সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বঙ্কিমচন্দ্র ও বাংলার ইতিহাস

Goutam Ray আপনি আরএসএসের ইতিহাস বিবেচ্য নয় বলছেন। অথচ আর এস এস সি হিন্দু মুসলমানের বিভেদ বিভাজন চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ভারতীয় নিম্ন শ্রেণীর মানুষ হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করার কারণ হিসেবে তারা মুসলিম শাসকদের দায়ী করে থাকে। সেটা যে সম্পূর্ণ ভুল তা বোঝানোর জন্য বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্ধৃতি পোস্ট আকারে দিয়েছি। সুতরাং তাদেরকে বাদ দিয়ে আলোচনার কোন মূল্য হয় না।

যাই হোক, বঙ্কিমচন্দ্র যে তার উপরের মত থেকে সরে এসেছেন এর স্বপক্ষে আপনাকে বঙ্কিমচন্দ্র থেকে তথ্য দিতে বলেছিলাম। আপনি তার পরিবর্তে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়তে বললেন। বাংলা সাহিত্য বুঝতে গেলে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়া নিশ্চয়ই দরকার। সেখান থেকে ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি সংক্রান্ত কিছু ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করা যায় বটে কিন্তু তা মোটেই ইতিহাস নয়। এটা আগে বুঝতে হবে। 


তাই এ সম্পর্কে তথ্য দিতে গেলে আপনাকে বঙ্কিমচন্দ্রের রচনাবলী উপরই নির্ভর করতে হবে। বিশেষ করে তার ইতিহাস সংক্রান্ত যে প্রবন্ধ আছে তার সাহায্য নিতে হবে। আপনি সেদিকে গেলেন না।

আমি আপনাকে কিছু তথ্য দিচ্ছি যা দিয়ে প্রমাণ হবে যে বঙ্কিমচন্দ্র নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার যে কারণ দেখিয়েছেন সেখান থেকে তিনি সরে আসেন নি। আমি অন্তত এখনও তা তাঁর লেখার মধ্যে পায়নি।

কারণ, বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যে স্বদেশ অভিমান গড়ে ওঠার পরই তিনি বাংলার ইতিহাস লিখেছেন। "ইংরেজ পাখি মারিয়াছে ......" বলে  যে উদ্ধৃতিটি দিয়েছেন, সেটা দিয়েই তিনি এই ' বাংলার ইতিহাস'  শুরু করেছেন। যার কথা জানা যাচ্ছে, শ্রী রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, এম এ, বি এল, এর লেখা ' প্রথম শিক্ষা বাংলার ইতিহাস' গ্রন্থের আলোচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে। আর 'বাংলার ইতিহাস' বঙ্গদর্শনে প্রকাশ পাচ্ছে ১২৮১ বঙ্গাব্দে রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় এর বইটির সমালোচনা হিসেবে। এই সমালোচনার তৃতীয় নম্বর পয়েন্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, ' সপ্তদশ পাঠান কর্তৃক বঙ্গ জয় হইয়াছিল, এ কলঙ্ক মিথ্যা'।

এরপর ১২৮৯ সালের বঙ্গদর্শনের আশ্বিন সংখ্যায় তিনি লিখেছিলেন মুসলমান কর্তৃক বাংলা জয়/১' । আর এখানেই তিনি অনার্য হিন্দুর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন যা আমি আমার পোস্টে উল্লেখ করেছি।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, বঙ্কিমচন্দ্র বাঙালির ইতিহাস নেই এই আক্ষেপ থেকেই( যেগুলো আপনার লেখায় উদ্ধৃত রয়েছে) বাংলার ইতিহাস লেখা শুরু করেছেন। এবং তারই একটা পর্বে অনার্য হিন্দুদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি তুলে এনেছেন। এই গ্রন্থে তিনি বলেছেন, 'পাঠানেরা 372 বৎসর রাজত্ব করিয়াছিলেন, তথাপি কোন কালে সমুদয় বাংলার অধিপতি হন নাই।'  তিনি আরো বলেছেন, 'পরাধীন রাজ্যের যে দুর্দশা ঘটে স্বাধীন পাঠানদের রাজ্যে বাংলার সে দুর্দশা ঘটে নাই।' এই বক্তব্যের যুক্তি হিসাবে তিনি উপস্থিত করেছেন 'পাঠান শাসনকালে বাঙালির মানসিক দীপ্তি অধিকতর উজ্জ্বল হওয়া'র দৃষ্টান্ত। তিনি লিখেছেন, ' বিদ্যাপতি চন্ডীদাস বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিদ্বয় এই সময়েই সময়েই আবির্ভুত; এই সময়ে অদ্বিতীয় নৈয়ায়িক, ন্যায় শাস্ত্রের নতুন সৃষ্টিকর্তা রঘুনাথ শিরোমণি; এই সময়েই চৈতন্যদেব; এই সময়েই বৈষ্ণব গোস্বামীদিকের অপূর্ব গ্রন্থাবলী, চৈতন্যদেবের পরগামী অপূর্ব বৈষ্ণব সাহিত্য' আবির্ভূত হয়েছিল। তাঁর মতে, 'এই সময় বাঙালির মানসিক জ্যোতিতে বাংলার যেরূপ মুখ উজ্জ্বল হইয়া ছিল সেরূপ তৎপূর্বে বা পরে আর কখনো হয় নাই।'

তবে বিভিন্ন উপন্যাসে তিনি বিভিন্ন চরিত্রের মুখ দিয়ে এমনকি বাংলার ইতিহাস গ্রন্থেও এমন কিছু কিছু শব্দের প্রয়োগ করেছেন বাঙালি জাতির গৌরব গাঁথা প্রকাশ করার জন্য, তাতে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিশেষ করে আনন্দমঠ উপন্যাসে

তবে, আমার মতে, উপন্যাস গল্প বা কবিতা আসলে সাহিত্য। ইতিহাস নয়। তাই সেখানকার কোন বিশেষ চরিত্রের মুখ দিয়ে বের হওয়া কথাকে লেখক-এর কথা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। আর যেহেতু বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই বলে গেছেন, তার একমাত্র ঐতিহাসিক উপন্যাস রাজসিংহ, তাই আনন্দমঠকে ঐতিহাসিক উপন্যাসও বলা যাবেনা। একজন লেখক ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার সময় ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে উপন্যাসের প্লট সাজান। তাই সেখানে কাল্পনিক চিত্রকল্পের সঙ্গে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য থাকে।

তাই একমাত্র রাজসিংহ ছাড়া অন্য কোন উপন্যাসের তথ্যকে ইতিহাসের মর্যাদা দেয়া যাবেনা। এই কারণে তার সাম্প্রদায়িক মনোভাবের অভিযোগ স্বীকার করা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়।

তবে একথা ঠিক যে, তার লেখার উপর ভিত্তি করে যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়েছিল, তা ছিল খানিকটা খন্ডিত। খন্ডিত বলছি এই কারণে, বঙ্কিমচন্দ্রের ভাবনাকে জাতীয় আন্দোলনে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্রের মতামত সম্পর্কে একটা অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। যে জাতীয় আন্দোলনটি হওয়ার কথা ছিল হিন্দু-মুসলমানের যৌথ আন্দোলন, সিপাহী বিদ্রোহের সময় আমরা যা লক্ষ করেছি, তা হিন্দু জাতীয়তাবাদে পরিবর্তিত হয়ে গেল। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে ভারতীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার-আচরণ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণেই এই অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে। যার পরিণতিতে ভারতবর্ষ বিভক্ত হতে বাধ্য হয়েছে। তবে ভারত ভাগের এটা একমাত্র কারণ নয় একথাও ভুললে চলবে না।

উৎস জানতে এখানে ক্লিক করুন

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন