পুঁজিবাদের প্রধান শত্রু :
পৃথিবীজুড়ে পুঁজিবাদীদের প্রধান শত্রু হলো সাম্যবাদ। তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর প্রধান শত্রু হলো সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলো। পৃথিবীতে সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলিকে মোটা দাগে দুই চেহারায় দেখা যায়। একটি বামপন্থী রাজনৈতিক শক্তি রূপে, অন্যটি ইসলামের সাম্যবাদী দর্শনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক শক্তি রূপে। এই দুটো শক্তিই কম বেশি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমার্থক ও পৃষ্ঠপোষক। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অপেক্ষাকৃত অধিক পরিমাণে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমানাধিকারের কথা বলে। যেকোনো ধরনের বিভাজন ও শোষনের এরা বিরোধীতা করে।
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশে আমরা বামপন্থী রাজনৈতিক দল দেখতে পাই। কমিউনিস্ট, সোসালিষ্ট ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে তৈরি ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে আমরা এই বামপন্থী দলগুলোকে দেখতে পাই। আমাদের দেশে এরাই সিপিআই, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি ইত্যাদি নামে পরিচিত।
কিন্তু উদারপন্থী এবং সাম্যবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী ইসলামিক শক্তিগুলোকে আমরা সেভাবে দেখতে পাই না। কারণ, এগুলোর কথা আমেরিকান লবি দ্বারা সমর্থিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত কর্পোরেট মিডিয়া প্রচারে আনে না। আনলেও তাদেরকে স্বৈরাচারী, একনায়কতন্ত্রী এবং গণতন্ত্র বিরোধী ইত্যাদি ট্যাগ লাগিয়ে প্রচার করে। লিবিয়ার মোঃ গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, সিরিয়ার হাফিজ আল আসাদ, বুর্কিনা ফাসোর ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরে, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পরবর্তী শাসকরা এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তবে এইসব শাসকদের মতাদর্শগত ভিন্নতা রয়েছে। যেমন রয়েছে পুঁজিবাদী দেশগুলোর পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও।
অথচ পুঁজিবাদের প্রধান অস্ত্রই হল মানুষকে বিভাজিত করা ও অর্থনৈতিক শোষণকে সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে যাওয়া। গরিব মানুষকে এরা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এমনকি নারী পুরুষেও বিভাজিত করে। উদ্দেশ্য একটাই। শ্রমজীবী মানুষের শক্তিকে দুর্বল করে দেওয়া। কারণ শ্রমজীবী মানুষ যত বিভাজিত হবে, তাদের শক্তি তত দুর্বল হবে। পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হল এই বিভাজন।
দেশে এবং বিদেশে, পুঁজিবাদের বাধা দূর করতে প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ইসলামোফোবিয়া। নিচের দেশে পুঁজিবাদী শাসনকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আরব দেশগুলোও এর বিরোধিতা করে না। উল্টে, যারা এটা করে (ইসলামোফোবিয়া ছড়ায়), তাদের সঙ্গে এদের সখ্যতা বেশি। 
আরব দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকা ইসরাইল ও বর্তমান ভারত সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি বিশ্লেষণ করলেই এটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।
একইভাবে, আমেরিকা গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু পুঁজিবাদের স্বার্থেই আরবের রাজতান্ত্রিক ও অভিজাতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে দারুণ সখ্যতা বজায় রেখেছে চলেছে। অথচ এখানে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। মজার ব্যাপার হলো, আমেরিকা সহ এই পুঁজিবাদী দেশগুলিই গণতন্ত্র নেই বলে এবং স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত করে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া সহ একাধিক দেশের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নাম করে, আক্রমণ করেছে। আর এদের সমর্থন ও মদদ এসেছে কোথা থেকে?  আরবের রাজতান্ত্রিক, অভিজতান্ত্রিক ও কঠোর শরীয়াতি শাসনে শাসিত দেশগুলোর পক্ষ থেকে।
সুতরাং আপনি রাজতান্ত্রিক, অভিজাতান্ত্রিক, না গণতান্ত্রিক এটা বিষয় নয়। বিষয়টি হলো, আপনি পুঁজিবাদের পক্ষে না বিপক্ষে এটাই হল মূল কথা। আরো সহজ করে বললে, আপনি ধনীক (মালিক) শ্রেণির পক্ষে থেকে দেশ শাসন করছেন, না গরিব মানুষের (শ্রমিক শ্রেণির) পক্ষ নিয়ে দেশ শাসন করছেন —এটাই হল আসল কথা।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, পুঁজিবাদী দেশগুলোর মধ্যে কি যুদ্ধ হয় না। উত্তর হল, হয়। সেটা হয় মূলত দুটো কারণে, একটি সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ, অন্যটি 
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন