মৌলবাদের সমর্থকদের উভয় সংকট :
Dual crisis of fundamentalist supporters
সময় বড়ই নির্মম ও নির্মোহ। আফগানিস্তানের তালিবান আর ভারতের বিজেপি যে এক সারিতে অবস্থান করে তা সময়ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। আধুনিক শিক্ষা, রাজনীতি ও চিন্তা চেতনার সঙ্গে তুলনা করলে তারা যে এখনও প্রাচীন যুগের ধ্যান-ধারণাকে বহন করেন, তা জলের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ভারতীয় তথাকথিত ধার্মিক মুসলমান ও তথাকথিত ধার্মিক হিন্দু সম্প্রদায় এই মুহূর্তে এক গভীর সংকটে পড়েছেন। কারণ—
১) কিছু মুসলিম আছেন, যারা প্রকাশ্যে সমর্থন না করলেও আফগান সরকারের নীতিকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতেন না। এবং সেটা করতেন না এই ভেবে যে তারা ইসলাম ধর্মের সমার্থক ও রক্ষক। এই সমস্ত মুসলিম নিজের ধর্মকে প্রিয় ও পবিত্র ইসলাম মনে করেন। ইসলামের কিছু নীতি আদর্শ তাদের কাছে ইতিবাচক মানবিক হিসাবে বিবেচিত হয়। দিকে সামনে রেখে।
২) অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদীরা প্রকাশ্যে এবং জোরেশোরে তালিবানদের বিরুদ্ধে গলা ফাটাতেন। এমন করতেন, যেন ভারতের সমস্ত মুসলমান তালেবান নীতিকে সমর্থন করে এবং এখানে তালিবানীর শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। স্বয়ং আমাদের প্রধানমন্ত্রী এক সময় বলেছিলেন, ব্যাড তালেবান বা গুড তালেবান বলে কিছু হয় না। তালেবান মানেই খারাপ।
এখন সমস্যা হল—এই দুই গোষ্ঠী পড়ে গেছেন ‘সময় সংকট’-এ। আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল চক্রে পড়ে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার এবং ভারতের বিজেপি সরকার এখন যথাক্রমে পরস্পরের ‘দোস্ত’ এবং ‘মিত্র’।
ফলে —
১) হিন্দুত্ববাদীরা লোক লজ্জার ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তালেবানদের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণকে তালেবান এর ভয় দেখিয়ে আর খ্যাপানো যাচ্ছে না।
২) অন্যদিকে ইসলামের নাম করে যারা তালিবানকে সমর্থন করতেন মনে মনে, তারা কেউ কেউ মনে মনে এবং কেউ কেউ প্রকাশ্যে কষ্ট পাচ্ছেন। তাদের এই কষ্ট পাওয়ার কারণ হলো তালিবান সরকার বলেছে, ভারতে মুসলমানদের উপর যে অন্যায় হচ্ছে তা তারা স্বীকার করেন না এবং এই বিষয়টি ভারতের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই সেখানে তাদের অভিযোগ করার বা বলার মত কিছু নেই।
একেই বলা যায় সময়ের মার দুনিয়ার বার। বা বলা যেতে পারে সময় সংকট। দুই গোষ্ঠীর গালে ‘সময়’ সপাটে চড় কষিয়ে দিয়েছে।
রাজনীতিকদের তেমন কোনো ধর্ম নেই, যেটা সাধারণ মানুষ মেনে চলেন। তাদের কাছে আসল ধর্ম হলো রাজনীতি। তাদের এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নেই, যাকে আপনি ধর্মগ্রন্থ বলে মানেন। সাধারণ মানুষের ধর্ম হলো ঈশ্বর ভক্তি। রাজনীতিকদের কাছে ঈশ্বর হল ক্ষমতা আর ধর্মগ্রন্থ হলো পুঁজিবাদী অর্থশাস্ত্র।
এই মানুষগুলো জানেন না, রাজনীতিকদের তেমন কোনো ধর্ম নেই, যেটা সাধারণ মানুষ মেনে চলেন। তাদের কাছে আসল ধর্ম হলো রাজনীতি। তাদের এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নেই, যাকে আপনি ধর্মগ্রন্থ বলে মানেন। সাধারণ মানুষের ধর্ম হলো ঈশ্বর ভক্তি। রাজনীতিকদের কাছে ঈশ্বর হল ক্ষমতা আর ধর্মগ্রন্থ হলো পুঁজিবাদী অর্থশাস্ত্র। এটা সাধারণ মানুষ বোঝেন না, তাই তারা এইসব রাজনৈতিকদের দ্বারা প্ররোচিত এবং প্রভাবিত হন আর ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ও বিভাজন ঘটিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার হাতি আর বাটুলস হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন