Ranjankanti Bhattacharjee ইতিহাস বলছে সারা পৃথিবীর মানুষই এখন মিশ্র জনগোষ্ঠীর। আর এই মিশ্রণ হঠাৎ নয়, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই ঘটে চলেছে। এবং এখনো তা অব্যাহত।
এই ব্যাখ্যা আসলে নৃতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা। মানব জাতির বিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনায় এই নৃতাত্তিক ব্যাখ্যা প্রযোজ্য।
আমাদের মনে রাখতে হবে, নৃতত্ত্ব আর রাষ্ট্র তত্ত্ব এক জিনিস নয় । রাজনীতিকরা রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য যেমন নৃতত্ত্বকে কখনো কখনো কাজে লাগিয়েছেন, তেমনি একে উপেক্ষা করার নজিরও কম নেই। পৃথিবীজুড়ে রাজনৈতিক স্বার্থে নৃতত্ত্বকে উপেক্ষা করার প্রবণতাই বেশি। তাই বঙ্কিমচন্দ্র যে ব্যাখ্যা করেছেন সেই ব্যাখ্যার মূল ভিত্তি হচ্ছে রাজনৈতিক। তাই রাষ্ট্রতত্ত্বের নিরিখে এর বিচার করতে হবে, নৃতাত্ত্বিক নিরিখে নয়।
আসলে যারা নিজেদের আর্য বলে দাবি করে, তারা নিজেরাও নিখুঁত আর্য নয়। বর্তমান পৃথিবীতে কোথাও নেই। কিন্তু কিছু মানুষ নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিয়ে পৃথিবীর ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। এই চেষ্টা হিটলার যেমন করেছিলেন, ভারতের ক্ষেত্রেও গুপ্ত যুগের পর থেকে তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে তারা সংখ্যায় কম, কিন্তু ক্ষমতায় বেশি।
বস্তুত রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব নিজের করায়ত্ত করার জন্য সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছিল। উচ্চ এবং নিম্ন বর্ণে সমাজকে বিভক্ত করে ফেলেছিলেন ক্ষমতাবান মানুষরাই অর্থাৎ রাজনীতির কারবারিরাই। এখানেই আর্য আর অনার্যের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। ক্ষমতাধারীরা নিজেদেরকে আর্য বলে পরিচয় দিয়েছে এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা মানুষদের তারাই অনার্য নামে চিহ্নিত করেছেন। এই আর্য নামধারীরাই নিজেদের জাতি কৌলিন্য প্রচার করতে গিয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মিশ্র জনগোষ্ঠীকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে অনার্য বানিয়ে দিয়েছে। তাই বাঙালিরা একটি মিশ্র জনগোষ্ঠীর হয়েও তারা উচ্চবর্ণের রাজনীতিকদের কাছে অনার্য জনগোষ্ঠী বলেই চিহ্নিত হয়েছে।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখবেন তথাকথিত এই আর্যরা ভারতীয় সমাজকে আর্য আর অনার্য এই দুই ভাগে বিভক্ত করে অনার্যদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। এ কর্তৃত্ব শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক, ধর্মীয়, আর্থিক --- সমস্ত ক্ষেত্রে কায়েম করে ভারতের আদিম জনগোষ্ঠীকে ক্রীতদাসে পরিণত করার চেষ্টা করেছে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই ভারতীয় জনজাতিকে আর্য ও অনার্যে বিভক্ত করেছেন। এবং এই তথাকথিত আর্যদের জাতিগত ও বর্ণগত বিদ্বেষ কীভাবে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে তা ব্যাখ্যা করেছেন।
–-----------------------////------------------–
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন