সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মসজিদ হলেও কি এমন প্রশ্ন করা যেত?

Santanu Ray আমি খুবই স্পষ্ট বাদী। মুখ আর মুখোশের চারপাশে যে ছড়াছড়ি তার অভিজ্ঞতা আপনার মত আমারও আছে। আমি কাছ থেকেই দেখেছি সেই মুখ আর মুখোশের আড়ালে সাম্প্রদায়িকতার চোরাস্রোত।

এবার আপনার আসল প্রশ্নে আসি। মুখোশ নেই তাই মুখোশ খোলার প্রশ্নই নেই।

ওখানে মসজিদ ছিল। সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিয়েছে মসজিদ ভাঙা অন্যায় হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আদালতে মসজিদ পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সুতরাং মসজিদের জায়গায় মসজিদ হলে আইনগত দিক থেকে কোন অনৈতিক কাজ হতো না।

কিন্তু যে কারণেই হোক, যেহেতু সেখানে বিতর্ক রয়েছে। এবং সেই বিতর্ক জাতীয় সংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে গেছে। তাই প্রত্যেকটি শিক্ষিত সচেতন এবং ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ এ কথাই বলেছেন যে, ওখানে মন্দির-মসজিদ কোনটাই না করে হসপিটাল, মিউজিয়াম বা ওই ধরনের কোন পাবলিক প্রপার্টি তৈরি করা হোক যা জনগণের সেবায় কাজে লাগবে।

আপনি জানেন কিনা জানিনা, মানেন কিনা তাও জানিনা, এটাই বামপন্থার স্ট্যান্ড। যারা বামপন্থাকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে, তারা এর বাইরে কথা বলতে পারেন না। তাই আমার মুখ থেকে, মুখোশ পরা প্রশ্নের মুখোশ পরা উত্তর পাবেন একথা আশা করাটা আপনার অদূরদর্শিতা।

আমি অবাক হয়ে উত্তরটা লিখছি এই ভেবে যে, আপনার মত একজন বামপন্থী মানুষ কীভাবে এধরণের প্রশ্ন করতে পারেন, যে মসজিদ হলে কি এমন পোস্ট করা যেত!!!!! এই প্রশ্ন একজন বামপন্থী হয়ে আরেকজন বামপন্থী মানুষের কাছে করা যায়? সত্তিকারের কোন বামপন্থী এ প্রশ্ন করতে পারেন? যিনি আমাকে চেনেন না, কাছ থেকে দেখেননি, আমার লেখার সঙ্গে তার পরিচয় নেই, তেমন মানুষেরা এমন প্রশ্ন করতেই পারেন। কিন্তু আপনি.....?

যে পোস্টটা করেছি সেই পোস্টার মধ্যে আপনি কি এমন কোনো ইঙ্গিত পেয়েছেন, এমন কোন শব্দ ও শব্দগুচ্ছ আপনার নজরে এসেছে, যেখানে মসজিদ হওয়ার সুপ্ত বাসনা লুকিয়ে আছে?

আপনি কি আমার ওয়ালে নিয়মিত আসেন? যদি এসে থাকেন, তাহলে আপনার নজরে আসার কথা যে তথাকথিত ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট আমাকে প্রভাবিত করে না। দুই বাংলার অতি জনপ্রিয় ধর্মগুরুকে চ্যালেঞ্জ করতে ও আমার বুক কাঁপেনি। আপনার প্রশ্ন শুনে বিজেপির মানুষজন খুব খুশি হবেন। কারণ তাদের কাছ থেকেই শুধুমাত্র এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। একাধিকবার। তারা আমাকে অশালীন কথা বলেছেন,  দেশদ্রোহীও বলেছেন, সাম্প্রদায়িকও বলেছেন। আজও একজন বলেছেন। কিন্তু তাতে আমার যায় আসে না কিছু। কারণ, তারা আমার সাথে সবে পরিচিত হচ্ছেন। আমাকে জানতে বা বুঝতে গেলে একটু সময় লাগবে তাদের। কিন্তু আপনি কিভাবে করলেন এই প্রশ্ন? সত্যিই আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছিনা।

যদি বলেন হ্যাঁ 'আমি নিয়মিত তোমাকে ফলো করি', (যদিও  একসময় আপনি বলেছিলেন আমার সব পোস্ট আপনি দেখেন  এবং খুব ভালো লাগে আপনার) তাহলে বুকের কোন কষ্ট থেকে আপনি এমন প্রশ্ন আমাকে করলেন? এমন তো নয় যে, আপনি আমাকে চেনেন না। নয় নয় করে ১৮/২০ বছর পাশাপাশি পথ চলছি।

বহুল প্রচলিত একটা কথা আমার মনে পড়ে গেল। কথাটা হল, ঠাকুর ঘরে কে রে - এই প্রশ্নের উত্তরে - আমি তো কলা খাইনি' এই রকম উত্তর দেয়াটা কিসের ইঙ্গিত দেয়, আপনি নিশ্চয়ই তার অর্থ বোঝেন? নিজের ভেতরে থাকা অবচেতন মনের ফসল কি তেমন ভাবেই মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো? জানিনা আপনার এধরনের কোনো ক্রাইসিস আছে কিনা!

পোস্টটা রয়েছে অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মব্যবসায়ীদের ভন্ডামীর কথা। আর আপনি সেখানে খুঁজে পেলেন 'মসজিদ হলেই এমন প্রশ্ন করা যেত কিনা'? আসলে বামপন্থী হলেও আপনার মন থেকে আমার ধর্মীয় পরিচয়টা মুছে ফেলতে পারেননি। মানুষ আলীর চেয়ে মুসলিম আলী আপনার চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে বেশি। আমার সঙ্গে আপনার যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্কের মধ্যে সুপ্ত থেকে গেছে আমার ধর্মীয় পরিচয় এবং মুসলিমদের সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক বিশ্বাস।

শুধু আপনি না, এমন প্রচুর মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে, ছোট্ট কাল থেকে আজ পর্যন্ত।

তাহলে মুখোশটা কোথায়? চোরাস্রোতটাই বা কোথায় রয়েছে আর একবার ভাবতে অনুরোধ করবো। এক্ষেত্রে  আপনাকে আমার পোস্টটা আরও একবার পড়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

আর হ্যা, বাবরি মসজিদ গড়ার জন্য যে পাঁচ একর জমি সরকারে দেওয়ার কথা, প্রসঙ্গত বলে রাখি, সেই জমিতে মুসলিমরা হাসপাতাল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জোরালো দাবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আপনি বা আপনারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন?

আশা করি আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, মসজিদ হওয়াটাও ওখানে ভারতীয় জাতিসত্ত্বার পক্ষে মঙ্গলজনক হতো না। যদিও সেটা না হওয়াটা ঐতিহাসিক বিচারে ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতির খাতিরে মসজিদ না হওয়াটাও খুব দরকারি ছিল। এ বিষয়ে আমি আমার মত ফেসবুকে এবং বিভিন্ন লেখালেখির মধ্যেও প্রকাশ করেছি। এ বিষয়ে কয়েকদিন আগেই, সম্ভবত রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম একটা কবিতা। পারলে সেই লেখাটা একটু দেখে নেবেন। সেখানে আমার অবস্থান স্পষ্ট করা আছে। চাইলে সেটাও একবার পড়ে নিতে পারেন। যদি ওই লেখাটির পুরনো এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার আগেই লেখা।

আপনার মন্তব্য সম্পর্কে যে কথাগুলো বললাম, সেই কথাগুলো যদি এমন হয় যে, আপনার মন্তব্য আমি বুঝতে পারিনি, বা ভুল বুঝেছি, বলে আপনার মনে হয, তাহলে অনুগ্রহ করে জানাবেন, যাতে আমার মতামত আমি ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাই। কারণ, কখনো কখনো লেখা মতামত ঠিকঠাক অনুধাবন করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়।

যাই হোক, ভালো থাকুন। আর আমার উত্তর শুনে আপনার কেমন লাগলো নিশ্চয়ই জানাবেন। ভুল যদি বুঝে থাকি আপনাকে, সেটাও ধরিয়ে দেবেন। ভুল শুধরে নেওয়ার ক্ষমতা এবং ইচ্ছা দুটোই আমার অত্যন্ত সক্রিয়। শুভরাত্রি।

মন্তব্যসমূহ

আলী হোসেনের বহুল-পঠিত উক্তিগুলো পড়ুন

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয়

ধর্মের নামে রাজনীতিই প্রমাণ করে আমরা মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে এখনও যে ধর্মের নামে রাজনীতি হয় বা হচ্ছে, তাতেই প্রমাণ হয় আমরা আধুনিক নয়, চিন্তায়-চেতনায় এখনো মধ্যযুগে বাস করি। কারণ, আধুনিক যুগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন জাতি, নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করতে চাইলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো হল ধর্ম-মুক্ত রাজনীতি। পৃথিবীর যেখানে যেখানে রাজনীতি ধর্মমুক্ত হয়েছে, সেখানে সেখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি অনেক কমে গেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা আধুনিকতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কিত থাকলে কি ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। বোঝা যায়, কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক হিংসা এবং প্রতিহিংসার দাপটে একটা জাতি শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই, অসংখ্য ছোট ছোট, বলা ভালো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর নয়া সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না।

ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা যায় না। কারণ দুটোরই ভিত্তি হচ্ছে যুক্তিবিমুখ বিশ্বাস। তাই, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়তো যায়। কিন্তু ধর্ম দিয়ে ধর্মান্ধতা দূর করা কখনই যায় না। একথা ভুলতে বসেছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে প্রগতিশীলতা গতিলাভ করে না বরং গতি হারায়। --------x------- Di Ansar Ali হ্যা, পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হয়, তাতে আমার সত্যিই কোনো লাভ হচ্ছে কিনা। এবং তার অদূর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে হয়। কারণ, তাতে পরের যাত্রা হয়তো ভঙ্গ হয়, কিন্তু নিজের শরীরে ভয়ঙ্কর ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দখলদারি বেড়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা ঠিকঠাক না করতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিবর্তে প্রতিকূলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে 'দশচক্রে ভগবান ভুত হওয়ার' বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রয়োজন খুব বেশি বলেই আমি মনে করি। যারা প্রগতিশীল নয়, বলে এতদিন বলে আসছি তারা যদি হঠাৎ করে প্রগতিশীল হয়ে ওঠে তবে,

বিজেপি ও আরএসএস কি আলাদা?

বিজেপি ও আরএসএস-এর রসায়ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন, এমন মানুষদের সবাই জানেন বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-এর গভীর সম্পর্কের কথা। এবং তাঁরা এটাও জানেন যে, আরএসএস দ্বারা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। তাই এই দুই সংগঠনকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা আলাদা নয়। বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। বিস্তারিত দেখুন এখানে ক্লিক করে

সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল

মানুষ আসলে কী? সব মানুষই আসলে এক-একজন পাগল। কেউ কাজ পাগল, কেউ ফাঁকিবাজিতে পাগল। কেউ গান পাগল, তো কেউ জ্ঞান পাগল। কেউ বা আবার পান পাগল। কিছু না কিছু নিয়ে আমরা প্রত্যেকে পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছি। থামবো কবে? প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মশিক্ষার প্রচলন ও তার পরিণতি

দেশের বড় বড় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে বেদ ও পুরাণসহ ধর্মশাস্ত্র পড়ানোর ধুম লেগেছে তাতে ভারতবর্ষ খুব তাড়াতাড়ি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মত অশিক্ষার কানাগলিতে ঢুকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে,বলা ভালো যেতে বাধ্য হবে। শিবপুর আই আই ই এস টি তে যেভাবে বেদ ও পুরাণ ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে গোলওয়ালকরের ছবি ও বই রেখে যেভাবে বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মতাদর্শকে হাইলাইট করা হচ্ছে তাতে ভারতের ভবিষ্যত দুর্দশার রূপটি স্পস্ট হয়ে উঠছে। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন ফেসবুকে দেখুন এখানে ক্লিক করে