সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নীতিহীন রাজনীতি ও নীতি রাজনীতি

 নীতিহীন রাজনীতি ও নীতি রাজনীতি :

Unprincipled politics and ethical politics

বর্তমান ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল নীতিহীন রাজনীতির বাড়ন্ত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতীয় রাজনৈতিক দের মধ্যে কিছুটা হলেও নীতি রাজনীতির চর্চা ছিল। কিন্তু ৯০ এর দশকের পর, এর চূড়ান্ত অবনমন শুরু হয়। আজ তা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশ্বের কাছে সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যে গর্ববোধ আমাদের উষ্ণতা প্রদান করত তা শেষের মুখে। 

এই অবনবনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভারতীয় জনগণের মধ্যে আধুনিক রাজনীতি সম্পর্কে অপ্রতুল উপলব্ধি। তারা বুঝতেই পারেন না, নীতিহীন রাজনীতি শুধুমাত্র কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থ গোষ্ঠীর মঙ্গল সাধন করে। কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নীতি ও আদর্শ যুক্ত নীতি রাজনীতি আপামর জনসাধারণের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে। এই অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে চলেছে আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো।
‘নীতিহীন রাজনীতি’ শুধুমাত্র কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থ-গোষ্ঠীর মঙ্গল করে। কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ও নীতি আদর্শ যুক্ত ‘নীতি রাজনীতি’ আপামর জনসাধারণের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের অধিকাংশ অধিকাংশ জনগণ যেমন এই উপলব্ধির ধারে কাছে নেই। রাজনীতিকদের মধ্যেও এই ভাবনা প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে।

কোন দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য ‘নীতি রাজনীতি’ একমাত্র আদর্শ রাজনৈতিক দর্শন। আর নীতি রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো এমন এক নীতিমালা অনুসরণ করা, যার পরতে পরতে থাকে নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, আইনের অনুশাসন, সহনশীলতা, যুক্তিবাদী চিন্তা চেতনা এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানমনস্কতা।

ইউরোপ আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে যে ভাবনা চিন্তা গুলোকে পরিত্যাগ করেছে, রাষ্ট্রনীতিতে যে দর্শনকে তারা বিসর্জন দিয়েছে ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিকের অতল জলের নিচে, আমরা সেই দর্শনকে নতুন করে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছি। 

পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই, যে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মিশিয়ে পৃথিবীতে নিজেকে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধশালী জাতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর উল্টো উদাহরণ রয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণভূমিতে।

আমরা এসব দেখতে পাই না। কারণ, চোখ থাকলেই সবকিছু দেখা যায় না। এবং মন থাকলেই শুধুমাত্র বোঝা যায় না। চোখ এবং মনকে দেখা এবং বোঝার উপযুক্ত করে তুলতে হয়। আর এর জন্য দরকার শিক্ষা। এ শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা যা জগৎ ও জীবনের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারে। জগৎ ও জীবনের চালিকা শক্তিকে খুঁজে বের করতে পারে। অন্ধকার ও আলোর পার্থক্য খুঁজে বের করতে পারে।

এই ক্ষমতা একজন মানুষ একা একা অর্জন করতে পারে না। এক্ষেত্রে লাগে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা। বর্তমান ভারতের রাষ্ট্র নেতারা এক্ষেত্রে বিপরীত দিকে হাঁটছে। বিশ্বাসের অন্ধকারে চালিত করছে জনসাধারণের চিন্তা চেতনাকে। এক মহাসংকট।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ ...

ইতিহাস কী?

ইতিহাস কী? ইতিহাস হচ্ছে মানুষের তৃতীয় নয়ন। এই তৃতীয় নয়ন মানুষকে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বিষয়ে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। এই পর্যবেক্ষণই জগত এবং জীবনের প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। একজন মানুষ, জগত ও জীবন সম্পর্কে  প্রকৃত সত্য যতটা উপলব্ধি করতে পারেন, তিনি ততটাই শিক্ষিত বলে বিবেচিত হন। তাই ইতিহাস জানা এবং বোঝা ছাড়া একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেন না। ইতিহাস কেন তৃতীয় নয়ন? একটা উদাহরণ নেওয়া যাক। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা ধরুন। আমরা এই ঘটনাকে যখন প্রত্যক্ষ করি, তখন দেখি দুটি ভিন্ন ধর্মের মানুষ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠছে। আমরা খুব সহজেই এই ঘটনাকে ধর্মের সঙ্গে জুড়ে দিই এবং ধর্মকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করি। ধর্মীয় বিদ্বেষের ফল হিসেবে সেগুলোকে ব্যাখ্যা করি। কিন্তু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসকে কার্যকারণ সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এই দাঙ্গাগুলোর পিছনে ধর্মের চেয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য খুবই শক্তিশালী ভূমিকায় রয়েছে। অর্থাৎ মূলত, ...

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে, ...

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা? বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম শিক্ষার প্রভাব দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে