সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আলো-আঁধারের খিচুড়ি

Shilpi Dutta Paul আপনার মতামত খুবই ন্যায্য এবং প্রাসঙ্গিক।

শিক্ষাকে যদি ধর্মীয় মোড়ক-মুক্ত না করা যায়, এ রোগ থেকে আমরা মুক্তি পাবো না। আধুনিক শিক্ষার একমাত্র অর্জন হওয়ার কথা হল যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা ও মানবতাবাদ।

কিন্তু দুঃখের হলেও সত্যি, এবং আমাদের দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীন ভারতের শিক্ষাঙ্গন এখনো ধর্মীয় সংস্কার ও কুসংস্কারে আবহে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সাধারণ স্কুল বলুন কিংবা মাদ্রাসা - সবক্ষেত্রেই একই ছবি। সব জায়গায় বিজ্ঞান পড়ানোর সাথে সাথে সাড়ম্বরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে।

পড়াশোনা শিখতে গিয়ে একজন ছাত্র বা ছাত্রী যদি শিক্ষকদের কাছ থেকেই ভাগ্য আর ভগবান বা আল্লার ওপর নির্ভরতাকে একান্ত ও অপরিহার্য বলে ভাবতে শেখে, তবে সে কীভাবে ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে একজন আধুনিক ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হবার সাহস অর্জন করবে? নিজের ভাগ্যকে নিজে জয় করার মানসিক শক্তি কীভাবে অর্জন করবে?

মনে রাখতে হবে, এই মানসিক শক্তিই তো আজ পৃথিবীতে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীকে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করেছে। চীন যে আজ পৃথিবীর দ্বিতীয় মহাশক্তিধর জাতিতে পরিণত হয়েছে তার পিছনেও রয়েছে এই আধুনিক যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা চিন্তার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আমাদের স্কুল কলেজগুলিতে 'ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠান' বা, উৎসবের নামে সুকৌশলে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ধর্ম বিশ্বাসকে (বিদ্যাদেবীর আরাধনাকে) শিক্ষা জীবনে অবশ্য পালনীয় কর্তব্যে পরিণত করা হয়েছে। ইদানিং  চেয়ে দেখছি শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই এ বিষয়ে আগ্রহ বেশি। ছেলেমেয়েদের সামনে রেখে তারাই সাড়ম্বরে এই উৎসব উদযাপন করছেন, যা আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে খুবই বেমানান।

একই অবস্থা মাদ্রাসাগুলোতেও। যে ধর্মীয় বিশ্বাস একান্তই ভারতীয় নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবন চর্চার বিষয়, সেটাই এখানে চলছে বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি খুবই গুরুত্ব সহকারে। চলছে অবৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনার প্রচার ও প্রসার যজ্ঞের অবাধ অনুশীলন।

চন্দ্রযান পাঠানো একজন বিজ্ঞানীকে যদি রকেট উৎক্ষেপণের পরপরই মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনায় বসতে হয়, তার সাফল্য কামনায়, তাহলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে কোন শিক্ষা বা বার্তা পৌঁছায়? বিশ্বাসে ভর করে যে নিজের ঘরের পাখাটি পর্যন্ত ঘোরানো যায় না তা কি আমরা জানি না? জানি। কিন্তু তবুও আমরা শিক্ষক হযে ছাত্রছাত্রীদের কাছে এ বার্তাই পৌঁছে দিই যে, সরস্বতী ঠাকুরকে পূজা করাটা খুবই জরুরী এবং পরীক্ষা শুরু করার আগে একবার আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া অত্যন্ত জরুরী।

অথচ যুক্তিবাদ এবং বিশ্বাস দুটো সম্পূর্ণ দুই মেরুর বিষয়। তা সত্ত্বেও আমরা এই দুটোকে এক জায়গায় এবং এক মোড়কের মধ্যে রেখে আধুনিক শিক্ষা চর্চার নামে এক অস্বাস্থ্যকর খিচুড়ি বানানোর গবেষণায়( খেলায় ) মেতে উঠেছি। এরই অনিবার্য পরিণতি হিসেবে আমাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে 'শরীরে রক্তাল্পতার' মত, চিন্তা ও চেতনায় শিক্ষাল্পতা নামক  মারাত্মক এক ব্যাধি, যা একটা জাতিকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে