করা হবে, কাকে হবে না সেই নিয়ে বিদ্যাসাগরের অভিমত রাখবার কোনো স্কোপই ছিল না।
বাকি রইলো বিদ্যাসাগরকে অতিমানব বানানোর ব্যাপারটা। এ সম্বন্ধে আপনি যা লিখেছেন তার সঙ্গে আমি সহমত।
-------------xx-----------
শিবাশীষ বসু, আপনি আপনার মূল লেখায় বললেন, আহম্মেদ শরীফ অভিযোগ নয়, অনুযোগ করেছেন। আহম্মদ শরীফ ‘সম্ভবত’ কথাটা ব্যবহার করেছেন। আর এখন বললেন, অভিযোগ করেছেন। তাহলে আমি কোনটা সত্যি ধরবো? অনুযোগ, না অভিযোগ? এই দুটো শব্দের মানে তো এক নয়। এবং ‘অনুযোগ’ ও ‘সম্ভবত’ শব্দ দুটো ব্যবহার করে আহম্মেদ শরীফ তো এই বিষয়ে তাঁর সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলেই ইঙ্গিত করেছেন।
এখন আমার প্রশ্ন হল, এমন তথ্যের ভিত্তিতে একটি সম্প্রদায়ের সমগ্র অংশকে অভিযোগকারী হিসাবে দেখানো কি খুব যৌক্তিক হবে?
বাংলা দেশের ওয়েবসাইটগুলোতে কী লেখা হয়েছে, সত্যিই আমি জানি না। আপনি কি লিঙ্ক শেয়ার করে আমাকে জানতে সাহায্য করতে পারেন?
পরিশেষে বলি, যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তা বলে থাকেন তবে তাঁর বা তাঁদের নাম উল্লেখ করেই সমালোচনা করা উচৎ বলে আমি মনে করি। কারণ, একজন বা কোন এক গোষ্ঠীর মতামত সমগ্র অংশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যেমন অযৌক্তিক, তেমনি আধুনিক ইতিহাস চর্চার নিরিখে নীতি বিরুদ্ধ কাজ। আপনি কী বলেন?
জানার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন। আনন্দে থাকুন। শুভকামনা রইল।
---------xx---------
Ali Hossain দেখলেন তো, আপনার মুল প্রবন্ধের সবকটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেওয়ার পরে আপনি কেমন গোলপোস্ট পালটে নিলেন? অনুযোগ আর অভিযোগের তত্ত্ব বিচার করতে বসলেন !😀
বাংলাদেশের সোস্যাল সাইটগুলো একটু খুঁজে দেখুন না। আহমদ ছফা, সালিমুল্লাহ খানের লেখা পড়ুন। দেখবেন কেমন হাজার হাজার শেয়ার হয়। এক গোষ্ঠীর মতামতের বিরুদ্ধে অন্যেরা রুখে দাঁড়ান না বলেই সকলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে।
----------xx---------
শিবাশীষ বসু এটা কোন প্রবন্ধ নয়, আপনার পোষ্টের প্রেক্ষিতে অনির্বাণ চৌধুরীর মন্তব্য সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া। এখানে গোলপোস্ট নির্দিষ্ট করা আছে। অর্থাৎ আছে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন। আপনি সেটা সম্পূর্ন বুঝতে পারেননি বলে আমার মনে হয়েছে। তাই আরও নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করেছি এর ঠিক আগের মন্তব্যে। অর্থাৎ আমি গোলপোস্ট পাল্টাইনি। সম্ভবত আপনি সেটা দেখতে ভুল করেছেন অথবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এড়িয়ে গেছেন।
এবারও কৌশলে এড়িয়ে গেলেন বলেই মনে করছি। আপনার মত বিচক্ষণ মানুষ নিশ্চয়ই জানেন যে, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেট থেকে এই তথ্য খুঁজে বের করা কতটা কঠিন কাজ। যেটা আপনি দিলে অতি সহজেই পেতে পারি এবং আপনার পোষ্টের বিষয়ে যে প্রশ্নগুলো তৈরি হয়েছে তার একটার উত্তর অন্তত সহজেই পেয়ে যাই। কারণ, সেগুলো আপনার সংগ্রহে আছে বলে আপনি দাবি করছেন।
তবু গতকাল থেকে খুঁজে চলেছি। এখনও পর্যন্ত আপনার মতের সমর্থনে কোন তথ্য পায়নি।
অন্যেরা প্রতিবাদ করেন না, এটা আপনি ভাবছেন কীভাবে? আপনার পক্ষে কী সবার মতামত দেখতে পাওয়া সম্ভব? আপনি কি আমার মতামত এবিষয়ে আগে কোনোদিন পেয়েছেন? পাননি। এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যাদের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়নি। হয়নি মানে কী তারা নেই? আর হয়নি বলে কী আপনি এভাবে সিদ্ধান্ত করতে পারেন, “এক গোষ্ঠীর মতামতের বিরুদ্ধে অন্যেরা রুখে দাঁড়ান না বলেই সকলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে।”?
আমার মতে, একজন লেখকের কোন লেখা যাতে কোন বিভেদপন্থি মানুষের হাতের অস্ত্র না হয়ে ওঠে, সে বিষয়ে সতর্ক ও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। এবং সেভাবেই শব্দ চয়ন ও প্রসঙ্গ নির্দিষ্ট করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয়েছে, এই জায়গায় আপনার লেখার মধ্যে কিছু দুর্বলতা আছে। সেকারণেই বিভেদপন্থীরা দারুণ ভাবে উৎফুল্ল হয়েছেন। এবং বিভিন্ন তির্যক মন্তব্য করছেন। তাদের বিভিন্ন মন্তব্য দেখলেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। আর একারণেই কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্ন করে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলাম আপনার লেখার মধ্যে যে দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার জন্য বিভেদপন্থীরা দারুণ উল্লোসিত হচ্ছেন, তা আপনার ইচ্ছাকৃত না অসাবধানতাবশত।
যাই হোক, ভালো থাকুন। এবং মানুষের পক্ষে থাকবেন, কোন সম্প্রদায়ের পক্ষে নয় —এই আশায় এই আলোচনা শেষ করছি। ধন্যবাদ।
--------xx--------
Ali Hossain নিন, কৃশানু দুজনের লেখা উদ্ধার করে দিয়েছেন। এবার কি বলবেন? খুঁজলে এমন প্রচুর পাবেন।
--------xx-------
শিবাশীষ বসু আপনার লেখার বিষয় আর কৃষানু বাবু যে বিষয়ের লেখা এখানে শেয়ার করলেন আপনার বক্তব্যের প্রমাণ হিসাবে - দুটো তো আলাদা!
আপনার লেখার বিষয় ছিল মুসলিমদের শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণ হিসাবে মুসলিমরা বিদ্যাসাগরকে দায়ী করেছেন। এই ভাবনার বিরুদ্ধেই আমি প্রশ্ন তুলেছি। যার উত্তর এখনও আমি পাইনি। কারণ, আপনি বিষয়টি সম্ভবত এড়িয়ে যাচ্ছেন।
আর কৃশানু বাবু যা শেয়ার করলেন তার বিষয় হল বিদ্যাসাগর উপনিবেশিক শাসকদের পৃষঠপোষক ছিলেন কিনা সে সম্পর্কে আলোচনা।
এবং এক্ষেত্রেও তিনি (আমিনুল ইসলাম) যে সমস্ত লেখকের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন তাদের একজনও কোন মুসলিম ঐতিহাসিক নন। গােপাল হালদার, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, কনক মুখোপাধ্যায়, অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় — এরা কেউই মুসলিম নন। দায় যদি দিতেই হয় তবে তো এঁদের দিতে হবে! এঁদের কাছে প্রশ্ন করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে কেন? এটাই আমার প্রশ্ন ছিল।
যদিও এঁরা (গোপাল হালদার ও অন্যান্যরা) যে সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন সেগুলোর অধিকাংশই সত্য। এবং এই ধরনের সীমাবদ্ধতা জগতের প্রত্যেক মহাপুরুষদের মধ্যে কিছু না কিছু থাকে। এটা আহা মরি কিছু নয়। আমি আগেই বলেছি, কোন মহাপুরুষ একশ শতাংশ যুগকে অতিক্রম করতে পারেন না। এবং পরবর্তীতে তাকে নিয়ে আলোচনা ওঠে। এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে গেল গেল রব তোলার কিছু নেই।
আসুন মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মুসলিমদের আধুনিক শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার বিষয়ে এখানে (যেটা আমিনুল ইসলাম লিখেছেন, আর সাবির হোসেন শেয়ার করেছেন এবং কৃসানু বাবু আমাকে শেয়ার করেছেন) যেটুকু আছে তা তো অন্নদাশংকর রাযের বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেটা আপনার লেখাতেও আছে। এর দায় মুসলিমদের (আমিনুল বা সাবির হোসেনদের) দেওয়া তো যুক্তি যুক্ত নয়। কারণ, আমিনুল ইসলাম তাদের লেখা উধৃত করেছেন মাত্র। মনে রাখতে হবে, এঁরা অন্নদাশংকর রায়ের মত কোন ‘আকর গ্রন্থ’ রচনা করেননি। তাই দায়টা তাদের নয়। উল্টে এরা তো বিদ্যাসাগরকে দায় মুক্ত করেছেন এই বলে যে, “মুসলমানদের সম্পর্কে হিন্দু উচ্চবর্ণের এলার্জি ছিল। ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর তা ছিল না।”
এরপরও আপনারা এঁদের কীভাবে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করান তা আমার বোধের মধ্যে আসছে না।
------xx--------
আরও মতামত এখানে আছে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন