সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সমন্বয়ী সংস্কৃতির ভারসাম্যহীনতার গভীরেই রয়েছে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা

২৫শে মে। কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মদিন। এই উপলক্ষেই ১লা জুন পশ্চিবংগ বাংলা একাদেমির জীবনানন্দ সভাঘরে আয়োজিত হল একটি মনোজ্ঞ ও ভাব-গম্ভীর আলোচনাসভা। আলোচনার বিষয় ছিল, কাজী নজরুল ইসলাম : প্রাসঙ্গিকতা ও বর্তমান সাংস্কৃতিক পরিবেশ। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধু মাননীয়া কল্যাণী কাজী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শাহযাদ ফিরদাউস, ও সৈয়দ হাসমত জালাল। উপস্থিত থাকার কথা ছিল কুমার রাণা’র। অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠকের হল ‘স্বর’।
স্বর শব্দটি প্রধানত তিনটি আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয় -  ১) গলার আওয়াজ, ২) সংগীতের সুর আর ৩) যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হয়। কিন্তু এধরণের আক্ষরিক কোন একটিমাত্র অর্থে আমরা শব্দটি ব্যবহার করছিনা। ব্যবহার করছি ওই তিনটি অর্থের একটি সমন্বিত রূপ নিয়ে তৈরি একটি বিশেষ অর্থে। বলতে পারেন একটি বৃহত্তর অর্থে। জানালেন সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্পাদক মুর্শিদ এ এম।
 কি সেই অর্থ? ব্যাখ্যা মিললো সংগঠনের আর এক সদস্যের কথায়। তিনি বললেন, আমাদের উদ্দেশ্য হল, বাঙালির একটি অভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলা। অর্থাৎ যেখানে ধর্ম নয়, সম্প্রদায় নয়, কেবলমাত্র বাংলা ভাষাই হবে এই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের ভিত্তি। আমরা লক্ষ্য করেছি, বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল নিদারুণ ভারসাম্যহীনতার শিকার হয়ে পড়েছে। এই ভারসাম্যহীনতার দোলায় ভয়ঙ্কর ভাবে দুলছে এপার বাংলা যেমন, তেমনি ওপার বাংলাও। এপার বাংলার সংখ্যাগুরু মানুষ ভাবে, বাঙালি মানে হিন্দু এবং বাংলা সংস্কৃতি মানে হিন্দু সংস্কৃতি। দূর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, ওপার বাংলাও ঠিক এর উল্টোটাই ভাবে। তাই ওপার বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সংখ্যালঘুর অংশগ্রহণ যেমন হয়ে পড়েছে আণুবীক্ষণিক, এপার বাংলার অবস্থাও তথৈবচ।  আসলে বাংলা সংস্কৃতির শিকড় এই ‘হিন্দু’ কিম্বা ‘ইসলাম’ কোন ধর্মীয় দর্শনের গভীরে গ্রথিত নেই। কারণ, দুটো ধর্মই  হল বহিরাগত। তাই বাঙালীর নিজস্ব স্বত্ত্বা এই ধর্মদুটোর কোনটার মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় না। সংগঠকদের কথায়, এর শিকড় রয়েছে বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার গর্ভগৃহে। এই কারণেই বাংলা-সংস্কৃতি অঙ্গনের এই ভারসাম্যহীনতা। এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে পারলেই বাঁচবে বাংলা ভাষা, বাচঁবে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি। আর এর জন্য প্রয়োজন সমন্বয়ী ‘গলার আওয়াজ’, সমন্বয়ী ‘সংগীতের সুর’, আর সেই সমন্বয়ী ‘ধ্বনি’ বা ‘আওয়াজ’ যা অন্যের (কোন বিশেষ ধর্ম বা সম্প্রদায়ের) সাহায্য ছাড়াই একমাত্র বাঙালীকেই করতে হবে জোরের সঙ্গে উচ্চারণ। এটাই ‘স্বর’এর বৃহত্তর অর্থ। অর্থাৎ সমন্বয়ী সংস্কৃতির অঙ্গনে ভারসাম্যহীনতা দূর করাই এই সংগঠনের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য। আমারা উপলব্ধি করেছি এই তিনটি অর্থেই নজরুল আজ খুবই প্রাসঙ্গিক। 
কল্যাণী কাজী, স্মৃতির মণিকোঠায় জমে থাকা টুককো টুকরো মণিকাঞ্চন দিয়ে গাথলেন নজরুলের সমন্বয়ী ভাবনার কথামালা। শাহযাদ ফিরদাউস চিরাচরিত পথে না হেঁটে প্রশ্ন তুললেন, সত্যিই কি নজরুল আজ প্রাসঙ্গিক? ব্যাখ্যা করলেন, কেন নয়। অবাক বিস্ময়ে শ্রোতারা যখন ভাবতে শুরু করেছেন তার এমন প্রশ্ন তোলাটাই প্রাসঙ্গিক কিনা, তখনই ঝুলি থেকে বের করলেন এক টুকরো কষ্ঠিপাথর । বললেন, পাঠক যদি সাহিত্য পাঠের আন্তরিক ও অসাম্প্রদায়িক তাগিদ অনুভব না করেন, তাহলে কোন লেখকেরই আর প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। এই অর্থে শুধু নজরুল নয়, বর্তমান প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথও প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছেন। ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়া বৃহত্তর প্রয়োজনে কেউ আর কোন লেখক-সাহিত্যিককে সেভাবে ব্যবহার করেন না। অভিযোগ শাহযাদ ফিরদাউসের।
তবে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি তুলে সৈয়দ হাসমত জালাল জানালেন শুধু বাঙালী নয়, সমগ্র মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নজরুল আজও কতটা প্রাসঙ্গিক। অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে শান্তনু তালুকদার (ভাষণ পাঠে) ও শ্রীতমা মুখোপাধ্যায় (কবিতায়) সমন্বয়ী ‘গলার আওয়াজ’, এবং দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় (গানে) সমন্বয়ী ‘সংগীতের সুর’ তুলে নজরুল যে কতটা প্রাসঙ্গিক তা দৃপ্ত ও ভরাট গলায় তুলে ধরলেন। তাই জীবনানন্দ সভাঘরে ‘স্বর’এর এই আয়োজন তার নামের ও নজরুলের প্রাসঙ্গিকতাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে – একথা বলতেই হয়।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে