নামতার নামাবলী
নামতা। পড়িনি এমন মানুষ আছেন? বোধ হয় নেই। নামটা বললেই এক এ চন্দ্র, দুই এ পক্ষ... ইত্যাদি দিয়ে শুরু করি। এবং শেষ করি ‘দশ এ দিক’ দিয়ে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এই নামতার প্রকৃত অর্থ আমরা কি জানি? এই কথার উত্তরও অতি সোজা। না, সবাই জানি না। অর্থাৎ এমন মানুষ অসংখ্য আছেন, যারা নামতার অন্তর্নিহিত অর্থ জানেন না। আসুন জেনে নেয়া যাক নামতায় পাওয়া চরিত্রগুলো আসলে কী বা কারা!
১) এক এ চন্দ্র।
অর্থাৎ একটি চাঁদ। কোনো শিশুকে রাতের আকাশের চাঁদকে দেখিয়ে সহজেই ‘এক এ চন্দ্র’ বুঝিয়ে ফেলা সম্ভব । কিন্তু দুইয়ে পক্ষ? একটু কঠিন কাজ।
২) দুই এ পক্ষ।
অর্থাৎ দুটি পক্ষ । এই দুটি পক্ষ হলো শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ । অমাবশ্যার পরদিন থেকে চাঁদের আকার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অবশেষে পৌঁছায় পূর্ণিমাতে, আই অমাবশ্যার পরদিন থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় শুক্লপক্ষ। হিন্দু ধর্ম মতে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা হয়ে থাকে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে।
আবার পূর্ণিমার পরদিন থেকে চাঁদের আকার ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে এবং অবশেষে পৌঁছায় অমাবস্যায়, এই পূর্ণিমার পরদিন থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় কৃষ্ণপক্ষ।
৩) তিন এ নেত্র।
অর্থাৎ তিনটি চোখ। উপরের দুটি ক্ষেত্রে পরিষ্কার বোঝা গেলেও তিন নেত্র বলার সময় দুটি চোখ খুঁজে পাওয়ার পর আরেকটি চোখ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যায়।
কিন্তু দর্শন অনুযায়ী এই তৃতীয় চোখটি হলো জ্ঞান-চোখ (vision)।
৪) চার এ বেদ।
অর্থাৎ চারটি বেদ। এগুলি হলো রিক ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব ।
বেদ হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ। বেদ কথাটির অর্থ হলো জ্ঞান। ইংরজিতে veda শব্দটি এসেছে vidi থেকে, যার অর্থ নলেজ (knowledge) বা জ্ঞান। এই বেদে রয়েছে ১০২৮টি স্তোত্র। হিন্দু ধর্মমতে বেদ মানুষের রচনা নয় স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী। এইজন্য বেদকে ‘নিত্য ও অপৌরুষেও’ বলা হয়। প্রাচীন ঋষিরা ঈশ্বরের বাণী শ্রবণ করেছিলেন এবং তারপর তা বংশপরম্পরায় মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছিল বলে বেদের ওপর নাম শ্রুতি।
৫) পাঁচ এ পঞ্চবান।
পঞ্চবান হলেন মদনদেব, কামের অধিস্টাতা দেবতা। এই পাঁচটি বান হলো , সম্মোহন, উন্মাদন, শোষণ, তপন ও স্তম্ভন।
৬) ছয় এ ঋতু।
অর্থাৎ ছয়টি ঋতু। এই ঋতুগুলি হল গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
৭) সাত এ সমুদ্র।
অর্থাৎ সাতটি সমুদ্র। এই সাতটি সমুদ্র হলো ভারত মহাসগর, উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, Arctic ocen and Antarktic ocen( southern)
৮) আট এ অষ্টবসু।
অর্থাৎ আটজন বসু। এই আটজন বসু হলেন ধর, ধ্রুব, সোম, অনল, অনিল, প্রত্যুষ, প্রভাস ও দ্যু।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী এই আটজন বসু হলেন দেবতা। ধর্মের ঔরসে এবং দক্ষের কন্যা বসুর গর্ভে এরা জন্মগ্রহণ করেন। অষ্টবসুরা মূলত ইন্দ্রের অনুচর হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে একবার বসুগণ বশিষ্ঠের গাভী নন্দিনীকে হরণ করায় বশিষ্টের কোপে গঙ্গার গর্ভে শান্তনুর পূত্ররুপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
বসুরা মানুষ রূপ পাওয়ার জন্য গঙ্গার শরনাপন্ন হয়েছিলেন। তাদের অনুরোধে শান্তনুর ঔরসে গঙ্গার গর্ভে একের পর এক জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু জন্ম হওয়ার পরই গঙ্গা তাদের জলে নিক্ষেপ করেন। ফলে তারা মানব জন্ম থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু শান্তনুর বাধায় গঙ্গা অষ্টম পুত্রকে ভাসিয়ে দিতে পারেননি ,কিন্তু তিনি শান্তনুকে ত্যাগ করে স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করেন। এই অষ্টম পুত্রই হলেন দ্যু বসু মানুষরূপে যিনি দেবব্রত এবং তিনিই হলেন মহাভারতের ভীষ্ম।
বসুরা মানুষ রূপ পাওয়ার জন্য গঙ্গার শরনাপন্ন হয়েছিলেন। তাদের অনুরোধে শান্তনুর ঔরসে গঙ্গার গর্ভে একের পর এক জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু জন্ম হওয়ার পরই গঙ্গা তাদের জলে নিক্ষেপ করেন। ফলে তারা মানব জন্ম থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু শান্তনুর বাধায় গঙ্গা অষ্টম পুত্রকে ভাসিয়ে দিতে পারেননি ,কিন্তু তিনি শান্তনুকে ত্যাগ করে স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করেন। এই অষ্টম পুত্রই হলেন দ্যু বসু মানুষরূপে যিনি দেবব্রত এবং তিনিই হলেন মহাভারতের ভীষ্ম।
৯) নয় এ নব গ্রহ।
অর্থাৎ সৌরজগতের নয়টি গ্রহ। এগুলি হলো বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো।
১০) দশ এ দিক।
অর্থাৎ দশটি দিক। এই দশটি দিক হলো ১) পূর্ব, ২) পশ্চিম, ৩) উত্তর ৪) দক্ষিণ, ৫) ঈশান, ৬) বায়ু, ৭) অগ্নি, ৮) নৈ্ঝত, ৯) ঊর্ধ্ব ও ১০) অধঃ ।
প্রথম চারটে দিকের কথা আমরা সবাই জানি। এবং সহজেই তা নির্দেশ করতে পারি। অন্যকে বোঝাতেও পারি।
৫) ঈশান - উত্তরপূর্ব। ৬) বায়ু - উত্তরপশ্চিম। ৭) অগ্নি - দক্ষিণপূর্ব ৮) নৈ্ঝত - দক্ষিনপশ্চিম। ৯) ঊর্ধ্ব - মাথার উপর। ১০) অধঃ - পায়ের তলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন