Tapas Das আমাদের ইংরেজ প্রভুরা যেখানে যতটা বিকৃত করার প্রয়োজন মনে করেছিলেন ততটাই করেছিলেন। তারা যতটা বিকৃত করেছিলেন ততটাই আমরা বিকৃত বা ভুল জেনেছিলাম। আর বিকৃত টুকু তো অবশ্যই ভুল।
যেমন ধরুন, আপনি জিজিয়া করের কথা বলেছেন। একটু আগে কোন একজনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। সেটাই এবার শুনে নিন। কতটা কিভাবে বিকৃত করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিভাজনের নীতি প্রয়োগ করার জন্য কীভাবে কতটুকু বিকৃত করেছেন।
হিন্দুদের জিজিয়া কর দিতে হয়েছে। ওরঙ্গজেব নতুন করে চালু করেছেন। এ কথা মিথ্যা কেউ কি আপনাকে বলেছে? কেউ বলেননি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে বিকৃতিটা কোথায়? সেটাই আপনাকে কেউ জানায় নি।
১) আপনাকে জানানো হয়নি, হিন্দুদের যেমন জিজিয়া কর দিতে হতো, তেমনি মুসলিমদের যাকাত দিতে হতো। এটা জানালে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিভাজন করা যেত না। অনতিবিলম্বেই আরেকটা সিপাহী বিদ্রোহের সুচনা হত। যেখানে হিন্দু মুসলমানের মিলিত শক্তি ব্রিটিশদের প্রায় পাততাড়ি গুটিয়ে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলো। শিখসহ কয়েকটি রেজিমেন্ট বিদ্রোহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় সাময়িকভাবে তা আটকে গেছিল।
২) আপনি দেশে বাস করবেন। জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেবেন রাষ্ট্রের কাছে। আর আপনি রাষ্ট্রকে ট্যাক্স দেবেন না। হয় কখনও? হ্যাঁ, সেই ট্যাক্সি দিতে হতো। হিন্দুরা যা দিতেন তাকে বলা হতো জিজিয়া। আর মুসলিমরা যেটা দিতেন তাকে বলা হত যাকাত।
৩) আপনাকে এটা জানানো হয়নি যে, ওরঙ্গজেব এই জিজিয়া কর থেকে রেহাই দিয়েছিলেন ব্রাহ্মণদের, শিশুদের, বয়স্কদের, শারীরিকভাবে অক্ষম দের।
৪) আপনাকে কেউ জানানো হয়নি, যে তিনি ব্রাহ্মণদের জিজিয়া কর মুকুব করেছিলেন, তাদের নিষ্কর জমিও প্রদান করেছিলেন। যাকে দেবত্ব সম্পত্তি বলে।
৫) আপনাকে এও জানানো হয়নি যে, যে সকল অমুসলিম যুবকরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতেন তাদেরকে জিজিয়া কর দিতে হতো না।
৬) আপনাকে জানানো হয়নি যে, রাজনৈতিক কারণে যে সমস্ত মন্দিরগুলো তিনি ধ্বংস করতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেগুলো নিজ অর্থে পুনরায় নির্মাণ করেও দিয়েছিলেন। এবং সেই মন্দিরের প্রশাসক পরিবর্তন করেছিলেন। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে। প্রাচীন এবং মধ্যযুগের মানদন্ডে, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে, সমস্ত শক্তিকেই এই ধরণের কাজ করতে হয়েছে। এটা দিয়ে শাসকের নিষ্ঠুরতা বিচার হয় না। এটা যদি আধুনিক যুগে হত, তবে নিশ্চয়ই তা নিষ্ঠুরতা বলে বিবেচিত হতো। এটাও আপনাকে জানানো হয়নি।
৭) ওরঙ্গজেব সম্পর্কে আরও তথ্য আছে বিস্তারিত বলার সময় তো এখানে নেই। জানতে পারবেন যে বই দুটো কথা বললাম তা পড়লে।
আসলে এভাবে ইতিহাসের ব্যাখ্যা করলে যেভাবে ইতিহাস উঠে আসতো তাতে হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনকে কার্যকর করতে অসুবিধা হতো। তাই এগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
জানিনা এরপর আবার আপনার মাথায় কোন প্রশ্ন আসবে। যাই আসুক জানাবেন। অবশ্যই আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
উৎস জানতে এখানে ক্লিক করুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন